এই উৎসবগুলিকে পাগলামো বলাও ভুল
দেশভেদে প্রতিটি স্থানেই এমন কিছু উৎসব থাকে যেগুলো বছরের পর বছর ধরে পালন করা হচ্ছে। এসব উৎসবে মিশে থাকে বিশ্বাস, ঐতিহ্য, ভালোবাসা আর খানিকটা পাগলামিও। ব্রিটিশরাও এই তালিকার বাইরে নয়। চলুন, আজ দেখে আসি ব্রিটিশ কিছু পাগলামিতে ভরপুর অসাধারণ উৎসবের কথা।
স্টোনহেঞ্জের সামার সলস্টিস-
স্টোনহেঞ্জ চেনে না এমন খুব কম মানুষ আছে। অদ্ভুত সুন্দর এই স্থানটিতে পর্যটকদের যাওয়ার নিয়ম নেই। তবে হ্যাঁ, সামার সলস্টিসের সময় স্টোনহেঞ্জের কাছে যেতে পারে যে কেউ। এইসময় সূর্য ধীরে ধীরে আকাশে ওঠে এবং একটা সময় স্টোনহেঞ্জের পুরনো পাথরগুলোর ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো গিয়ে পড়ে সেখানে আসা পর্যটকদের ওপরে।
কবে থেকে এই উৎসব শুরু হয়েছে তা জানা নেই। অনেকে অনেক রকম গল্প বলে থাকলেও সেগুলোর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে কেবল গায়ে সূর্যের আলো মাখতেই এখানে এই উৎসব চলে প্রতি বছর।
অটারি সেন্ট মেরির টার ব্যারেল উৎসব-
এমনিতে ডেভনের অটারি সেন্ট মেরি অসম্ভব চুপচাপ আর শান্ত একটি স্থান। তবে সেটি কেবল বছরের বাকি দিনগুলোতেই। প্রতি বছর ৫ নভেম্বর এই স্থানে সমস্ত মানুষ যেন পাগল হয়ে যায়। মহিলা ও পুরুষ সবাই মিলে আগুনসহ ব্যারেল নিয়ে রাস্তা প্রদক্ষিণ করতে থাকে। ব্যারেলগুলো প্রচন্ড গরম থাকায় সেটি যারা তুলে নিয়ে যায়, তাদের হাতে গ্লাভস পড়া থাকে।
তবে কেবল গ্লাভস নয়, এই প্রচন্ড গরম সহ্য করতে সাহসেরও দরকার পড়ে। মূলত, বংশানুক্রমিকভাবে এই ধারা চলে আসছে। প্রতিটি পরিবারই ব্যারেল বহন করার চেষ্টা করে। কেন এবং কবে থেকে এই উৎসবের শুরু হয়েছে জানা নেই। অনেকে ভাবেন, শয়তান তাড়ানোর উপায় হিসেবে এই পথ অবলম্বন করতো মানুষ।
ডিম ভাঙার উৎসব-
কথিত আছে যে, ইংলিশ গ্রাম সোয়াটনের এই ডিম ভাঙার উৎসব চলে আসছে ১৪ শতক থেকে। একটা সময় মানুষকে চার্চে বেশি করে নিয়ে আসার জন্য চার্চ থেকে ডিম বিনামূল্যে দেওয়া হতো। মানুষও ডিম নেওয়ার জন্য চলে আসতো চার্চে।
১৩২২ সালে একবার প্রচুর বন্যা হওয়ায় মানুষ চার্চে আসলো না ডিম নিতে। ডিমগুলো তখন চার্চ থেকে বাইরে ছুড়ে ফেলা হয়। সেই শুরু! এরপর থেকে এই প্রথাকে মেনে চলে প্রতিবছর ডিম ছুঁড়ে ফেলার নিয়ম শুরু করা হয়। ২০০৫ সালে সোয়াটন গ্রামে প্রথম ডিম ছোঁড়ার বিশ্ব প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ডিম না ভেঙ্গেই কত দূরে ছুঁড়ে ফেলা যায়— এর ওপরে নির্ভর করে জয়।
ঘড়ি পোড়ানোর উৎসব-
সমুদ্রের পাশের শহর ব্রাইটন। বছরের সবচাইতে ছোট্ট দিনটি এখানে পালন করা হয় ঘড়ি পোড়ানোর মাধ্যমে। এই দিনে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ ঘড়ির মতো দেখতে ফানুস নিয়ে পথে নামে। অনেকের মতে ক্রিসমাস পালনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক বাড়াবাড়িকে একটু হলেও বিরোধিতা করে এই ঘড়ি পোড়ানোর উৎসব।
অ্যাবোট ব্রোমলি হর্ন ড্যান্স-
১২২৬ সাল থেকে এই প্রথা চলে আসছে ব্রিটিশদের মধ্যে। একে ব্রিটিশ উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম পুরনো একটি উৎসব বলে মনে করা হয়। এই উৎসবে একটি দলে মোট ৬ টি হরিণের শিংসহ মানুষ, দুইজন বাদক, মহিলার পোশাকে একজন পুরুষ, একজন তীরন্দাজ এবং আশেপাশে আসা মানুষদেরকে টোকা মারা এক হাস্যকর ব্যক্তি থাকেন।
কেন এমন একটি উৎসব পালন করা হয় সেটা অনেকেই জানেন না। অনেকে মনে করেন পুরোটা বছর যেন শিকারকাজ অনেক ভালোভাবে করা সম্ভব হয় সেটি নিশ্চিত করতেই এই উৎসব পালন করা হয়।
ম্যাডন মাড রেস-
এসেক্সের ব্ল্যাকওয়াটার নদীতে ভাঁটা থাকাকালীন সময় এই দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ সালের কথা। কুইন্স হেড পাবের মালিককে নদীর পাশে টাক্সেডো পরিধান করে খাবার পরিবেশন করার চ্যালেঞ্জ করা হয়। তিনি সেটা করেন। আর তারপর থেকে এখানে প্রতিবছর এই উৎসব হয়।
সত্যি, কী অদ্ভুত সব উৎসব! তাই না বলুন?