তাদের মধ্যে অনেকেই বেঁচে গেছেন, কুড়িয়েছেন খ্যাতি এবং যশ। কোনো সিনেমায় ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য যত বেশি, তত বেশি বিনোদন। দুঃসাহসিক অভিনেতারা নিজেই সেসব দৃশ্যে অভিনয় করেন। কেউ কেউ অভিনয় করতে এতটাই ঝুঁকি নিয়েছিলেন যে, তাদের মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছিল। বিস্তারিত লিখেছেন হাসান সাইদুল
জেসন স্ট্যাথাম : ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এ অভিনেতা। অ্যাকশনধর্মী ছবিতে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি রয়েছে তার। অসংখ্য দুঃসাহসিক চরিত্রে কাজ করেছেন এ ইংরেজ অভিনেতা। ‘দ্য এক্সপেন্ডেবল’ ছবিতে অভিনয় করার সময় কৃষ্ণ সাগরে প্রায় ডুবে গিয়েছিলেন জেসন। একটি জাহাজঘাটের ওপর ট্রাক চালাচ্ছিলেন তিনি। এমন সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সমুদ্রে পড়ে যায় ট্রাক। সেবার ভাগক্রমে বেঁচে যান জেসন।
জ্যাকি চ্যান : বহুগুণের অধিকারী এ অভিনেতা ১৯৬১ সালে হংকংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। একসঙ্গে তিনি অভিনেতা, অ্যাকশন কোরিওগ্রাফার, মার্শাল আর্টিস্ট, চলচ্চিত্র প্রণেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্য লেখক। বেশিরভাগ দুঃসাহসিক দৃশ্যে নিজেই অভিনয় করেন জ্যাকি। সেসব দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে এত বেশি আঘাত পেয়েছেন যে, তার শরীরের প্রায় সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেঙেছে। ‘আরমর অফ গড-২’ ছবিতে প্রায় ৬০ ফুট উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়ার সময় উড়ন্ত হেলিকপ্টারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়ে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল তাকে। এ ছাড়া মাথায় অস্ত্রোপচারও করতে হয়েছিল। বেঁচে গিয়ে আবারও ফিরেছেন অভিনয়ে।
সিলভেস্টার স্ট্যালোন : একজন মার্কিন অভিনেতা। ‘দ্য এক্সপেন্ডেবল’ ও ‘ফার্স্ট ব্লাড’ ছবিতে লাফিয়ে পড়ার দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে পাঁজর ভেঙে ফেলেছিলেন তিনি। এ ছাড়া ‘রকি-৪’ ছবিতে কুস্তিগিরের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে বুকে বড় ধরনের আঘাত পান স্ট্যালোন।ওই ঘটনায় তার ফুসফুস ফুলে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন তিনি।
টম হ্যাঙ্কস : মার্কিন অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি ১৯৫৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ‘কাস্ট অ্যাওয়ে’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন এ চৌকস অভিনেতা। ওই ছবিতে তিনি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ‘ফেডএক্স’র একজন কর্মীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। যেখানে সমুদ্রের একটি নির্জন দ্বীপে থাকতে হয়েছিল টমকে। ওই চরিত্রের জন্য প্রায় ২৩ কেজি ওজন কমাতে হয়েছিল তাকে। দ্বীপের বৈরী পরিবেশে তার পা ফুলে গিয়েছিল। এ জন্য পায়ে কয়েকবার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল এবং হঠাৎ ওজন কমানোর ফলে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
জেনিফার লরেন্স : ২৭ বছর বয়সী মার্কিন অভিনেত্রী। ‘হাঙ্গার গেমস’ ছবির শুটিংয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে প্রায় মরে যাচ্ছিলেন জেনিফার লরেন্স।একটি সুড়ঙ্গের ভেতর ধোঁয়া তৈরির যন্ত্র দিয়ে শুটিং হচ্ছিল। যান্ত্রিক ত্র“টির কারণে সুড়ঙ্গ ধোঁয়ায় ভরে যায়। শ্বাস বন্ধ হয়ে ভেতরে জেনিফার অচেতন হয়ে পড়েন। উদ্ধারকর্মীরা লরেন্সকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাণে বেঁচে যান এ অভিনেত্রী।
ড্যানিয়েল ক্রেগ : ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের ছবিতে অনেক দুঃসাহসিক দৃশ্যে অভিনয় করতে হয়। ড্যানিয়েল ক্রেগও এমন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। ‘ক্যাসিনো রয়েল’ ছবিতে স্টান্ট নিতে গিয়ে দুটি দাঁত পড়ে গিয়েছিল ক্রেগের। এ ছাড়া ‘কোয়ান্টাম অব সলেস’ ছবিতে একটি মারধরের দৃশ্যে খুব জোরে ঘুষি লাগে মুখে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিলে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। পরে মুখে প্লাস্টিক সার্জারি করতে হয়েছিল ক্রেগকে।
জর্জ ক্লুনি : মার্কিন এ অভিনেতার জন্ম ১৯৬১ সালে। ২০০৫ সালে ‘সিরিয়ানা’ ছবিতে একটি অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলেন ক্লুনি। সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছিলেন মাথায়। চিকিৎসা নিলেও দীর্ঘদিন তীব্র মাথাব্যথায় ভোগেন। ব্যথা এতটাই তীব্র ছিল যে, আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্লুনি।
ব্র্যাড পিট : মার্কিন এ অভিনেতা ডিটেক্টিভ থ্রিলার ছবি ‘সেভেন’-এ একটি মারধরের দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন। ছবিতে কেভিন স্পেসিকে বৃষ্টির মধ্যে তাড়া করছিলেন ব্র্যাড। ওই সময় পা পিছলে গাড়ির জানালার কাঁচের ভেতর হাত ঢুকে যায়। প্রচুর রক্তক্ষরণে অচেতন হয়ে পড়েন পিট। দ্রুত হাসপাতালে নিলে সে ময় প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
কেট উইন্সলেট : ইংরেজ এ অভিনেত্রী একজন অনিয়মিত গায়িকা।‘টাইটানিক’ ছবিতে জাহাজ ডুবে যাওয়ার দৃশ্যে অভিনয়ের সময় মারাত্মক আহত হয়েছিলেন কেট।ডুবে যাওয়ার সময় কেট এবং লিওনার্দো যখন ডেকের নিচে সরু জায়গা দিয়ে দৌড়াচ্ছিলেন সে সময় পানির তীব্র প্রবাহ তাদের বন্ধ গেটের দিকে আচড়ে ফেলে। সে সময় ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন কেট।