এই অতিপরিচিত বিষাক্ত খাবারগুলির নাম শুনলেই ঘাম ছাড়বে
কলকাতা টাইমস :
অহরহই আমরা নাম জানা বা অজানা খাবার খাচ্ছি। এসব খাবারে অনেক সময় মরনব্যাধি রোগ থাকে। বিষ থাকে। মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এমন খাবার আছে যেগুলি মদের অতি পরিচিত, ভালো লাগার খাবার যদি শোনেন তারা আসলে এক-একটা মারাত্মক বিষ তাহলে নিশ্চই অবাক হবেন ! জেনে রাখুন এমনই কয়েকটি খাবারের নাম –
১. আলু : এই তালিকায় প্রথমেই আসে আলুর নাম। অবাক হলেন তো ! ঠিকই শুনেছেন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আলু থাকে না এমন লোক খুব কমই দেখা যায়। তবে সবুজ দাগযুক্ত আলু শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের আলু অর্থনৈতিক বিবেচনায় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই উত্তোলন করা হয়। এতে সোলানাইন নামক বিষাক্ত পদার্থ থাকে যা রান্না এবং পোড়ানোর পরও দূর হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলুর সবুজ অংশ ফেলে দেওয়া সবসময় নিরাপদ নয়। বরং এই ধরনের আলু ব্যবহার না করাই উত্তম। এছাড়া আলুর পাতা ও কাণ্ডে গ্লাইকো অ্যাল্কালয়েড থাকে। সবুজ ও গ্যাঁজ হওয়া আলু খেলে ডায়রিয়া, মাথাব্যাথা, এমনকি কোমায় চলে যেতে পারে। ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
২. টমেটো : টমেটো একটি দৃষ্টিনন্দন শীতের সবজি। এটি একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। সবজি হিসেবে টমেটোর জুড়ি অনেক। টমেটো আমাদের দেশে সারা বছর পাওয়া যায়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে টমেটো একটি ফল হলেও, সবজি হিসেবেই সারা বিশ্বে টমেটো পরিচিত। তবে আলুর মতোই টমেটোর পাতা ও কাণ্ডেও গ্লাইকো অ্যাল্কালয়েড থাকে যা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। কাঁচা সবুজ টমেটোতেও একই উপাদান আছে। তবে অল্প পরিমাণে খেলে সমস্যা নেই।
৩. শিম বিচি : অনেকেরই পছন্দের সবজির তালিকায় আছে শিমের নাম। এটি খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। শিম, শিমের বিচি এবং শিমের পাতাও শাক হিসেবে খাওয়া যায়। শিমের বিচিতে রয়েছে উচ্চমানের ফাইবার প্রোটিন, যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। এতে কোনো কোলেস্টেরল নেই। এনার্জি বা শক্তির জন্য শিমে রয়েছে শতকরা ২০ ভাগ প্রোটিন ও উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট। তবে শিমের বিচিতে ফাইটোহিমাটোগ্লুটানিন নামক বিষ থাকে। যা আপনাকে মারাত্মক অসুস্থ্য করে দিতে পারে। যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই রান্নার পূর্বে ১০ মিনিট সিদ্ধ করে তারপর রান্না করতে পারেন। ৪. লাল মটরশুটি: স্বাস্থ্যসম্মত সবজি হিসেবে মটরশুটির খ্যাতি রয়েছে। এটি সারাবছর প্রস্তুতির জন্য আপনি প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি পাবেন। খাদ্যের ক্রমাগত খরচ হৃদয়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে, ওজন হারাবে, টক্সিন অপসারণ করবে। কিন্তু লাল মটরশুটিতে রয়েছে বিষাক্ত পদার্থ। আর এ বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে এ ধরনের মটরশুটিকে ১০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে সেদ্ধ করতে হয়। সেদ্ধ করা ছাড়া রান্না করলে এটি দুই থেকে তিনগুণ বেশি ক্ষতি করতে পারে।
৫. আপেল : প্রবাদে আছে– “An apple a day will keep the doctor away” অর্থাৎ আপনি যদি প্রতিদিন একটি আপেল খান তাহলে আপনাকে আর ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। আপেলের মধ্যে এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, যা কুয়েরসেটিন নামে পরিচিত। এটি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং আমাদের শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু আপেলের বিচিতে হাইড্রোজেন সায়ানাইড নামক বিষ থাকে। আমরা সাধারণত আপেলের বিচি খাই না এবং একটা আপেলে খুব বেশি বিচি থাকেও না। কিন্তু আপেলের বিচি কোন কারণে বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেললে ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই আপেলের জুস তৈরির সময় বিচি যেন না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
৬. কামরাঙা : কামরাঙা চুল, ত্বক, নখ ও দাঁত উজ্জ্বল করে। মুখে ব্রন হওয়া আটকায়। কামরাঙা কোনোভাবেই খালি পেটে খাওয়া চলবে না। ডায়ারিয়া হলে কামরাঙা খাওয়া চলবে না। কামরাঙা একটি অক্সালেট সমৃদ্ধ ভিটামিন সি জাতীয় ফল। সে কারণে যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের কামরাঙা খেতে নিষেধ করছেন চিকিত্সকরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এরমধ্যে এক ধরনের অজানা নিউরোটক্সিন থাকে। স্বাভাবিক কিডনির যা কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু কারও কিডনি খারাপ হলে সেই বিষ কিডনির আরো ক্ষতি করতে পারে। খাওয়ার সময় তা বোঝাও সম্ভব না।
৭. জায়ফল : জায়ফল খাবারকে সুস্বাদু আর সুগন্ধি করে, ভেষজ উপকারিতাও অনেক। নবম শতাব্দীর শুরুর দিকে থিওডর দ্য স্টুডাইট তাঁর শিষ্যদের খাবারের ওপরে জায়ফল গুঁড়ো দিয়ে খেতে বলতেন। নানা রকম ওষুধ হিসেবেও জায়ফল ব্যবহার করা হয়। তবে জায়ফলে মাইরিস্টিসিন আছে যা মনের ওপরে কাজ করে। সাধারণত রান্নায় যে পরিমাণ জায়ফল ব্যবহার করা হয় তা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে বমি, ঘাম ঝরা, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা ও হ্যালুসিনেশন হয়।
৮. সুগন্ধি ফল : এক টুকরো ভালো ও সুগন্ধি মশলা শুকনো খাবারে মেশালে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না কিংবা এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা এমন কি হ্যালুসিনেশনের মতো নানা ধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে! বাদামে মিরিসটিসিন নামে এক ধরনের সাইকোঅ্যাক্টিভ উপাদান রয়েছে, যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোজম্যারি ও ওরেগানোর মতো অন্যান্য মশলা বেশি পরিমাণে খেলে আমরা আরো বেশি সক্রিয় হবো।
৯. শুকনো ফল : আমাদের অনেকেরই শুকনো ফলের প্রতি এক ধরনের আসক্তি দেখা যায়। ধুয়ে বা না ধুয়ে অনেকসময় আমরা এসব ফল মুঠো ভরে খেয়ে ফেলি। কিন্তু এসব ফল যত কম খাওয়া যায় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ততটাই মঙ্গল। বাজারে বিক্রি হওয়া এসব শুকনো ফলের বেশিরভাগ সালফার এবং পটাসিয়াম জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে শিল্প কারখানায় শুকানো হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রচুর পরিমাণ সালফারের ব্যবহার হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া এটা পাকস্থলির সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।
১০. বিষ ফল : এলডার বেরি দেখতে দারুণ। গন্ধও চমৎকার। এ ধরনের বেরি বা আঙুর দিয়ে সিরাপ তৈরি হয়। পাই বা কেকের সিজনিং, জ্যাম, চাটনি এমনকী, লিকারও তৈরি হয় এই ফল দিয়ে। কিন্তু ভালো করে রান্না করতে না পারলে বিপদ। এই ফলের মধ্যে থাকে বিষ। না পাকা অবস্থায় এই ফল খেলে মৃত্যু অবধারিত। আর পাকা ফলও ঠিকভাবে রান্না করে খেতে হয়। এল্ডার বেরির পাতা এবং ডালে থাকে সায়ানাইড বিষ। কোনোভাবে তা পেটে চলে গেলে মৃত্যু অবধারিত।
১১. কাঁচা মধু: কাঁচা মধু গরম করা হয় না এবং নিয়মিত মধুর মতো পেস্টুরাইজ করা হয় না। কাঁচা মধুতে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এনজাইম থাকে যা গরমকালে ধ্বংস হয়ে যায়। কাঁচা মধুতে গ্রায়ানোক্সিন থাকে। তাই এক টেবিল চামুচ কাঁচা মধু খেলে মাথাঘোরা, দুর্বল লাগা, অত্যধিক ঘাম হওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া এবং বমি হওয়া এই উপসর্গ দেখা দেয়।
১২. কাজুবাদাম : মিষ্টি কাজুবাদাম ও তেতো কাজুবাদাম এই দুই ধরণের কাজুবাদাম পাওয়া যায়।তুলনামূলক ভাবে তেতো কাজুবাদাম এ প্রচুর হাইড্রোজেন সায়ানাইড থাকে।সাত থেকে দশটা তেতো কাজু বাদাম কাঁচা খেলে বড়দের সমস্যা হতে পারে এবং ছোটদের জন্য প্রাণনাশক হতে পারে।কিছু কিছু দেশ এই তেতো বাদাম বিক্রি করা অবৈধ ঘোষণা করেছ, যেমন- নিউজিল্যান্ড।আমেরিকাতে কাঁচা কাজু বাদাম বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১৩. তিতা কাজুবাদাম : অ্যামন্ড বা কাজু বাদাম কিন্তু বাদাম নয়, বিভিন্ন স্বাস্থ্যগুণে সমৃদ্ধ একধরণের বীজ। কাজু বাদাম দু’ধরণের রয়েছে, মিষ্টি কাজুবাদাম এবং তিতা কাজুবাদাম। অনেকেই মিষ্টি কাজুবাদামের চেয়ে তিতা কাজুবাদাম বেশি পছন্দ করে। কেননা তিতা কাজুবাদামের গন্ধ আর স্বাদ বেশি। কাজুবাদাম সম্পর্কে এসব তথ্য আমরা অনেকেই জানি। যা জানি না তা হলো, তিতা কাজুবাদামে সায়ানাইট থাকে। যা ঠিকভাবে প্রসেসিং করা না হলে কাজুবাদামের এই বিষই হতে পারে আপনার মৃত্যুর কারণ।
১৪. চেরি: চেরি জনপ্রিয় একটি ফল। চোখ ধাঁধানো হলকা টক মিষ্টি ফল চেরি। চেরি হচ্ছে ‘প্রুনাস’ গণের অন্তর্ভুক্ত একটি ফল। চেরি কাঁচা বা রান্না করেও খাওয়া হয় এবং মদ তৈরিতে ব্যবহার হয়। চেরির পাতা এবং বীজে বিষাক্ত উপাদান আছে।যখন চেরির বীজকে চুষা বা চূর্ণ করা হয় তখন প্রুসিক এসিড (হাইড্রোজেন সায়ানাইড)উৎপন্ন হয়।যখন ই চেরি খাবেন এর বীচি চুষে খাবেন না।বরই এবং পীচ ফলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
১৫. ক্যাস্টর অয়েল: রেড়ির তেল বিভিন্ন ধরণের ক্যান্ডি,চকলেট ও অন্যান্য খাদ্যে ব্যবহার করা হয়। অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন একটু ক্যাস্টর অয়েল খেয়ে থাকেন এবং বাচ্চাদেরকেও জোর করে খাওয়ান। রেড়ীর বীচিতে রিচিন নামক বিষ থাকে যা খুবই মারাত্মক বিষ। রেড়ীর একটা বীজ খেলে একজন মানুষ মারা যায় আর চারটা খেলে একটা ঘোড়া মারা যায়।
১৬. ফুগু বা পাফার ফিস বা পোটকা মাছ : সবচেয়ে ভয়ংকর খাদ্যের এক নম্বরে আছে পাফার ফিস বা পোটকা মাছ যা জাপানে ফুগু নামে পরিচিত। ফুগু একটি অত্যন্ত দামী এবং উপাদেয় খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফুগু মাছ দেখতে অনেকটা বাংলাদেশি পোটকা মাছের মত। তবে জাপানী বিষাক্তকর এই ফুগু সাইজে বাংলাদেশি পোটকা মাছের চাইতে অনেক বড়। তবে যদি মাছটি খাবারের জন্য ভালোভাবে তৈরি করা হয় না তখন এটিই আপনার শেষ খাবার হতে পারে। কেননা এই মাছে রয়েছে টেট্রোডোটক্সিন নামক এক প্রকার প্রাণঘাতী বিষ যা থাকে মাছের লিভারে।
১৭. বন্য মাশরুম : মাশরুম অনেকেরই পছন্দের খাবার, বেশ উপাদেয়। ছোটবেলায় আমরা বনে জঙ্গলে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাঙের ছাতা গজিয়ে উঠতে দেখতাম, বড় হয়ে জেনেছি এগুলোকে মাশরুম বলে। তাই বলে, মাশরুম ভেবে ব্যাঙের ছাতা যেন খেতে যাবেন না ভুলেও। ব্যাঙের ছাতা আর মাশরুম সমার্থক হলেও, কিছুটা ভিন্নতা কিন্তু রয়েই গেছে। ব্যাঙের ছাতা বলতে আমরা যে বন্য মাশরুমকে বুঝি, তা কিন্তু উপাদেয় নয়। কিছু বন্য মাশরুম তো খুবই ক্ষতিকর। ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুর কারণও হতে পারে। বন্য মাশরুম মানুষের শরীরে অভ্যন্তরীণ ব্যাথা বেদনার সৃষ্টি করতে পারে, বমির উদ্রেক করতে পারে, এমনকি হার্ট, লিভার এবং কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে। শুধু মাশরুমই নয় যে কোন বন্য কিছু খাবার আগে বিশেষ ধরণের সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।