পাতের খাবারেও লুকিয়ে বিষ, খবর রাখেন কি
কলকাতা টাইমস :
মুখরোচক যে খাবারগুলো নিয়ে বসেছেন, তা নিশ্চয়ই প্রতিদিনই খান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি কি আসলেই জানেন কি গিলছেন? প্রতিদিনের অতি পরিচিত খাবারগুলোতে আসলে কি রয়েছে তা কি জানেন? এখানে জেনে নিন, আপনি স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে আরো কি কি পেটে পুরছেন।
১. চায়ের সঙ্গে আয়রন : চায়ের পাতা লোহার রোলারের কাটা হয়। আবার লোহার তৈরি চালুনিতে চালা হয়। লোহার গুঁড়া মিশে যায় চায়ের গুঁড়ার সঙ্গে। বেশিরভাগ সময় উৎপাদকরা চুম্বকের মাধ্যমে চা থেকে লৌহচূর্ণ বের করে আনেন। কিন্তু কিছু চূর্ণ থেকেই যায়। ২০১৪ সালে ভারতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশনের এক গবেষণায় বলা হয়, প্রতি কেজি চায়ের মধ্যে ১৫০ মিলিগ্রামের বেশি লোহার গুঁড়া থাকা যাবে না। কাজেই চায়ের সঙ্গে লোহার গুঁড়া খাচ্ছি আমরা। এতে প্রত্যঙ্গে ক্ষতিসহ পাকস্থলীতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন প্রত্যেক নারীর ১৮ মিলিগ্রাম এবং পুরুষের ৮ গ্রাম আয়রন প্রয়োজন।
২. রূপালি পাতায় পশুর নাড়ি-ভুঁড়ি : অনেক সময় মিষ্টির উপরিভাগে দৃষ্টিনন্দন রূপালি রংয়ের পাতার প্রলেপ দেওয়া হয়। আসলে উপরিভাগ ঢেকে দেওয়া হয়। অনেকে পানে দিয়েও খান। এই পাতা ভক্ষণযোগ্য। কিন্তু আপনি জানেন কি, এই ফিনফিনে সিলভার লিভস পশুর নাড়ি-ভুঁড়ি দিয়ে তৈরি দুই আস্তরণের মাঝখানে রেখে পেষা হয়। এই পাতা তৈরি প্রক্রিয়ায় পশুর নাড়ি-ভুঁড়ির পরিবর্তে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছে ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথোরিটি। এ ছাড়া বিষাক্ত অ্যালুমিনিয়ামের প্রভাব থেকে বাঁচতে এতে রূপা ব্যবহারের পরিমাণও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
৩. মুরগির মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক : ভারতের সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইনভাইরনমেন্ট মুরগির মাংসের নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক খুঁজে পায়। ৭০টি নমুনা পরখ করে ১৭ শতাংশের মধ্যে একাধিক ওষুধ পাওয়া যায়। টেট্রাসাইক্লিন এবং সিপ্রোফ্লোক্সাসিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের দেখা মেলে। এগুলো সংক্রমণ, মূত্রথলিতে সংক্রমণ, ডায়রিয়া ইত্যাদির চিকিৎসায় দেওয়া হয়। খাবার থেকে এস ওষুধ গ্রহণের কারণে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) হতে পারে। অনেক সময় এ সমস্যা কোনভাবেই শনাক্ত করা যায় না।
৪. ফলের হরমোন এবং রাসায়নিক পদার্থ : ফল পাকাতে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। এ তথ্য সম্পর্কে অনেকেই সচেতন। বহুল প্রচলিত রাসায়নিক পদার্থটি হলো ক্যালসিয়াম কার্বাইড। আরো থাকতে পারে মারাত্মক আর্সেনিক এবং ফসফরাস। এগুলো ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। শিশুর জন্মের সময় এবং মায়ের বুকে দুধ আনতে ব্যবহৃত হয় মামালিয়ান অক্সিটোসিন হরমোন। মিষ্টিকুমড়া, তরমুজ, বেগুন এবং শসায় ইঞ্জেকশন করে এই হরমোন প্রয়োগ করা হয়। এই উপাদান অতিরিক্ত দেহে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, হৃদযন্ত্রে সমস্যাসহ স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। এটি দেহের অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে।
৫. নীল রংয়ের পানীয় : অনেকেই আকর্ষণীয় নীল রংয়ের নানা পানীয় পান করেন। কিন্তু এই নীল রং আপনার মস্তিষ্ক এবং কিডনি নষ্ট করতে পারে। কৃত্রিম দুই রং ইন্ডিগো কারমাইন এবং ব্রিলিয়ান্ট ব্লুয়ের মিশেলে পানীয়কে রং দেওয়া হয়। ২০১১ সালে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এক শুনানিতে জানায়, এই পানীয় মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। এতে মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
৬. চালের অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড : প্রক্রিয়াজাত চালে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড থাকে। খাবার হজমে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে এই উপাদান। অনেক সময় এতে মারকারি মেলে। এসব চাল প্রক্রিয়াজাতকরণের নিয়ম-নীতি না মেনে প্রস্তুত করা হলে তা বিষাক্ত হয়ে যাবে।
৭. দুধে জল ও চক : সম্প্রতি এক গবেষণায় ভারতের মহারাষ্ট্র ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানান, বাজারে যে দুধ বিক্রি হয় তাতে জল ও চকের গুঁড়া মেশানো হয়। ভারতের বাজারের ২০ শতাংশ দুধে এসব মেশানো হয়। অনেক সময় চক জলে মিশে ক্যালসিয়াম উৎপন্ন করে যা কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে।