September 29, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

মদ নিষিদ্ধ করার ফল হয়েছিল উল্টো !

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

উরোপ বা অন্য অনেক দেশের তুলনায় মদপানের ব্যাপারে আমেরিকার মানুষের মনোভাবও বেশি রক্ষণশীল। গ্যালপ কিন্তু জেনে আশ্চর্য হবেন আমেরিকায় মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল আজ থেকে ঠিক একশো বছর আগে। ১৯২০ হতে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন সংবিধানের ১৮ তম সংশোধনীর মাধ্যমে মদ তৈরি, বিপনন, আমদানি এবং পরিবহন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়। আমেরিকায় এই সময়কাল ‘প্রহিবিশন যুগ’ বলে বর্ণনা করা হয়।

কিন্তু যে উদ্দেশ্যে সরকার এই কাজ করেছিল, কার্যত তার উল্টো ফল হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর অ্যালকোহলের উৎপাদন, বিপনন, বিক্রি পুরোটাই চলে যায় অপরাধী চক্রের হাতে, আর সরকার বঞ্চিত হয় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে।

যার ফলে ১৯৩৩ সালে মাত্র ১৩ বছরের মাথায় এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হয়।

আমেরিকায় মদ নিষিদ্ধ করার সেই উদ্যোগ এভাবেই বিফল হয়। ওই ঘটনার পর আজ পর্যন্ত কোনো প্রধান রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী মদ নিষিদ্ধ করার দাবি আর তোলেনি। আর এরকম একটা ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে মানুষের সমর্থনও একেবারেই নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমেরিকায় মদপানের ব্যাপারটি এখনো বেশ বিতর্কিত।

বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমেরিকায় মদপানের জন্য সর্বনিম্ন বয়সসীমা যথেষ্ট উপরে। ২১ বছরের কমবয়সীরা আইনত মদ পান করতে পারে না, তাদের কাছে অ্যালকোহল বিক্রি নিষিদ্ধ। পোল সম্প্রতি এক সমীক্ষায় চালিয়ে দেখেছে এখনো দেশটির প্রতি পাঁচ জনের একজন মনে করে মদ পান নৈতিকভাবে খারাপ।

তবে ‘প্রহিবিশন যুগে’র ব্যর্থ চেষ্টা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে এখনো কিছু গোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে মদ পান নিষিদ্ধ করার জন্য।জিম হেজেস হচ্ছেন এই দলের কোষাধ্যক্ষ। ‘আমরা এই ধারণা এবং এই ইতিহাসকে জীবন্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি’, বলছেন তিনি। তবে খুব শিগগিরই যে তাদের এই আন্দোলনের পক্ষে বড়সড় জনসমর্থন পাওয়া সম্ভব হবে, সেটা স্বীকার করছেন তিনি।

মেথডিস্ট চার্চের অনুসারীরা এবং আরও কিছু সংগঠন মদ পান নিষিদ্ধ করার আইনের পক্ষে জনমত গঠনে সহায়তা করে।

ডক্টর জুলিয়া গারনেরি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির মার্কিন ইতিহাসের সিনিয়র লেকচারার। তিনি বলেন, আমেরিকায় এই মদ্যপান বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে নারী সমাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে উইমেন্স ক্রিশ্চিয়ান টেম্পারেন্স ইউনিয়ন বা ডাব্লিউসিটিইউ বলে সংগঠনটির।

‘ওরা মনে করত যে লোকজন কাজ করে যে বেতন পায়, সেটা পরিবারের পর্যন্ত আসে না, তার আগেই ওরা পানশালায় মদ খেয়ে সেই টাকা উড়িয়ে দেয়।’

মদ খেয়ে বাড়ি আসা স্বামীর হাতে স্ত্রী এবং সন্তানদের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনাও ছিল সেসময়ের এক বড় সমস্যা।

যুক্তরাষ্ট্রে মদ নিষিদ্ধ করা আর নারীদের ভোটাধিকারের আন্দোলন চলছিল একই সঙ্গে। প্রহিবিশন আইন পাশ হওয়ার কিছুদিন পরই ১৯ তম সংশোধনীও পাশ হয় যাতে মেয়েদের ভোটাধিকারের সুরক্ষা দেওয়া হয়। যে নারীরা সেসময় ভোটাধিকারের পক্ষে আন্দোলন করছিলেন, তারা একই সঙ্গে মদ পান নিষিদ্ধ করারও পক্ষে ছিলেন। কারণ তারা মনে করতেন, নারীদের নির্যাতিত হওয়ার পেছনে পুরুষদের মদের নেশাও ছিল একটি কারণ।

প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ যখন শুরু হলো তখন এই মদ্যপান নিষিদ্ধ করার আন্দোলনটি আরো শক্তিশালী হয়। যারা আন্দোলন করছিলেন তারা যুক্তি দিয়েছিলেন যে উৎপাদিত শস্য মদ তৈরি করার চাইতে বরং যুদ্ধের কাজে লাগানোটাই বেশি দরকার। অন্যদিকে যেসব ভাটিখানায় বিয়ার তৈরি করা হতো, সেগুলোর মালিক ছিল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জার্মান অভিবাসী বা তাদের বংশধররা। কাজেই অ্যালকোল তৈরি বা পান করা, সেটাকে ‘আমেরিকা-বিরোধী’ বলে চিত্রিত করা খুব সহজ ছিল।

কিন্তু মদপান নিষিদ্ধ করার এই উদ্যোগ একেবারেই ব্যর্থ হয়েছিল। কারণ শুরু থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা হচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মানুষ, বিশেষ করে যারা সচ্ছল এবং সুবিধাভোগী, তারা এই আইন একেবারেই মানতো না। এমনকি প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন হার্ডিং নিজেও নাকি হোয়াইট হাউজে প্রকাশ্যে মদ পরিবেশন করতেন।

১৯৩০ সালে ওয়াল স্ট্রীটের শেয়ার বাজারে ধস নামলো, শুরু হলো মহামন্দা। ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েই প্রতিশ্রুতি দিলেন যে তিনি নির্বাচিত হলে মদের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবেন। ১৯৩২ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার এক বছর পরই তিনি তুলে নিলেন এই নিষেধাজ্ঞা। তবে সেই বিফল চেষ্টার শত বছর পরও আমেরিকার কিছু মানুষ এখনো স্বপ্ন দেখেন, কোন একদিন মদ আবার নিষিদ্ধ হবে।

Related Posts

Leave a Reply