চোখে লাগান এক্সরে দিয়ে চামড়া ভেদ করে দেখতে তরুণী
৩০ বছর বয়সি নাতাশা (প্রকৃত নাম নাতালিয়া) ডেমকিনার দাবি, তিনি চাইলেই কোনও মানুষের শরীরের অভ্যন্তরের অবস্থা দেখে নিতে পারেন স্রেফ নিজের দৃষ্টিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে।
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক্স-রে মেশিনের ব্যবহার অতি সাধারণ ব্যাপার। বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে এক্স রশ্মি ব্যবহার করে রোগীর শরীরের অভ্যন্তরের ছবি তোলা হয় এক্স-রে মেশিনে। কিন্তু রাশিয়ায় এমন এক তরুণী রয়েছেন, যাঁর চোখেই রয়েছে এক্স-রে মেশিন। হ্যাঁ, ৩০ বছর বয়সি নাতাশা (প্রকৃত নাম নাতালিয়া) ডেমকিনার দাবি, তিনি চাইলেই কোনও মানুষের শরীরের অভ্যন্তরের অবস্থা দেখে নিতে পারেন স্রেফ নিজের দৃষ্টিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে। অর্থাৎ ঠিক একটি এক্স-রে মেশিনের মতোই চালিত হয় তাঁর দৃষ্টি।
বর্তমানে মস্কোর স্টেট স্টেমাটোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ডাক্তারি পাঠরত নাতাশা জানাচ্ছেন, তাঁর বয়স যখন ১০ বছর, তখনই প্রথম আবিষ্কার করেন নিজের এই অদ্ভুত ক্ষমতা। এক দিন নাতাশার মা তাতিয়ানা দাঁড়িয়ে রয়েছেন নাতাশার সামনে, হঠাৎই ছোট্ট নাতাশার কেমন একটা ঘোর এসে যায়। সে খেয়াল করে, মায়ের শরীরের চামড়া ভেদ করে শরীরের অভ্যন্তরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। গড়গড় করে সমস্ত মায়ের ইন্টার্নাল অর্গ্যানের বিবরণ দিয়ে যেতে থাকে ১০ বছরের মেয়েটি।
তাতিয়ানার মুখ থেকে পাড়া-প্রতিবেশীরা শুনেছিলেন নাতাশার এই অলৌকিক ক্ষমতার কথা। তাঁরা বিষয়টি পরখ করার জন্য ভিড় জমাতে থাকেন নাতাশাদের বাড়িতে। ক্রমশ নাতাশার খবর ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ২০০৩ সালে রাশিয়ার সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন মারফত গোটা দেশ জেনে যায় ‘এক্স-রে গার্ল’ নাতাশার কথা।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ারও নজর পড়ে নাতাশার দিকে। তিনি পাড়ি দেন ব্রিটেন। বিভিন্ন টেলিভিশন শো-এ নিয়ে যাওয়া হয় নাতাশাকে। সকলেই যাচাই করে নিতে চায়, নিজের অলৌকিক ক্ষমতা সম্পর্কে নাতাশার দাবি কতটা সত্যি। ক্যামেরার সামনে বার বার পরীক্ষা দিতে হয় তাঁকে। প্রায় সমস্ত পরীক্ষাই নির্বিঘ্নে উতরে যান নাতাশা। একটি টেলি-শো-এ গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত এক মহিলার দিকে তাকিয়েই নাতাশা বলে দেন, মহিলার শরীরের কোন কোন হাড় ভেঙেছে এবং শরীরের ভিতরে কোথায় কোথায় বিঁধে রয়েছে ধাতব পিন।
ব্রিটেন-সফর শেষ হওয়ার পরে আমেরিকায় উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নাতাশাকে। সেখানেও নিজের ক্ষমতার পরীক্ষা দেন নাতাশা।
কিন্তু নাতাশার এই অলৌকিক অত্যদ্ভুত ক্ষমতার ব্যাখ্যা কী? কী ভাবে এক জন মানুষ দেখতে পান চামড়া-মাংসের আস্তরণ ভেদ করে অন্য মানুষের শরীরের ভিতরে? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর নেই খোদ নাতাশার কাছেও। বিজ্ঞানীরাও তাঁকে পরীক্ষা করে তাঁর শরীরে আর পাঁচটা মানুষের চেয়ে অতিরিক্ত ক্ষমতার কোনও লক্ষণ পাননি। তবে কি নাতাশা যা দাবি করছেন সবটাই মিথ্যে, তাঁর মনগড়া? তা-ই বা হয় কী করে? কারণ বহু মানুষের দিকে তাকিয়ে নির্ভুল ভাবেই তো তিনি বলে দিয়েছেন তাঁদের শরীরের আভ্যন্তরীণ অবস্থা।
তবে ব্যর্থও যে নাতাশা হননি, তা নয়। আর সেই সমস্ত বিষয়কে কেন্দ্র করেই দানা বেঁধেছে বিতর্ক। ব্রিটেন-সফরের সময়ে টেলি-ফিজিশিয়ান ক্রিস স্টিলের দিকে তাকিয়ে নাতাশা বলেছিলেন, ক্রিসের কিডনিতে পাথর জমেছে, এবং তাঁর বর্ধিত লিভারের সমস্যা রয়েছে। পরে ডাক্তারি পরীক্ষায় জানা যায়, ক্রিস সম্পূর্ণ সুস্থ। আমেরিকায় করা নাতাশার কিছু ডায়েগনোসিসও পরবর্তী কালে ভুল বলে প্রমাণিত হয়। ফলে অনেকেই ধরে নেন, নাতাশা যা কিছু বলছেন, তার সবটাই ভাঁওতাবাজি। নাতাশা অবশ্য দাবি করেন, তাঁর যে সমস্ত ডায়গনোসিস ভুল বলে মনে করা হচ্ছে, সেগুলির ক্ষেত্রে তিনি রোগীকে পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাননি।
এই সমস্ত বিতর্ক নাতাশার খ্যাতিতে কলঙ্কের দাগ বসাতে পারেনি। তিনি মস্কোয় চালাচ্ছেন, ‘সেন্টার অফ স্পেশাল ডায়গোনিস্টিকস অফ নাতালিয়া ডেমনিকা’। সেখানে তিনি এবং তাঁর মতো অন্যান্য অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষদের দ্বারা রোগীদের পরীক্ষা ও চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয়। সেই চিকিৎসা কেন্দ্রের উপর কিন্তু যথেষ্ট আস্থা রয়েছে সাধারণ মানুষের। প্রতি দিন বহু মানুষ নাতাশার দ্বারস্থ হচ্ছেন, শরীরের আভ্যন্তরীণ অবস্থা নির্ভুল ভাবে জানার জন্য। এক্স-রে গার্লও সাধ্যমতো রোগীদের সুস্থ করে তোলার জন্যে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন।