মা ও সদ্যজাত মেয়ে দুই জনেরই বয়স পঁচিশ বছর!
কলকাতা টাইমস :
মায়ের বয়স ২৫। মেয়েরও তাই। তফাত বলতে কেবল একটি। কন্যাটি সদ্যোজাত। গত ২৫ নভেম্বরই জন্ম নিয়েছে সে। তা-ও আবার টানা ২৫ বছর ধরে হিমায়িত একটি ভ্রূণ থেকে। মানব ইতিহাসের বিচারে যা দীর্ঘতম সময় ধরে হিমায়িত রাখা মানব ভ্রূণ। অবিশ্বাস্য এ ঘটনাটি ঘটেছে আমেরিকায়। মার্কিন ন্যাশনাল এমব্রায়ো ডোনেশন সেন্টারের মেডিক্যাল ডিরেক্টর জেফরি কিনানের তত্ত্বাবধানেই জন্ম নিয়েছে এম্মা রেন গিবসন। সে কোল আলো করেছে বছর পঁচিশের যুবতী টিনা গিবসনের। হ্যাঁ, সাদা চোখে দেখলে বর্তমানে এম্মার বয়স এক মাসও পেরোয়নি। কিন্তু ঘটনা হল, বিজ্ঞান সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে।
আসলে টিনা এবং তাঁর স্বামী বেঞ্জামিন, দুই জনেই শিশুদের সান্নিধ্য উপভোগ করেন। শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালবাসেন। অথচ ভাগ্যের পরিহাসে তাঁদের নিজেদেরই কোল এতদিন ছিল খালি। কারণ বেঞ্জামিন সিস্টিক ফাইব্রোসিস-এ আক্রান্ত। টিনা তাই চাইলেও অন্তঃসত্ত্বা হতে পারেননি। দুঃখ ভোলাতে দম্পতি প্রচুর পিত-মাতৃহীন শিশুদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতেন। তবু, দুই জনেরই মনের কোণে কোথাও নিজেদের সন্তান লাভের অপূর্ণ ইচ্ছা রয়েই গিয়েছিল। যার জন্য বহু ভাবনা-চিন্তার পর এই তরুণ দম্পতি দ্বারস্থ হন মার্কিন ন্যাশনাল এমব্রায়ো ডোনেশন সেন্টারের মেডিক্যাল ডিরেক্টর কিনানের। উদ্যোগী হন ভ্রূণ দত্তক নিতে।
তবে যাত্রা ছিল বেশ কঠিন। চিকিৎসকরা প্রথমে পরীক্ষা করে দেখেন, টিনার জরায়ু ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত কি না! সে বিষয়ে সবুজ সংকেত মেলার পর শুরু হয়েছিল উপযুক্ত ভ্রূণের খোঁজ। তিনশোরও বেশি ‘ফ্রজেন’ ভ্রূণ সম্পর্কে কিনানের কাছ থেকে তথ্য আহরণ করার পর টিনা এবং বেঞ্জামিন বেছে নেন সবচেয়ে বেশি সময় ধরে হিমায়িত থাকা ভ্রূণটিকেই। এর আগে দীর্ঘতম সময় ধরে হিমায়িত থাকা ভ্রূণের বয়স ছিল কুড়ি বছর। ওই ভ্রূণ থেকে সফলভাবে ফুটফুটে এক শিশুর জন্মও হয়েছিল। এম্মাও সম্পূর্ণ সুস্থ আছে।
কিনান জানাচ্ছেন, টিনা যে ভ্রূণ ধারণ করে এম্মার জন্ম দিয়েছেন, সেটির হিমায়িতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৯২ সালের ১৪ অক্টোবর। পরে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের জন্য এটিকে তার ফ্রজেন দশা থেকে বের করে আনা হয় চলতি বছরেরই ১৩ মার্চ। তবে এ সব কিছুকে ছাপিয়ে টিনা শুধু খুশি, নিজের মেয়েকে পেয়ে। তাঁর কথায়, আমি শুধু মা হতে চেয়েছিলাম। কোনও রেকর্ড তৈরি করার কথা মাথায় ছিল না। ভাবুন তো, আমার বয়সও ২৫। আমিই তো আমার মেয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড!