চুল নিয়েও রয়েছে যত কুসংস্কার
কলকাতা টাইমস :
মাথায় চুল না থাকার যেমন যন্ত্রণা, তেমনি থাকার যন্ত্রণাও আছে! যন্ত্রণা মানে চুল ঠিকঠাক সামলানোর কথা বলছি। আপনার মাথাভর্তি চুল, অথচ সেগুলো আপনার চেহারা বা ব্যক্তিত্বের সাথে মানাচ্ছে না তখন তা যন্ত্রণাদায়কই হয় বটে! কারণ চুল আমাদের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের চাবিকাঠির মধ্যে অন্যতম একটি। গ্রীক মিথলজিতে পাওয়া যায় মেডুসার কথা। যে দেখতে ছিল অসাধারণ সুন্দরী, কিন্তু তার মাথায় চুলের বদলে ছিল সাপ! মেডুসার চোখের দিকে তাকালে মানুষ পাথর হয়ে যেত। চুল নিয়ে বেশ কিছু কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে আজও। যেমন –
শক্ত করে চুল বাঁধলে চুল তাড়াতাড়ি বড় হয়। অথবা ঘন ঘন চুল কামিয়ে ফেললে চুল ঘন ও কালো হয়ে গজায়। এটাও বলা হয় যে, নিজের জন্মবারে চুল কাটতে হয় না। এতে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা তার আয়ু কমে যায়। পুরাণে চুল শক্তির প্রতীক। বিশেষ করে মনে করা যাক বাইবেল-এর বীর স্যামসন অগাস্টিনজের কথা। চুলের মধ্যে তার শক্তি ছিল এটা জানার পর প্রতিপক্ষ তার চুল কেটে দিয়েছিল।
আগেকার দিনের সন্তরা সভ্যতা থেকে দূরে থাকার জন্যেই চুল দীর্ঘ করতেন বলে মনে করা হয়। জার্মান সংস্কৃতিতে দীর্ঘ চুল স্বাধীন লোকজনই রাখতে পারত। দাসদের চুল থাকত খাটো। বিভিন্ন ছবিতে শয়তানের মাথায় চুলের বদলে সাপ দেখা যায়। লাল চুলকেও শয়তানের চিহ্ন বলে বিবেচনা করা হয়। আধুনিক কালে দীর্ঘ চুল প্রচলিত নিয়মনীতির প্রতি অবজ্ঞাসূচক বা বিদ্রোহ। অনেক উপকথায় দীর্ঘ চুল কুমারীত্বের প্রতীক।
এক্ষেত্রে রূপাঞ্জেলের কথা বলা যায় উদাহরণস্বরূপ। অনেক জাদু প্রক্রিয়াতেও চুলের ব্যবহার দেখা যায়। অন্য কারো চুল নিয়ে নিজের মনের বাসনার কথা বলে মন্ত্র পড়ে তাতে গিঁট দিলে সে বাসনা পূর্ণ হবে- এমনটা বিশ্বাস করাতে চান জাদুকররা। উনিশ শতকে প্রিয়জনদের চুল লকেটে পুরে রাখার চল ছিল ব্যাপকভাবে। সোজা বা স্ট্রেইট চুলের আবেদন কখনই কমে না। সোজা, সিল্কি চুল না থাকায় অনেককেই দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখা যায়। সোজা চুল শান্ত ব্যক্তিত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
হিন্দু পুরাণে রামের স্ত্রী সীতা, যিনি লাঙলের ফলা থেকে জন্মগ্রহণ করেন, তার চুল ছিল সোজা। অন্যদিকে মহাভারতের দ্রৌপদীর জন্ম গ্রহণ করেন যজ্ঞের আগুন থেকে, যার চুল ছিল কোঁকড়া। কোঁকড়া চুল তেজস্বীতার প্রতীক। তবে কোথাও কোথাও কোঁকড়া চুলের মেয়েদের কুলক্ষণা হিসেবে ধরা হয় চুল নিয়ে যত চুলচেরা বিশ্লেষণই থাকুক না কেন, সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে চুলের অবদান অনস্বীকার্য। তাই চুলের নিয়মিত পরিচর্যা করা আবশ্যক।