ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে এই ৮টি ইতিহাস অবাক করবে
কলকাতা টাইমস :
ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। তাকে আপনি পছন্দ করুন আর নাই করুন, এটাই সত্যি যে এই রিপাবলিকান ওভাল অফিসে বসার সাথে সাথেই অনেকগুলো ইতিহাসের মালিক হয়ে গেছেন।
হোয়াইট হাউজে এবার অনেক কিছুই ‘প্রথমবারের’ মত হচ্ছে, যা বিশ্ব দেখেনি আগে। যেমন:
১. সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট: ইতিমধ্যে ৭১তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর মানে দাঁড়াচ্ছে তিনিই আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়া সবচাইতে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। এর আগের রেকর্ডটি ছিল রোনাল্ড রিগ্যানের।
১৯৮১ সালে তিনি ৬৯ বছর বয়সে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিলেন রিগ্যান। বয়স নিয়ে কথা উঠতে পারে ভেবেই হয়তো ডাক্তারকে দিয়ে একটি চিঠি লিখিয়ে নিয়েছিলেন ট্রাম্প, যেখানে ড. হ্যারল্ড বর্নস্টেইন তাকে বর্ণনা করেছেন, ‘আমেরিকায় এ যাবৎ জয়লাভ করা সবচাইতে স্বাস্থ্যবান প্রেসিডেন্ট’।
দেশটিতে এর আগে দায়িত্ব পালন করা ৪৪ জন প্রেসিডেন্টর বয়সের গড় ছিল ৫৫। সবচাইতে কম বয়স্ক প্রেসিডেন্ট ছিলেন থিওডোর রুজভেল্ট। যখন তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন, তখন তার বয়স ৪৩ হতে কয়েকদিন বাকী।
২. প্রথম বিলিওনেয়ার: ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রথম শত-কোটিপতি প্রেসিডেন্ট। ফোর্বসের হিসেবে তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ৩শ ৭০ কোটি ডলারের বেশী। এর আগে আমেরিকার অনেক ধনী প্রেসিডেন্টই এসেছেন।
আজকের ডলারের হিসেবে প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ডলারের মত। শত-কোটিপতি বলেই হয়তো মাত্র ১ ডলার মাসিক বেতন গ্রহণ করে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
৩. ধনী মন্ত্রীসভা: ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন একে একে তার মন্ত্রীসভার সদস্যদের নাম প্রকাশ করতে শুরু করেন তখন তাদের ‘মোটা মানিব্যাগ’ অত্যন্ত দ্রুততার সাথেই ডেমোক্রেটদের ঘৃণা আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
ভাল হোক আর খারাপ হোক, আধুনিক আমেরিকার ইতিহাসে এটাই হতে যাচ্ছে সবচাইতে সম্পদশালী প্রশাসন। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত উইলবার রসের নিজেরই আড়াইশো কোটি ডলারের সম্পদ হচ্ছে।
তার একার সম্পদই ২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের পুরো মন্ত্রীসভার সদস্যদের মোট সম্পদের চাইতেও দশ গুন বেশী। অথচ সেসময় প্রেসিডেন্ট বুশের মন্ত্রীসভায় ‘কোটিপতিদের সমাবেশ’ বলে বর্ণনা করা হয়েছিল গণমাধ্যমে।
এক হিসেবে জানা যাচ্ছে, ট্রাম্পের মন্ত্রীসভায় যারা থাকবেন তাদের সকলের মিলিত সম্পদের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলারের বেশী হবে।
৪. রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব: আমেরিকায় গত ষাট বছরের ইতিহাসে এমন একজন প্রেসিডেন্টও নির্বাচিত হননি যাদের অন্তত রাজ্য গভর্নর কিংবা কংগ্রেস সদস্য হিসেবে অভিজ্ঞতা নেই। সেই হিসেবে ট্রাম্পের এবারের বিজয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর আগে তার এ ধরণের কোন অভিজ্ঞতা নেই।
এর আগে সর্বশেষ অভিজ্ঞতাবিহীন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোয়াইট আইসেনআওয়ার। তিনিও ১৯৫৩ সালে নির্বাচিত হবার আগে ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অ্যালাইড ফোর্সের সুপ্রিম কমান্ডার।
১৯২৯ থেকে ১৯৩৩ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা হার্বার্ট হুভার ছিলেন একজন প্রকৌশলী এবং মানবতাবাদী। কিন্তু ট্রাম্প বলছেন, ওয়াশিংটনের প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে তার পূর্বের যোগাযোগ না থাকাটাকে তিনি একটি ‘সম্পদ’ মনে করেন, ‘ত্রুটি’ নয়।
৫. ক্ষমতাধর সন্তান: জামাই জ্যারেড কুশনারকে ট্রাম্প তার সিনিয়র উপদেষ্টা ঘোষণা করার পর বিরোধী শিবিরে স্বজনপ্রীতি বলে রব উঠেছে। কিন্তু অনেকে বলছেন, এই মনোনয়ন মাধ্যমে ৩৬ বছর বয়সী কুশনার মার্কিন ইতিহাসের সবচাইতে ক্ষমতাধর জামাইতে পরিণত হয়েছেন।
তবে তিনিই কিন্তু প্রথম নন, প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের মেয়ে ইলিয়ানরকে বিয়ে করেছিলেন তারই ট্রেজারি মন্ত্রী উইলিয়াম গিবস ম্যাকাডু। কিন্তু এই ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৬৭ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র স্বজনপ্রীতি-বিরোধী নীতি গ্রহণ করেনি।
তাছাড়া, ম্যাকাডু প্রেসিডেন্টের মেয়েকে বিয়ে করার আগে থেকেই তার মন্ত্রী ছিলেন। এদিকে ট্রাম্পের বড় মেয়ে এবং কুশনারের স্ত্রী ইভাঙ্কাকেও বলা হচ্ছে আমেরিকার ইতিহাসের সবচাইতে প্রভাবশালী ‘ফার্স্ট ডটার’ হিসেবে।
৬. পোষা প্রাণী কই? ডোনাল্ড ট্রাম্পের এত প্রাচুর্যের মধ্যেও একটি জিনিসের অভাব হয়তো আপনার নজরে পড়বে, তার কোন পোষা প্রাণী নেই। এড় অর্থ দাঁড়াচ্ছে, গত এক শতাব্দীরও বেশী সময়ের ইতিহাসে ট্রাম্পই হতে যাচ্ছেন প্রথম প্রেসিডেন্ট, হোয়াইট হাউজে যার কোন পোষা প্রাণী থাকবে না।
প্রেসিডেনশিয়ল পেট মিউজিয়াম জানাচ্ছেন, প্রায় প্রত্যেক প্রেসিডেন্টেরই পোষা প্রাণী ছিল। জন এফ কেনেডির পোষা প্রাণীর সংগ্রহকে চিড়িয়াখানার সাথে তুলনা করা যেত।
৭. মুক্ত বাণিজ্যের বিরোধীতা: ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য মুক্ত বাণিজ্যের কারণেই আমেরিকানদের আজ কাজ নেই। তার এই শ্লোগান ভোটারদের মধ্যে অনেকটা জাদুমন্ত্রের মত কাজ করেছে বলে মনে করেন অনেকে।
কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য এটা একটা বিরল অবস্থান। এর আগে ১৯৩০ এর দশকে রিপাবলিকান হার্বার্ট হুবার এমন অবস্থান নিয়েছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প ইকনমিস্টকে বলেছেন, চীন ‘আমাদের মেরে ফেলছে’। তিনি এও বলেছেন, চীনাদের ‘খেলা বন্ধ করবার জন্য’ তিনি ১২% পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করতে প্রস্তুত আছেন।
৮. ফার্স্ট লেডি’র প্রথম: স্বামীর মত অনেক কিছুতেই প্রথম প্রাক্তন মডেল মেলানিয়া ট্রাম্পও। স্লোভেনিয়া থেকে আসা প্রথম ফার্স্ট লেডি তিনি।
প্রকৃতপক্ষে তার আগে আমেরিকায় জন্ম না নেওয়া একজন মহিলাই ‘ফ্লোটাস’ (ফার্স্ট লেডি অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস) হতে পেরেছেন, তিনি ষষ্ঠ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি অ্যাডামসের স্ত্রী লুইসা অ্যাডামস।
লন্ডনে জন্ম নেওয়া মিসেস অ্যাডামস ফ্লোটাস ছিলেন ১৮২৫ থেকে ১৮২৯ সাল পর্যন্ত। প্রেসিডেন্টে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে প্রথম হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা হতে যাচ্ছেন মেলানিয়া ট্রাম্প। এর আগে একজন প্রেসিডেন্টেরই প্রথম স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়েছিল, তিনি রোনাল্ড রিগ্যান।
তিনি অবশ্য অভিনেত্রী স্ত্রী জেন ওয়াইম্যানের থেকে আলাদা হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট হবার বহু আগে। স্লোভেনিয়ান, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ও সার্বিয়ান ভাষায় কথা বলতে পারেন মিসেস ট্রাম্প। সম্ভবত বহু ভাষায় দক্ষ প্রথম ফ্লোটাস তিনি।
তিনিই প্রথম কোন প্রেসিডেন্টের স্ত্রী যার নিরাভরণ শরীরের ছবি ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। ট্রাম্প অবশ্য নিজেও একবার প্লেবয় ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হয়েছিলেন, সেটা ১৯৯০ সালের কথা।