টানা ৯ বছর কাজ করে তৈরী হয় সর্বকালের গোপনতম এই বাঙ্কার, দরজার সংখ্যাই ২৫হাজার
কলকাতা টাইমস
জার্মানীর সবচেয়ে গোপনতম বাঙ্কার অফিসিয়াল নাম ‘Dokumentationsstätte Regierungsbunker।’ জার্মানীর বন শহর থেকে মাত্র পঁচিশ কিলোমিটার দক্ষিণে আহর পাহাড়ের উপত্যাকায় দুই শহরের মাঝখানে এর অবস্থান। ‘কোল্ড ওয়ার’ এর সময় এটি নির্মিত হয়। জার্মান সরকার, সংসদ সদস্য, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা যেন জরুরি অবস্থায় কাজ চালিয়ে যেতে পারে সে উদ্দেশে জার্মানীর সর্বকালের গোপনতম এই বাঙ্কারটি তৈরি হয়েছিল। গোটা পৃথিবীর কাছে জার্মানীর লুকিয়ে রাখা একটি গোপনতম সত্য ছিল এটি।
ন্যাটো এবং ওয়ার্শাও প্যাক এর বিরোধিতায় আনবিক যুদ্ধ যখন আসন্ন, তখন আনবিক বোমার ভয়ে জার্মানরা পরিকল্পনা করলো আশ্রয়স্থল নির্মাণ করার। সেখান থেকেই হবে রাষ্ট্রীয় কাজ পরিচালনা। ১৯৫০ সালের দিকে বাঙ্কারটি তৈরির পরিকল্পনা শুরু হয়। সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী কর্নাড আডেনাওয়ার আর জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পরিকল্পনা করেছিল। উপযুক্ত স্থান খোঁজাখুঁজির পর বনের খুব কাছেই পাওয়া যায় জায়গাটি। ঠিক শহর নয়, আবার উপশহরও নয়- এমন সেই জায়গাটিতেই তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয় বাঙ্কার। শত্রুরা কখনো পল্লী অঞ্চলের মতো জায়গাটিতে বোমা ফেলবে না- এমন চিন্তা থেকেই নির্বাচন করা হয় জায়গাটি। কখনো কাজ শেষ না হওয়া দুটো রেললাইন ছিল এই বাঙ্কার তৈরির প্রাথমিক উপাদান। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না বলে রেললাইনটি কখনো চালু করা হয়নি। প্রথমে এতে মাশরুম চাষ হয়েছিল, পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে কিছু অস্ত্র তৈরির কারখানা এই টানেলটি দখল করে। তারও পরে Lager Rebstock (Camp Vine) এই কোড নাম দিয়ে রাজনৈতিক বন্দীদের দিয়ে এর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করানো হত।
রেললাইন থেকে শুরু করে একশ দশ মিটার মাটির নীচে বাঙ্কারটির প্রবেশ পথ। ১৯৬২ সালে কাজ শুরু হয়ে টানা নয় বছর চলে রিগিয়ারুংস বাঙ্কারটির কাজ। ১৯৭১ সালে এটি সম্পূর্ণ হয়। সতের দশমিক তিন কিলোমিটার দৈঘ্যের এই বাঙ্কারটিতে স্বাভাবিকভাবে ৯৩৬ জনের ঘুমের ব্যবস্থা ও ৮৯৭টি অফিস রুম আছে। দরজার সংখ্যা ২৫ হাজার। জরুরি অবস্থায় বাইরের পৃথিবীর সাহায্য ছাড়া ৩ হাজার মানুষ যেন অন্তত ত্রিশ দিন বেঁচে থাকতে পারে সেরকম ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভারী স্টিলের পাত দিয়ে বানানো দরজাগুলো মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেন পৃথিবী থেকে বাঙ্কারটিকে আলাদা করে ফেলতে পারে সেভাবেই এটি তৈরি।
মানুষ যেন মাটির নীচে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে কাজকর্ম করতে পারে এবং বসবাস করতে পারে, সেজন্য যত ধরনের সুযোগ সুবিধা দরকার তার সব কিছুর ব্যবস্থাই এখানে আছে। ডাক্তারের চেম্বার ও রোগী দেখার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, দাঁতের ডাক্তার, চুল কাটার সেলুন, বিয়ার খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
শীতল যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার অনেক দিন পর পর্যন্তও এই বাঙ্কারটির কথা জনগনকে জানানো হয়নি। তিন শিফটে পালা করে ১৮০ জন কর্মী বাঙ্কারটি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতেন। হিরোশিমার সমপরিমাণ অর্থাৎ বিশ কিলো টন বোম ব্যবহার করলে এটি ধ্বংস করা যেত। মোটামুটি যুদ্ধের আর প্রয়োজন হবে না বলে নিশ্চিত হওয়ার পর জনসম্মুখে বাঙ্কারটির কথা প্রকাশ করা হয়। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আস্তে আস্তে বাঙ্কারটি ধ্বংস করতে শুরু করে জার্মানরা।
২০০৮ সালে রিগিয়ারুংস বাঙ্কারটি জনসাধারণের দেখার জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জার্মানীর ইতিহাসের সবচেয়ে গোপনতম বাঙ্কারটি হয়ে ওঠে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। একটি