জন্মগত চোখের ত্রুটিকেই রূপের তুরূপের তাস করেন এই নায়িকা
কলকাতা টাইমস :
ডিস্টিকিয়া’ এক রকমের জিনগত সমস্যা। এর ফলে আঁখিপল্লব ত্রুটিপূর্ণ হয়। এই ত্রুটি নিয়েই ভূমিষ্ঠ হয়েছিল শিশুটি। তার চোখের পাতা বা আইল্যাশের দু’টি স্তর ছিল। পরবর্তীকালে সেটাই হয়ে দাঁড়ায় মোহময়ী রূপের তুরূপের তাস। ওই তাস দিয়েই দীর্ঘ কয়েক দশক তিনি শাসন করেছিলেন হলিউড। তিনি এলিজাবেথ টেলর বা লিজ টেলর। তার পুরো নাম এলিজাবেথ রোজমন্ড টেলর। জন্ম ১৯৩২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডে। তার বাবা মা ছিলেন মার্কিন বংশোদ্ভূত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ১৯৩৯ সালে তারা সপরিবারে চলে এসেছিলেন আমেরিকায়।
মাত্র ১০ বছর বয়সে আত্মপ্রকাশ ‘ওয়ার্ন বর্ন এভরি মিনিট’ ছবিতে। প্রথম ব্রেক ১৯৪৪ সালে, ‘ন্যাশনার ভেলভেট’ ছবিতে অভিনয় করে। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এলিজাবেথ পরে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেন। তার নতুন নাম হয় এলিশেবা র্যাশেল।
সুন্দরী এলিজাবেথ প্রথম বিয়ে করেছিলেন মাত্র সতেরো বছর বয়সে। তার প্রথম স্বামী ছিলেন বিখ্যাত হোটেল ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান, নিকি হিলটন জুনিয়র। তাদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল হিলটন গ্রুপ অব হোটেলস।
জীবনে মোট সাত জন পুরষকে তিনি আট বার বিয়ে করেছিলেন। দ্বিতীয় স্বামী ছিলেন মাইকেল ওয়াইল্ডিং। তৃতীয় বিয়ে মাইকেল টডকে। চতুর্থ বার জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এডি ফিশারকে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্বামী ছিলেন রিচার্ড বার্টন। এক বার বিয়ের পরে ডিভোর্স করে আবার তাকেই বিয়ে করেছিলেন লাস্যময়ী লিজ। সপ্তম স্বামী জন ওয়ার্নার। অষ্টম তথা শেষ স্বামী ল্যারি ফর্টেনস্কি।
এলিজাবেথের তৃতীয় স্বামী ফিল্ম পরিচালক টড বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। তারপর তিনি বিয়ে করেছিলেন এডি ফিশারকে। বাকি ক্ষেত্রে বিয়ে করেছিলেন বিবাহবিচ্ছেদের পরে। এডি ছিলেন তার বান্ধবী ডেবি রেনল্ডসের স্বামী। লিজকে বিয়ের জন্য ডেবিকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন টড।
এলিজাবেথের ক্যারিয়ারে মাইলফলক সিনেমা হল ‘ক্লিওপেট্রা’। যশ, খ্যাতি, অর্থ সব কিছু তাকে দিয়েছিল এই ছবি। সেই সঙ্গে দিয়েছিল জীবনসঙ্গী রিচার্ড বার্টনকেও। এই ছবির সেটেই আলাপ দু’জনের। বার্টনকে দু’বার বিয়ে, দু’বার ডিভোর্স দিয়েছিলেন লিজ। নায়িকা বলেছিলেন, ১৯৮৪ সালে রিচার্ড মারা না গেলে তিনি আরও একবার বিয়ে করতেন তাকে।
আট বার বিয়ে থেকে মোট চার জন সন্তানের মা হয়েছিলেন এলিজাবেথ। মাইকেল ওয়াইল্ডিং ও এলিজেবেথের দুই ছেলে। মাইকেল জুনিয়র এবং ক্রিস্টেফার এডওয়ার্ড। মাইক টডের সঙ্গে তার বিয়েতে জন্ম কন্যা লিজার। রিচার্ড বার্টন ও এলিজাবেথ টেলরের কন্যার নাম মারিয়া বার্টন।
জীবনে মোট পাঁচ বার মনোনীত হয়েছেন অস্কার-এর জন্য। পেয়েছেন দু’বার। ‘হুজ অ্যাফ্রেড অব ভার্জিনিয়া উল্ফ’ এবং ‘বাটারফিল্ড ৮’ ছবিতে অভিনয় তাকে এনে দিয়েছে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার।
৬৭ বছর বয়সে এলিজাবেথ টেলর সম্মানিত হন ‘ডেম কম্যান্ডার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাকে সম্মানিত করেন।
খুব ভালবাসতেন সুগন্ধি। এক মুহূর্তও থাকতে পারতেন না পারফিউম ছাড়া। নিজেও বানিয়েছিলেন একটি সুগন্ধি। ভক্তরা সেই পারফিউমের নাম দিয়েছিলেন ‘ভায়োলেট আইজ’। রিচার্ড বার্টন তাকে ৩৩.১৯ ক্যারাটের হিরের আংটি উপহার দিয়েছিলেন। হিরের নাম হয়েছিল ‘দ্য এলিজাবেথ টেলর ডায়মন্ড’।
তার মৃত্যুর পরে নিলাম হয়েছিল এলিজাবেথ টেলরের বিপুল অলঙ্কার সম্ভার। ক্রিস্টির নিলামে গয়নার দাম উঠেছিল আজকের ভারতীয় মুদ্রার হিসেবে আট কোটি টাকারও বেশি। পুরো টাকাই ব্যবহৃত হয়েছিল এলিজাবেথ টেলরের নামাঙ্কিত এইডস গবেষণা সংক্রান্ত সংস্থায়।
বার্ধক্যে পৌঁছে দীর্ঘ দিন রোগাক্রান্ত ছিলেন এলিজাবেথ টেলর। ডায়াবেটিস, হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি, হৃদরোগ, ব্রেন টিউমার -সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিশ বছর অসুস্থ থাকার পরে চিরতরুণী এই নায়িকার মৃত্যু হয়েছিল ২০১১-র ২৩ মার্চ।
তাকে ‘লিজ’ বলা হলেও তিনি ব্যক্তিগত ভাবে এই ডাক পছন্দ করতেন না। তার মনে হত, ‘লিজ’ ডাকটা সাপের ‘হিশশ’-এর মতো শোনায়!