September 24, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

ছেলের সঙ্গে অভিমান তাই ২২ বছর চা-পান খেয়ে বেঁচে আছেন মা!

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

য়স ষাট পেরিয়ে গিয়েছে অনেকদিন আগেই। এই বয়সেও তিনি আর দশ জনের চাইতে অনেক দ্রুত গতিতে হেঁটে বেড়ান। প্রতিদিন ভোরবেলা উঠে মুড়ি ভাজেন। মাথায় সেই মুড়ি বোঝাই বস্তা নিয়ে পায়ে হেঁটে শহরে গিয়ে সেখানে অলিগলি ঘুরে ঘুরে তা বিক্রি করেন। শুধু তাই নয়, এসবের মধ্যেও সংসারের যাবতীয় কাজকর্মও তাকেই দায়িত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করতে হয়।

এই অবধি শুনে নিশ্চয় মনে প্রশ্ন জাগছে এ আবার এমন কি ব্যাপার। দৈনন্দিন জীবনযাপনে এসব তো সাধারণ মানুষদের অনেককেই করতে হয়। কিন্তু এখানে যার কথা বলা হচ্ছে অবশ্যই তার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অন্য রকমের।

নন্দরানী মোহান্ত যিনি মাছ মাংস ডাল এমনকি ভাতও খান না। দীর্ঘ ২২ টি বছর ধরে তিনি শুধু মাত্র পান ও চা খেয়েই বেঁচে আছেন। শুধু বেঁচে থাকা বললেও ভুল বলা হবে। সারাদিনে কয়েক খিলি চুন সুপারিসহ পান আর কয়েক কাপ চা। আর এই খেয়েই পরিবারের ভাত রান্না করা, বাড়িঘর পরিষ্কার রাখা এবং সর্বোপরি সংসারের ভাত যোগাড়ের যাবতীয় দায়িত্বও তিনি পালন করে চলেছেন।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সদর শহর বালুরঘাট থেকে সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মালঞ্চা এলাকার আশ্রম-পাড়ার বৃদ্ধা ওই নন্দরানী মোহান্ত। বহুদিন আগেই যার বয়স ৬০ পেরিয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ ২২ বছর আগে থেকে তিনি চা আর পান বাদে অন্যান্য সব কিছু খাওয়া বাদ দিয়েছেন। ভোরবেলা অন্ধকার থাকতে তিনি মুড়ি ভাজতে বসেন। তারপর বেলা বাড়ার আগেই সেই মুড়ি বিক্রি করতে হাঁটা দেন বালুরঘাট শহরের অভিমুখে।

রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শহরের এপাড়া থেকে ওপাড়া ঘুরে ঘুরে তা বিক্রি করে যে কয়টা টাকা তিনি পান তাই দিয়েই তিন মেয়ে ও স্বামীর সংসার চালান ওই ষাট বছরের বৃদ্ধা। আশ্চর্যের বিষয় হলো সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা এই খাটুনির মধ্যেও তিনি কিন্তু দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি হলো ভাত রুটি কিছুই খান না। সকালের টিফিন দুপুরের এমনকি রাতেরও খাবারের তালিকায় শুধুই পান আর গরম চা। এই খেয়েই তিনি দিব্যি সুস্থ আর চনমনে রয়েছেন এতগুলো বছর।

নন্দরানী দেবীর স্বামী হরেন্দ্রনাথ মোহান্ত কাজকর্ম সেরকমভাবে কিছুই না করায়, তাকেই সংসারের সমস্ত কিছু দায়িত্ব ও সংসারের ভার কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে। তাদের এক ছেলে তিন মেয়ে। বহুদিন আগে বড় মেয়ের বিয়ে দিলেও দুই মেয়ে এখনো বাড়িতেই রয়েছে। একমাত্র ছেলে রণজিৎ বাইশ বছর আগে মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সেই থেকেই ছেলের উপর রাগ করে তিনি খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। সারাদিনে নন্দরানী মোহান্ত দফায় দফায় ৬০ থেকে ৭০ টি পান আর ২০ থেকে ৩০ কাপ চা নিয়মিত খান। এমনকি আত্মীয়স্বজন বা পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়ির কোনো অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েও তিনি শুধু চা আর পান ছাড়া কিছুই খান না। তবে কদাচিৎ কখনো পান খেয়ে চুনে মুখ পুড়ে গেলে তখন অর্ধেক চামচ আচার তিনি খেতে ভালোবাসেন।

এব্যাপারে নন্দরানী মোহান্তর জানিয়েছেন একমাত্র ছেলে যাকে কষ্ট করে বড় করেছিলেন। দশমাস পেটে ধরে জন্ম দিয়েছিলেন। সেই ছেলেই একদিন হঠাৎ বিয়ে করে বৌ-এর পক্ষ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। আর সেদিনের সেই দুঃখেই খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন সারা জীবনের জন্য। সব কিছু ছাড়তে পারলেও নেশার টানে পান আর চাকে ছাড়তে পারেননি। তবে ভাত-রুটি বা মুড়ি অথবা অন্যান্য খাবার ছেড়ে দিলেও আজ অবধি তার কোনো শারীরিক দুর্বলতা বা অসুখও হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।

প্রতিবেশী গৃহবধূ তমা সরকার জানিয়েছেন, বিশ বছর আগে বিয়ে হয়ে আসার দিন থেকেই তিনি নন্দরানী দেবীকে পান আর চা খেয়ে থাকতে দেখছেন। বাড়িতে বিয়ে অন্নপ্রাশন বা পুজা পার্বণে নিমন্ত্রণ করলেও তাকে অন্য কিছু খাওয়ানো যায়নি বলে জানিয়েছেন।

Related Posts

Leave a Reply