November 12, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular সফর

গোটা এশিয়ার ইতিহাস আর সংস্কৃতি দেখতে পাবেন ‘সিংহের শহর’ সিঙ্গাপুরে 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

গল্পকথায় আছে  ১৩ শতকে সুমাত্রার এক রাজকুমার পরমেশ্বর জাহাজডুবি হয়ে ভাসতে ভাসতে পৌঁছোন এক নির্জন দ্বীপে। এখানে তিনি এক রহস্যময় সিংহের ন্যায় প্রাণীর দেখা পান। সিংহরাজের আশীর্বাদ নিয়েই এই দ্বীপে তাঁর রাজ্যপাট প্রতিষ্ঠা করেন পরমেশ্বর। শহরের নাম রাখেন সিংহপুরা বা সিংহের শহর।
স্ট্রেট অফ মেলাক্কায় এই ছোট্ট দ্বীপের অবস্থান চিরকালই ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই দ্বীপভূমির বাড়তি সুবিধা। তবে ১৮১৯ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র হয়ে ওঠার পর থেকেই সিঙ্গাপুরের ইতিহাস বদলে যেতে শুরু করে। জেলেদের ছোট্ট গ্রাম ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে চিনা, মালয়, ভারতীয়, আরব, আর্মেনিয়ান প্রভৃতি বিভিন্ন দেশের ভাগ্যান্বেষী মানুষদের বাণিজ্য আর কর্মসংস্থানের অন্যতম এক কেন্দ্র। জন্ম হয় এক মিশ্র সংস্কৃতির। বছরদুয়েক মালয়েশিয়ার অন্তর্ভুক্ত থাকার পর ১৯৬৫ সালে স্বাধীন হয় সিঙ্গাপুর।
এশীয় সভ্যতার মিউজিয়াম : শুধু সিঙ্গাপুর নয়, সমগ্র এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ইতিহাস আর সংস্কৃতির পরিচয় মিলবে এখানে। এমন মিউজিয়াম সারা এশিয়াতেই আর নেই। পুরো একটা তলাই রয়েছে ভারতকে নিয়ে। সিঙ্গাপুরের শিল্প-সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল এসপ্ল্যানেড থিয়েটার মারিনা বে-তে । ১,৬০০ আসনের কনসার্ট হল, ২,০০০ আসনের থিয়েটার, একাধিক স্টুডিয়ো, ৪,৮৮৯ রকমের বাজনা, অনুষ্ঠানের জন্য বিশাল এলাকা, রেস্টুরেন্ট, বার, শপিং-এর জায়গা-আরও কত কী। প্রতিবছর জুন মাসে এখানেই সিঙ্গাপুর আর্ট ফেস্টিভ্যাল উদ্‌যাপন হয়। এম.র.টি স্টেশনের কাছেই চায়নাটাউন । শহরের অন্যতম সেরা মিউজিয়াম চায়নাটাউন হেরিটেজ সেন্টারটি এখানকার প্রধান আকর্ষণ। শপিং করতে করতে পৌঁছোনো যাবে হেরিটেজ সেন্টারে। সিঙ্গাপুরে চিনা অভিবাসনের ইতিহাস প্রত্যক্ষ করার এক বিষ্ময়কর অভিজ্ঞতা। মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে সিল্ক, ক্র্যাফট, ইলেকট্রনিক্স হরেক দোকানে শপিং সারতে সারতে পৌঁছে যাওয়া যাবে মসজিদ জামে আর শ্রীমারিয়াম্মান মন্দির । চায়নাটাউনের কেন্দ্রস্থলে এই হিন্দুমন্দিরটি। মুঘল স্থাপত্যের আদলে তৈরি প্রাচীন মসজিদটিও নজর কাড়ে। সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে প্রাচীন চিনামন্দির থিয়ান হক কেন বা স্বর্গীয় আনন্দের মন্দির। মন্দিরে সমুদ্রের দেবী মা জু পো আর ক্ষমার দেবী কোয়ান ইন পূজিত হন। এম. আর. টি থেকে বেরিয়ে ক্যাম্পাবেল লেনে চেনা চেনা দৃশ্য গন্ধ নিয়ে লিটল ইন্ডিয়া (Little India)।
প্রায় ৬০০ প্রজাতির চেনা অচেনা পাখির ঠিকানা ২০০ বর্গমিটার ব্যাপী জুরং বার্ড পার্ক। পৃথিবীর সবথেকে বড়ো কৃত্রিম পাখিরালয়। গোলাপিরঙা ফ্লেমিংগো, রংচঙে ম্যাকাও, কাকাতুয়া আর নানা প্রজাতির টিয়া পাখি, পেঙ্গুইনের মিছিল -আন্টার্কটিকা থেকে আফ্রিকা -সারা বিশ্বের নানান পাখির দেখা মিলবে এখানে। ‘নাইট সাফারি’তে রাতের বেলায় প্রাকৃতিক পরিবেশে পশুপাখি দেখার মজাই আলাদা। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে। ৫২০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে সিঙ্গাপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন। হার্বেরিয়াম সেকশনে বিভিন্ন প্রজাতির ৬,০০,০০০ গাছপালা রয়েছে। জাতীয় অর্কিড উদ্যানে দেখা মিলবে নানান প্রজাতির ৬০,০০০ অর্কিড। এশিয়ার অন্যতম সেরা একটি চিড়িয়াখানাও সিঙ্গাপুরে। প্রকৃতির মাঝে স্বাভাবিক পরিবেশে দেড়শোরও বেশি প্রজাতির স্তন্যপায়ী, পাখি আর সরীসৃপের বাসভূমি এই জু। পৃথিবীর সবথেকে বড়ো কৃত্রিম জলপ্রপাতটি দেখেও মুগ্ধ হতে হয়।
সিঙ্গাপুরের অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে আবদুল গফফর মসজিদ, শ্রী ভিরামা কালিয়াম্মান মন্দির, লিয়ং সান বৌদ্ধমন্দির, আর্মেনিয়ান চার্চ, কেন্দ্রীয় শিখমন্দির, ফোট ক্যানিং পার্ক আর ঔপনিবেশিক ইতিহাসের স্মৃতিমাখা কলোনিয়াল ডিস্ট্রিক্ট।
সিঙ্গাপুরের আরেক আকর্ষণ উপকূল থেকে সামান্য দূরে স্যান্টোসা আইল্যান্ড । ফ্রেশার হিল থেকে কেবলকারে স্যান্টোসা যাওয়া যায়, ফেরার সময় জলপথে আসুন। স্যান্টোসায় গিয়ে মনোরেলে চড়ে ঘুরে নেওয়া যায় দ্বীপটা। ওয়ার মেমোরিয়াল, বাটারফ্লাই পার্ক, ডলফিন লেগুন। স্যান্টোসা থেকে কেবলকারে জুয়েলবক্স, মাউন্ট ফেবারের শৃঙ্গচূড়ায় চলে যাওয়া যায়।
আর একসঙ্গে পুরো সিঙ্গাপুরকে দেখতে উঠতে হবে ৫৪০ ফুট উঁচু সিঙ্গাপুর ফ্লায়ার । মেরিনা বে থেকে শুরু করে সিঙ্গাপুর রিভার, র‌্যাফেলস প্লেস, মার্লায়ন পার্ক -চোখের সামনে খুলে যাবে একের পর এক দৃশ্যপট। এই হুইল যখন ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যায় তখন মনে হয় যেন পৃথিবীটাই উলটে গিয়েছে -সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
যাওয়াঃ সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স, মালয়েশিয়ান, এয়ারলাইন্স ও থাই এয়ারওয়েজের বিমানে কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন বড়ো শহর থেকে সিঙ্গাপুর পৌঁছনো যাবে। বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে, বাসে বা ট্যাক্সিতে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যাওয়া যাবে।

Related Posts

Leave a Reply