১১ দিন জাগার কারণেই বন্ধ হয় যায় এই রেকর্ড
কলকাতা টাইমস :
একটা ব্যাপার হয়তো আমরা অনেকেই জানি না, গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস, কখনই দীর্ঘ সময় না ঘুমিয়ে জেগে থাকার বিষয়টা নিয়ে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গ্রহণ করে না। কারণ হল, এই বিষয়টা খুবই বিপজ্জনক!
একটানা দীর্ঘ সময় জেগে থাকলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। কিন্তু পূর্বে তারা এই বিষয়ে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গ্রহণ করত। তবে তৎকালীন সময়ে সর্বোচ্চ রেকর্ড ধারণকারী যে ধরনের শারীরিক সমস্যার মধ্যে পড়েছিলেন ঠিক সেই কারণেই পরবর্তীতে তারা এই জেগে থাকা নিয়ে রেকর্ড গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয়।
১৯৬৩ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে, ১৭ বছরের রেন্ডি গার্ডনার তার দুই বন্ধু ব্রুস ম্যাকলিস্টারস এবং জোমার কিয়ানোকে সহযোগী হিসেবে নিয়ে একটি সায়েন্স ফেয়ার জেতার উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ সময়ে জেগে থাকার জন্য পরিকল্পনা করেন। কতটা সময় ধরে একটা মানুষ জেগে থাকতে পারে? এই প্রশ্নটা তখন বেশ বিতর্কের একটা বিষয় ছিল। অনেকেই মনে করতেন দীর্ঘ সময়ে জেগে থাকাটা তাৎক্ষণিক মৃত্যুর কারণও হয়ে যেতে পারে।
একটা গবেষণায় কিছু বেড়ালকে টানা ১৫ দিন জাগিয়ে রাখা হয়েছিল এবং বেড়ালগুলোর জন্য এটা মোটেও সুখকর কোনো ব্যাপার ছিল না। কিন্তু ম্যাকলিস্টার জানান, ওই গবেষণাটা খুবই নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেয়, কেননা ওই বেড়ালদেরকে জাগিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হয় তাদের শরীরে। যা কিনা তাদের শরীরের ওপর প্রচুর বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল।
সে যাই হোক, ওই তিন বন্ধু যেকোনো মূল্যেই সেই সায়েন্স ফেয়ারের প্রতিযোগিতা জিততে চেয়েছিলেন এবং তারা সেজন্য নিজেদের জীবনও বাজি রাখতে পিছপা ছিলেন না। তিন বন্ধুর এই ভিন্নধর্মী গবেষণা তখন খুব অল্পসময়ের মধ্যেই সবার নজর কেড়ে নেয়। এটা নিয়ে তখন এতই লেখালেখি হয়েছিল বিভিন্ন পত্রিকায় যে ধারনা করা হয়, বর্তমান সময় পর্যন্ত এটা হলো তৃতীয়তম বিষয় যেটা নিয়ে এত লেখালেখি হয়েছিল। প্রথম দুইটি বিষয় ছিল প্রেসিডেন্ট কেনেডি এর খুন এবং বিটল নামক একটি ব্যান্ডের ঐতিহাসিক ভ্রমণ।
এত জনপ্রিয়তা পাওয়া বিষয়টি তখন ঘুম-গবেষক ডা. উইলিয়াম ডিমেন্টেরও কানে গিয়েছিল এবং তিনি এই তিন বন্ধুকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
সবশেষে রেন্ডি গার্ডনার একটানা ২৬৪৪ ঘণ্টা জেগেছিলেন, যেটা ১১ দিন এবং ২৫ মিনিট সময়। এই পুরো সময়টিতে ডা. ডিমেন্ট এবং রেন্ডির বাকি দুই বন্ধু তার মানসিক অবস্থা পূর্ণপর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন। জেগে থাকার দ্বিতীয় দিন শেষে রেন্ডি গার্ডনার কিছু সমস্যার মুখোমুখি হওয়া শুরু করেছিলেন। যেগুলো হল, কথা জড়িয়ে যাওয়া এবং কোনো কিছুকে স্পর্শ করে সেটা সম্পর্কে ধারণা করতে না পারা। ধীরে ধীরে তার অন্যান্য নার্ভগুলোও প্রভাবিত হতে শুরু করল। যেমন তার ঘ্রাণশক্তি প্রবল ও সংবেদনশীল হয়ে গিয়েছিল। এই সময়ে সে ম্যাকলিস্টারকে বলেছিল ‘আমাকে এইসব বস্তুর ঘ্রাণ নিতে বলো না, আমি এটা আর নিতে পারছি না।’
টানা জেগে থাকার পঞ্চম দিন শেষে তার প্রচুর হ্যালুসিনেশন হচ্ছিল এবং অনেক কিছু ভুলে যেতে শুরু করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন রকম শারীরিক কসরত করে এই দীর্ঘ সময়ে জেগেছিলেন এবং এটা বেশ আশ্চর্যজনক হলেও একসপ্তাহ পর তিনি জখন বাস্কেট বল খেলছিলেন তখন তার খেলার মধ্যে বেশ উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল।
এই গবেষণা শেষে অনেক কিছুই ঘটেছিল। প্রথমত, গার্ডনার এবং তার বন্ধুরা প্রথম পুরস্কার জিতেছিলেন সেই সায়েন্স ফেয়ারে। তার এই সর্বোচ্চ সময়ে জেগে থাকা গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছিল। এবং অবশ্যই এই গবেষণা শেষ করে তিনি অন্তত ঘুমাতে পেরেছিলেন। কিন্তু খারাপ খবর ছিল এই যে, প্রায় বছরখানেক পর গার্ডনার এই গবেষণার জন্য অনুতপ্ত হচ্ছিলেন। ২০০০ সালের দিকে এসে তিনি প্রতিনিয়ত ইনসোমনিয়াতে ভুগছিলেন অর্থাৎ তিনি ঘুমাতে পারতেন না। এটা নির্দিষ্ট করে যদিও বলা যায় না তবে তিনি একদম নিশ্চিত ছিলেন যে, তার তরুণ বয়সের সেই গবেষণার কারণেই আজ তার এই অবস্থা। এই অবস্থায় দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে তিনি মোটামুটি একটা রুটিনের মধ্যে আসতে পারলেও এখনো তিনি ৬ ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারেন না।
তার শারীরিক এই অবস্থার কারণেই পরবর্তীতে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস দীর্ঘ সময়ে জেগে থাকা নিয়ে রেকর্ড গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয়।