জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল’ই যখন পৌঁছে দিচ্ছে আত্মহত্যা দোরগোড়ায়
কলকাতা টাইমস :
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির কারণে মানসিক নানা সমস্যা হয় নারীদের। আর এসব সমস্যা বাড়তে থাকলে তা এক পর্যায়ে আত্মহত্যা প্রবণতাও আনতে পারে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এ বিষয় উঠে এসেছে।
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ রোধ করতে অনেক মহিলারই একমাত্র অবলম্বন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি। তবে এখন মনে হয় এ বড়ির বিকল্প পদ্ধতিগুলো নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। কারণ বহু মহিলাই জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির পাশ্ব প্রতিক্রিয়া প্রত্যক্ষ করছেন। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িতে নারীদের বিষণ্ণতার আশঙ্কা তৈরি হয় বলে মনে করছেন গবেষকরা। সর্বশেষ এ গবেষণাটি করেছেন ডেনমার্কের গবেষকরা।
বিষণ্ণতা মূলত একধরনের মানসিক সমস্যা। এ সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পেছনে বহু কারণ রয়েছে। আর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভনিরোধক ওষুধও বিষণ্ণতার কারণ।
গর্ভনিরোধের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি মূলত হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলে। আর এ হরমোরনের তারতম্যের কারণেই বিষণ্ণতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
সম্প্রতি এক গবেষণায় বিষণ্ণতার সঙ্গে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির এ সম্পর্কের বিষয়টি জানা যায়। গবেষকরা জানান, প্রায় এক মিলিয়ন মহিলার ওপর গবেষণায় এ বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতে এ গবেষণাটি করা হয়েছে। এতে অল্পবয়সী থেকে শুরু করে বয়স্ক মহিলা পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গবেষকরা জানান, যে মহিলারা গর্ভধারণ রোধ করতে পিল সেবন করেন তাদের ২৩ শতাংশ ক্ষেত্রে বিষণ্ণতার জন্য ওষুধ দিতে হয় বলে দেখা গেছে মেডিক্যাল রিপোর্টে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন শুরুর প্রথম ছয় মাসে এ বিষণ্ণতার প্রভাব দেখা যায়।
তবে শুধুমাত্র যে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি যারা সেবন করেন শুধু তাদেরই বিষণ্ণতার প্রবণতা দেখা যায়, তাই নয়। গর্ভধারণরোধে ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদানেও এ বিষণ্ণতা হতে পারে। গবেষকরা আরও দেখেছেন যে ইমপ্ল্যান্টস, প্যাচেস ও জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা বিভিন্ন পদ্ধতি যারা ব্যবহার করেন তাদের মাঝেও সীমিত পর্যায়ে বিষণ্ণতা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যে মহিলাদের বয়স কম, তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
এ গবেষণার জন্য ডেনমার্কের ১৫ তেকে ৩৪ বছর বয়সী প্রায় এক মিলিয়ন মহিলার চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। তাদের ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এ বিষয়ে গবেষণাটির প্রধান গবেষক ছিলেন অজভিন্ড লিডেগার্ড। তিনি জানান, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করা মহিলাদের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একই বয়সের পুরুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তবে বয়ঃসন্ধিতে আসার আগ পর্যন্ত এ হার একই থাকে। গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে।
আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ে কি?
অনেক নারীই জানাচ্ছেন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনের সময় তাদের বিষণ্ণতাজনিত মানসিক অবস্থা এতই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, তা আত্মহত্যা প্রবণতাও তৈরি করেছিল।
অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের একটি আর্টিকেলে এক মহিলা জানিয়েছেন তিনি দীর্ঘ ১০ বছর জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করেন। আর সে সময় তার আত্মহত্যা প্রবণতা দেখা দেয়। তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবনের দীর্ঘ ১০ বছর হারিয়েছি আত্মহত্যা প্রবণতাযুক্ত বিষণ্ণতায়। আর এ সময় আমি হরমোন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করতাম…. আমার দেহ এ উভয় বিষয়ের মাঝে পরিষ্কার সম্পর্ক দেখতে পেয়েছে।’
আরও নারীদের একই অভিযোগের পর বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন গবেষকরা। এ বিষয়ে প্রফেসর অজভিন্ড লিডগার্ড বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি মুডের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিষণ্ণতা প্রধানত তরুণীদের মাঝে প্রভাব বিস্তার করে। যাদের আগে থেকেই মানসিক সমস্যা রয়েছে তারা এ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তবে যাদের মাঝে আগের মানসিক কোনো সমস্যা দেখা যায়নি তাদের ক্ষেত্রে এতে আক্রান্ত হওয়ার হার ১% থেকে ১.৮%।
তবে এ বিষয়ে ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন-এর গবেষক ড. চ্যানা জয়সেনা বলেন, ‘গবেষণায় এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি কিংবা গবেষকরা দাবি করেননি যে, পিল বিষণ্ণতা বৃদ্ধি করে।’
গবেষকরা বলছেন, যাদের আগে থেকেই বিষণ্ণতা বা মানসিক সমস্যা রয়েছে তাদের এ সমস্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি।