পকেটে টাকা আছে, নেই শুধু শান্তি’ তাই এরা ম্যাকরেফিউজি
কলকাতা টাইমসঃ
ম্যাকরেফিউজি। শব্দটা হংকংয়ে বহুল প্রচলিত। ম্যাকডোনাল্ডস আউটলেটেই ঘুমাতে যান বলেই এরাম্যাকরেফিউজি । বেশ কয়েক বছর ধরেই হংকংয়ে ২৪ ঘণ্টা ম্যাকডোনাল্ডস আউটলেটগুলিতে সবাই ঘুমোতে যাচ্ছে। রাত কাটাচ্ছে দিব্যি। টেবিলেই।
কেন বাড়ি ছেড়ে ম্যাকডোনাল্ডস-এ রাত কাটাতে হচ্ছে তরুণ থেকে বৃদ্ধ- সবাইকে? বলবেন ম্যাকডোনাল্ডস-এর খাবারের লোভ। একটু ভুল, লোভ একটা আছে, তবে সেটা খাবারের নয়। স্রেফ শারীরিক ক্লান্তি ও শান্তির জন্য। এক কথায় বলতে গেলে, শান্তির সুলুকসন্ধান। রাতভর তাই ম্যাকডোনাল্ডস-এই বসবাস।
সম্প্রতি একটি সংস্থা এই অদ্ভূত আচরণের কারণ খুঁজতে একটি সমীক্ষা চালায়। সংস্থার সমীক্ষায় দেখা যায়, জুন থেকে জুলাইয়ের মধ্যে শহরের ৩৩৪ জন পুরুষ ও মহিলা ম্যাকডোনাল্ডস-এ রাত কাটিয়েছেন। কিন্তু হংকংয়ে ১১০টি ম্যাকডোনাল্ডস আউটলেটে যাঁরা রাত কাটাচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু বেশির ভাগই হোমলেস নন। বাড়িঘর আছে। প্রত্যেকেই আয় করেন।
সমস্যা হল, আর্থিক। আর্থসামাজিক পরিস্থিতি। ম্যাকডোনাল্ডস-এ রাতা কাটানো ৭০ শতাংশ মানুষ জানাচ্ছেন, তাঁরা খরচ সামাল দিতে পারছেন না। বাড়ি থাকলেও বাড়ি ভাড়া দেওয়ার মতো টাকা থাকে না। কেউ বিদ্যুতের বিল দিতে গিয়ে নাজেহাল। কারও সমস্যা গরম। এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহারের ক্ষমতা নেই। হয়তো এমন একটি ছোট ফ্ল্যাটে থাকেন, যেখানে জানালা প্রায় নেই। দমবন্ধকর পরিস্থিতি। সঙ্গে পারিবারিক অশান্তি তো রয়েইছে। তাই ভ্যাপসা গরম থেকে বাঁচতে ম্যাকডোনাল্ডস-এর ঠাণ্ডা ঘরে বসে থেকে শরীর জুড়োচ্ছেন। ম্যাকডোনাল্ডস-এ এসি ছাড়াও কম পয়সায় কিছু খেয়েই পেয়ে যাচ্ছেন ফ্রি ওয়াইফাই, বাথরুম।
আর্থসামাজিক সমস্যায় যে শহরগুলি ধুঁকছে, তার মধ্যে অন্যতম হল হংকং। শহরটিতে প্রতি বর্গফুট ঘরের দাম বর্তমানে গড়ে ১ হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় দেড় লাখ টাকা।
৫৫ বছরের এক মহিলা জানাচ্ছেন, তিনি বাড়ি ফেরেন না, কারণ তাঁর স্বামী অত্যাচার করেন। আরেক বৃদ্ধার কথায়, ‘আমার সন্তান নেই। স্বামী মারা গিয়েছে। বাড়িতে বড় একা লাগে। ভয় লাগে।’ হাং নামে ম্যাকডোনাল্ডস কর্মীর কথায়, ‘আমরা দেখছি, বেশির ভাগ মানুষেরই পকেটে টাকা আছে। নেই শুধু আত্মার শান্তি।’