November 12, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা

করোনা থেকে বাঁচার প্রথম উপায় বলেই পাগল হয়ে মরতে হয়েছিল এই ডাক্তারকে!

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

নোভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে বাঁচার প্রথম উপায় হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে হাত ধোয়াকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও প্রতিটি মানুষকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার উপর জোর দিতে বলেছে। এখন মানুষ সেটা করছেনও নিয়মিত।

অথচ পৃথিবীর ইতিহাসে ভাইরাস থেকে বাঁচতে প্রথম যে ডাক্তার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার কথা বলেছিলেন তাঁকে অন্য ডাক্তাররা তাঁকে পাগলা গারদে পাঠিয়েছিলেন, সেখানে তাকে প্রায় খুন করা হয়েছিল।

জল ও সাবানই ভাইরাস সংক্রমণ আটকানোর মোক্ষম অস্ত্র। কিন্তু উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জীবাণু ছড়ানোর বিষয়টি এতোটা জানা ছিল না। সে সময় হাত ধোয়ার প্রচলনটা ছিলো কদাচিৎ। টয়লেট থেকে এসে, খাবার আগে, কোনো নোংরা জিনিস ধরার পরে, এমনকি কোনো ক্লিনিক্যাল প্রসিডিউর কিংবা অপারেশনের আগে ডাক্তাররাও হাত ধুতেন না।

হাঙ্গেরিয়ান চিকিৎসক ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ প্রথম এ বিষয়ে ভাবতে শুরু করেন। এই ডাক্তার পিউপেরাল ফিভার, যেটা চাইন্ড বেড ফিভার নামে পরিচিত ছিলো, সেটা নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। ১৮৪৬ সালে তিনি একজন ফিজিশিয়ানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পিউপেরাল সেপসিস এর মধ্যে কানেকশন খোঁজার চেষ্টা করেন।

১৮৪০-এ স্যামেলওয়াইজ যখন অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা সাধারণ হাসপাতালে কাজ করছেন, সে সময়ে বহু মহিলা বাড়িতে প্রসব করতেন। যারা হতদরিদ্র ছিলেন বা যাদের শারীরিক জটিলতা ছিল, তারাই হাসপাতালে প্রসব করতেন। হাসপাতালে প্রসবের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ ভয় পেতেন, তার অন্যতম কারণ ছিল, ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে হাসপাতালে সূতিকা জ্বরে প্রসূতির মৃত্যু হতো। তখন অনেকেই মনে করতেন, বাতাস চলাচলের অভাব ও ভিড়ের কারণেই এভাবে মৃত্যু ঘটে।

ভিয়েনা হাসপাতালে দুটি পৃথক প্রসূতিবিভাগ ছিল। প্রথমটিতে থাকতেন পুরুষ চিকিৎসকরা, দ্বিতীয়টিকে থাকতেন মহিলা চিকিৎসকরা। ডা. স্যামেলওয়াইজ দেখলেন, পুরুষ ডাক্তাররা যে বিভাগে কাজ করেন, সেখানে সূতিকাজ্বরে মহিলাদের মৃত্যুর হার দু থেকে তিনগুণ বেশি।

ডা. স্যামেলওয়াইজ সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন, যেসব ডাক্তাররা ডিসেক্টিং রুম থেকে সরাসরি প্রসূতিবিভাগে আসেন, তারা সূতিকা জ্বরে মৃত নারীদের থেকে ভয়ংকর পার্টিকল নিয়ে আসেন, তা থেকেই সুস্থ নারীরা সংক্রমিত হন এবং তাদের অপমৃত্যু ঘটে।

১৮৪৭ সালে স্যামেলওয়াইজ পুরুষ ডাক্তারদের নির্দেশ দেন প্রসূতি বিভাগে স্বাস্থ্যবতী মায়েদের পরীক্ষা করবার আগে হাত ধুতে হবে এবং তাদের ইনস্ট্রুমেন্টগুলি ক্লোরিনেটেড লাইম দিয়ে ধুতে হবে।

এর ফল হল অবিশ্বাস্য। ওই বিভাগে মৃত্যু হার ১৮.২৭ শতাংশ থেকে নেমে এল ১.২৭ শতাংশে। শুধু তাই নয়, ১৮৪৮-এর মার্চ থেকে অগাস্টের মধ্যে একজন নারীরও মৃত্যু হল না।

স্যামেলওয়াইজ এরপর হাত ধোয়ার উপকারিতা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। তিনি এই নতুন পদ্ধতি সে সময়ের অনুমোদিত চিকিৎসাজ্ঞানের কাছে নিয়ে গেলেন। কিন্তু তাঁর সহকারীরা তাঁর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করলেন, কারণ তাদের মনে হলো ডা. স্যামেলওয়াইজ তত্ত্ব বলতে চায় তারাই, অর্থাৎ চিকিৎসকরাই রোগীর মৃত্যুর জন্য দায়ী। ভিয়েনা হাসপাতালে মৃত্যুহার কমলেও, হাসপাতালও হাত ধোয়ার তত্ত্ব প্রত্যাখ্যান করল।

উদ্বিগ্ন স্যামেলওয়াইজ খোলা চিঠি লিখলেন চিকিৎসকদের কাছে। হাঙ্গেরিতে ফিরে ১৮৬১ সালে নিজের কাজ প্রকাশ করলেন, কিন্তু কোনও লাভ হল না। তখনও জীবাণু তত্ত্ব সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সায়েন্টিফিক সোসাইটির লোকজন তখনও বিশ্বাস করতো রোগ বালাই হয় খারাপ আত্মার মাধ্যমে।

স্যামেলওয়াইজ মরিয়া হয়ে সকল গাইনি এন্ড অবসের ডাক্তারদের চিঠি লিখতে শুরু করেছিলেন যেন তারা হাত ধুয়ে, ইনস্ট্রুমেন্টস ধুয়ে কাজ করেন। এতে জীবন বাঁচবে।

হাত ধোয়ার কথা বলার কারণে তখনকার সব চিকিৎসকেরা তাঁকে ‘পাগল’ বলে আখ্যা দেন। আস্তে আস্তে তিনিও ডিপ্রেশনে পড়তে লাগলেন। সবাই তাকে পাগল মনে করছিল। ১৮৬৫ সালে নার্ভাস ব্রেকডাউনের পর স্যামেলওয়াইজকে দেওয়া হলো ‘মেন্টাল এসাইলামে’। কেউ বললো তাঁর ‘নিউরো সিফিলিস’ হয়েছে, কেউ বললো ‘বদ আত্মা’ ভর করেছে।

মাত্র ১৪ দিন পর, মেন্টাল এসাইলামের গার্ডরা তাঁকে প্রচন্ড পেটালো। পেটানোর ফলে তাঁর হাতে-শরীরে ক্ষত থেকে পচন ধরে। সেখান থেকে তাঁর ডান হাতে গ্যানগ্রিন হয়। রক্তের বিষক্রিয়া হয়ে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে ১৩ আগস্ট, ১৮৬৫ সালে মারা যান এই যুগান্ত সৃষ্টিকারী চিকিৎসক।ইগনাজ স্যামেলওয়াইজের কাজ লুই পাস্তুরের জীবাণু তত্ত্বের অন্যতম ভিত্তি।

অথচ মহান এই মানুষটি মৃত্যুর পর দুই থেকে তিনজন তার শেষকৃত্যে আসেন। তাঁর মৃত্যুর কথা ‘হাংগেরিয়ান মেডিক্যাল সোসাইটি’ প্রকাশও করেনি তাদের পেপারে।

জীবাণু তত্ত্ব, অর্থাৎ রোগের উৎপত্তি জীবাণু থেকে হতে পারে আবিষ্কারের অনেক বছর পর তাঁর স্বীকৃতি মেলে। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে তাঁর অনেক বড় স্তম্ভও গড়া হয়েছে।

Related Posts

Leave a Reply