‘নেকড়ের ডেরা’ থেকে যুদ্ধ চালাতেন একসময়ের ‘ত্রাস’ !
কলকাতা টাইমস :
হিটলার শুধু একটি নাম নয়, এক সময়ের ত্রাসও বটে। কেননা তার দাপটে এক সময় সারাবিশ্ব কাঁপত থর থর করে। জার্মানিতে তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কথা বললেই কপালে জুটত কঠোর শাস্তি। আর তার গুপ্তচররা ছিলো চৌকস। সারাবিশ্ব ও শত্রুপক্ষের সমস্ত গোপন খবর আনতে ছিলো ওস্তাদ।
অ্যাডলফ হিটলার বিখ্যাত ছিলেন কঠোর শাসন ব্যবস্থার জন্য। নানা অভিযানও চালাতেন তার সেনারা। ১৯৪১ সালে ‘অপারেশন বারবোসা’ নামে সোভিয়েত ইউনিয়ন দখলের জন্য আক্রমণ চালান তিনি। সেই সময় তিনি একটি গোপন ঘাঁটি তৈরি করেন পোল্যান্ডে । লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে গভীর জঙ্গলে একটি হৃদের ধারে উলভ’স লেয়ার নামের একটি আস্তানাও তৈরি করেন।
বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানেই তিনি ছিলেন আটশ ৫০ দিন। উলভ’স লেয়ার বা নেকড়ের ডেরা নামের গোপন ঘাঁটিতেই হামলার যাবতীয় পরিকল্পনা করা হতো। ছয়শ ১৮ একরের জমির উপর অবস্থিত এই গোপন ঘাঁটিতে ছিল শ’দুয়েক বাড়ি, দু’টি সামরিক বিমানঘাঁটি এবং একটি রেলওয়ে স্টেশন। ঘাঁটি সুরক্ষিত রাখার জন্য ওই অঞ্চলের চারপাশে পোঁতা ছিল ল্যান্ডমাইন, যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানোর জন্যও প্রস্তুত থাকত বাহিনী।
এই সদর দপ্তরে বসেই হিটলার তার শীর্ষ অনুচরদের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ ও ইউরোপ থেকে ইহুদিদের নির্মূল করার। তার সঙ্গে এখানে দেখা করত আসতেন বেনিতো মুসোলিনির মতো ব্যক্তিরাও।
১৯৪৫ সালে সোভিয়েতের ‘রেড আর্মি’ এই ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হয়। এই খবর শুনে হিটলার বাহিনী নিজেরাই একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এই ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। হিটলারের এই ভয়ঙ্কর ঘাঁটিই এখনো হাজার হাজার দর্শককে টেনে আনে এই জায়গায়। আজও ভাঙাচোরা বাড়িগুলো দেখার জন্য ভিড় জমান দর্শকরা।
হিটলারের তৈরি ঘাঁটিতে বেশ কিছু বাড়ি প্রায় অক্ষতই আছে। ৮ মিটার পুরু দেওয়াল বহু বোমার আঘাত সহ্য করে আজও দাঁড়িয়ে আছে। যে বাড়িতে হিটলারের উপর আক্রমণ হয়েছিল, সেই বাড়িটির কেবল মেঝেই রয়েছে। অধিকাংশ জায়গাই জঙ্গল গ্রাস করে নিয়েছে। চলার পথের মাঝে কোথাও কোথাও লোহার রডও বেরিয়ে থাকতে দেখা যায়।
তার ওই উলভ’স লেয়ার দেখতে প্রতি বছর প্রায় তিন লাখ মানুষ আসেন। ঘাঁটি দেখতে আসা দর্শকদের কেউ তার শাসনব্যবস্থাকে ‘আদর্শ’ মনে করেন। পর্যটকদের থেকে যথেষ্ট লাভ হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।