গাধার সংখ্যা কমছে বিশ্বে, কেন জানলে চোখে জল আসবে
শুনে হাঁসি পাচ্ছে তো ! গাধার সংখ্যা কমছে তাতে কি আসে যায়। এতো ফলাও করে বলারই বা কি আছে ? আপাতদৃষ্টিতে আমার-আপনার কাছে এদের কোনো গুরুত্ব নেই। কিন্তু জানেন কি এখনো এমন প্রচুর দেশ আছে যেখানকার বাসিন্দারা উপার্জনের জন্য এই অতি নিরীহ জীবটির ওপর নির্ভরশীল। আর যে কথায় হাঁসলেন তার পেছনের কারণ মানে গাধাদের সংখ্যা কেন কমছে জানলে আপনার অনুশোচনাই হবে।
পরিসংখ্যান বলছে বেশ দেশ যেমন যেমন কেনিয়ায় গাধাদের মেরে ফেলে চামড়ার ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এমনই কথা শোনা গেলো কেনিয়ার অ্যান্থনি মপে ওয়ানিয়ামা (২৯)র কাছে। পেশায় জল সরবরাহকারী। রাজধানী নাইরোবির কাছের একটি শহর ওংগাটা রোংগাইয়ের বাসিন্দা তিনি। গ্রাহকের কাছে জলপূর্ণ প্লাস্টিকের বোতল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে পোষা গাধাটা ছিল তাঁর একমাত্র সম্বল। এই পেশায় তার ও পরিবারের অন্ন জোটাতো। কিন্তু হঠাৎ এক সকালে ঘুম ভেঙে প্রিয় গাধাটা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর কিছু দূরে গাধাটাকে পেলেন, তবে মৃত। গায়ের চামড়া কে বা কারা ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে।
অ্যান্থনি বলেন, সংসার আর সন্তানের স্কুলের খরচ মেটানোর পরও এই জল সরবরাহের ব্যবসা করে তিনি জমি কিনেছিলেন, বাড়ি কিনেছিলেন। কিন্তু এখন নতুন করে গাধা কেনার সামর্থ্য না থাকায় ভাড়া করা গাধা দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। এর ফলে ব্যবসায় আগের মতো আর লাভ থাকছে না। সংসারে দেখা দিয়েছে টানাটানি। শুধু অ্যান্থনিই না, কেনিয়ার অনেকের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটেছে। আয়ের একমাত্র উৎস হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে তাঁরা। বিষয়টা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, গাধা চুরির আশঙ্কায় ঘুম হারাম হওয়ার জোগাড় বহু মানুষের।
চীনে গাধার চামড়ার ব্যাপক চাহিদাই গাধাদের লোপ পাওয়ার কারণ হিসেবে মনে করছেন অধিকাংশ মানুষ। দেশটিতে ভেষজ ওষুধ হিসেবে গাধার চামড়ার ব্যাপক চাহিদা। সেই সঙ্গে এই প্রাণীর মাংসও বেশ জনপ্রিয়। এর ফলে কেনিয়ার মতো চীনে আশঙ্কাজনক হারে গাধার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। চাহিদা মেটাতে আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর এখন গাধা ব্যবসায়ীদের নজর।
চীনা সরকারের তথ্যমতে, ১৯৯০ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত দেশটিতে গাধার সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ থেকে কমে ৩০ লাখে নেমে এসেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা দ্য ডাংকি স্যাংচুয়ারির তথ্যমতে, প্রতিবছর ১৮ লাখ গাধার চামড়ার বাণিজ্য হয়। তবে চাহিদা ১ কোটির বেশি। এদিকে চীনে গাধার চামড়া রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে উগান্ডা, তানজানিয়া, বতসোয়ানা, নাইজার, বুরকিনা ফাসো, মালি ও সেনেগাল। তাই নিষিদ্ধ না করা আফ্রিকার দেশগুলোই এখন চীনের চাহিদা মেটানোর উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্য ডাংকি স্যাংচুয়ারির মাইক বেকার বলেন, গাধাগুলো সবচেয়ে বড় সংকটের মুখে পড়েছে। বহু গাধা মারা পড়ছে।