জমিদার ঘরের ছেলে হয়ে স্যান্ডউইচ বিক্রি করতেন এই মহাতারকা

কলকাতা টাইমস :
সত্যজিৎ রায় তাঁর সম্বন্ধে বলেছিলেন ‘ দ্য আল্টিমেট মেথড অ্যাক্টর ‘ | অমিতাভ বচ্চন থেকে রাজেশ খান্না | আমির খান থেকে অক্ষয় কুমার | সব তারকার পথপ্রদর্শক তিনি | তিনি মহাতারকা দিলীপ কুমার | ৯৫ পেরিয়েও যিনি এভারগ্রিন প্রশংসকদের চোখে। অনেকেই জানেন না এই সুপারস্টার জন্মেছিলেন সোনার চামচ মুখে করে, জমিদারের বাড়িতে। কিন্তু নিজের যেদ রাখতে সেই রাজকীয় জীবন ছেড়ে পথে নামতেও সময় নেননি। এমনি অনেক স্মৃতি আছে তাকে ঘিরে। জানতে চান তাঁর সম্পর্কে! আজ আপনাকে সেই স্মৃতির জগৎ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি তাহলে।
দিলীপ কুমারের জন্ম পূর্ব পাকিস্তানের পেশোয়ারে‚ আওয়ান উপজাতি পরিবারে | আসল নাম মহম্মদ ইউসুফ খান | তাঁর জমিদার বাবার ছিল ফলের বাগিচা | ফলের ব্যবসা করতেন দেশ বিদেশে | ১৯৩০ সালে তাঁর পরিবার চলে আসে মুম্বই | তার আগেই ইউসুফ পড়াশোনা শুরু করেছিলেন নাসিকের প্রতিষ্ঠানে | শৈশবের বন্ধু ছিলেন রাজ কাপুর |
চারের দশকে ইউসুফ তখন কিশোর | বাবার সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জেরে ছেড়ে দিলেন বাড়ি | পথে পা রাখলেন পুণা যাবেন বলে | ইংরেজি ভাষায় ভাল দখল | যেমন লেখেন‚ তেমন বলেন | আলাপ হল পার্সিয়ান ক্যাফে-মালিকের সঙ্গে | তাঁর এবং এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান দম্পতির সাহায্যে ইউসুফের আলাপ হল ক্যান্টিন কনট্রাক্টরের সঙ্গে | চৌখস ইউসুফ সেনা ক্যাম্পের কাছে শুরু করলেন স্যান্ডউইচের দোকান | কন্ট্রাক্ট শেষ হল যখন‚ ইউসুফের পকেটে নগদ ৫ হাজার টাকা | বাড়ি ফিরলেন তিনি |
১৯৪২ সালে বম্বে টকিজ-এ আলাপ হল দেবিকা রানির সঙ্গে | তাঁর অনুরোধে নাম পাল্টে করলেন দিলীপ কুমার | অগ্রজ হিসেবে পেলেন অশোক কুমার এবং শশধর মুখার্জিকে | তাঁদের পরামর্শে আরও পরিণত হয়ে ওঠেন |
বম্বে টকিজ-এ চিত্রনাট্য লেখা ও পরিমার্জনের কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন প্রথমে | কারণ উর্দু ভাষায় অসামান্য দক্ষতা | নায়কোচিত শরীরী ভাষায় খুব দ্রুত চলে এলেন ক্যামেরার সামনে | ১৯৪৪ সালে প্রথম ছবি জোয়ার ভাটা | বিশেষ নজর কাড়েননি | কয়েকটা অসফল ছবির পরে ১৯৪৭ সালে প্রথম বড় হিট জুগনু | নায়িকা ছিলেন নূরজাহান | তারপর শহিদ‚ মেলা‚ আন্দাজ‚ শবনম—পরপর হিট ছবিতে তৈরি হয়ে যায় সফল নায়কের চলার পথ |
পাঁচের দশকে একের পর এক সফল ছবি যোগান‚ বাবুল‚ তারানা‚ হালচাল‚ দীদার‚ দেবদাস‚ মধুমতী তাঁকে পরিচয় দেয় ‘ ট্র্যাজেডি কিং ‘ হিসেবে | শোনা যায়‚ একটানা একই ধরণের ভূমিকায় অভিনয় করতে করতে তিনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন | ফিরে আসেন নয়া দৌড়‚ ফুটপাথ‚ মুসাফির‚ পয়গম-এর মতো সামাজিক ছবি দিয়ে | এর মাঝেই আজাদ এবং কোহিনূর-এর মতো অন্য স্বাদের ছবি | এই সময়েই প্রথম ভারতীয় নায়ক হিসেবে ১ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পেতে শুরু করেন |
১৯৬০ সালে মুক্তি পায় তাঁর জনপ্রিয় ও সফলতম ছবি মুঘল-এ-আজম | পনেরো বছর ধরে ভারতীয় চলচ্চিত্রে এটাই ছিল হাইয়েস্ট গ্রসিং মুভি | এই রেকর্ড ভাঙে শোলে | পাশাপাশি স্মরণীয় কাজ রাম অউর শ্যাম‚ আদমি এবং সঙ্ঘর্ষ ছবিতে | সাতের দশক থেকে ক্রমশ কমতে থাকে তাঁর সাফল্যের হার | বক্স অফিসে ব্যর্থ হয় বৈরাগ‚ দস্তানা-র মতো ছবি | ১৯৭০ সালে অভিনয় করেন বাংলা ছবি সাগিনা মাহাতো-য় |
বলিউডে ক্রমে রাজেশ খান্না যুগ | ১৯৭৬-১৯৮০ কোনও ছবিতে অভিনয় করেননি দিলীপ কুমার | ১৯৮১ সালে হিট হয় তাঁর কামব্যাক ছবি ক্রান্তি | এই পর্বে তাঁর বিধাতা‚ শক্তি‚ মশাল‚ কর্মা-র মতো ছবিগুলো ও বক্স অফিসে মাঝারি হিট | তাঁর অভিনীত শেষ ছবি কিলা মুক্তি পেয়েছে ১৯৯৮ সালে |
নায়িকা মধুবালার সঙ্গে সাত বছরের প্রেম পর্ব ভেঙে যাওয়ার পরে বিয়ে করেন সায়রা বানুকে | দুজনের বয়সের ব্যবধান ২২ বছর | ১৯৮১ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন তিনি | হায়দ্রাবাদের আসমা সাহিবাকে | সে বিয়ে ভেঙে যায় দু বছর পরেই | ছিলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য এবং মুম্বইয়ের শেরিফ |
ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে সবথেকে বেশিবার পুরস্কৃত হয়েছেন বলে তাঁর নাম স্থান পেয়েছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে | সেরা অভিনেতা হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার পেয়েছেন ৮ বার | পেয়েছেন ফিল্ম ফেয়ার অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার | সম্মানিত হয়েছেন জাতীয় পুরস্কার‚ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার এবং পদ্ম বিভূষণে | ১৯৯৮ সালে পেয়েছেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সম্মান নিশান-এ-ইমতিয়াজ |