ব্রাহ্মণদের পেঁয়াজ রসুন না খাবার পেছনে আছে এই বিশেষ রহস্য
হিন্দু ধর্মে ব্রাহ্মণ এমন একটি সামাজিক শ্রেণী, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরাই পুরোহিত বা পণ্ডিত। যে সকল ব্যক্তিরা ব্রাহ্মণ তাঁরা তাদের ধর্ম সংস্কৃতি প্রচার করার জন্য পরিচিত। তাঁরা তাদের ঐতিহ্যে নিবদ্ধ ও তাদের দৈনিক ধার্য পূজা ও ব্রতের মধ্য দিয়ে এঁরা ঈশ্বরের কাছাকাছি থাকেন। এরপরেও ব্রাহ্মণদের আরও ভাগে বিভক্ত করা যায় যেমন, বৈষ্ণব যারা ভগবান বিষ্ণুকে অনুসরণ করেন, শ্রী বৈষ্ণব যারা ভগবান লক্ষ্মীনারায়ণের পূজা করেন কিন্তু ভগবান শিবের পূজা করেন না এবং স্মার্থ যারা ভগবান বিষ্ণু ও ভগবান শিবের আরাধনা করেন।
একটি কঠোর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগত বিশ্বাস ছাড়াও, ব্রাহ্মণরা একটি নির্দিষ্ট খাদ্য শৈলীও অনুসরণ করে থাকেন। তাঁরা কোন মশলাযুক্ত খাবার খান না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ব্রাহ্মণরা পেঁয়াজ রসুন খান না। প্রাচীন কালে মানুষরা কখনোই পেঁয়াজ রসুন খেতেন না। এই দুটি সবজিকে কখনোই কোন ব্রাহ্মণের ঘরে আনা হয়নি। যদিও পরবর্তী সময়ে এই ধারণায় পরিবর্তন আসে। কিন্তু স্মার্থ, আইএঙ্গার ও মাধব পরিবারের অন্তর্গত অনেকে এখনকার সময়তেও পেঁয়াজ রসুন খান না। ভগবানের ভোগ দেওয়া নৈবেদ্যের অংশের খাবার তৈরি করতে কখনো পেঁয়াজ রসুন ব্যবহার করা হয়।
আসুন দেখে নেওয়া যাক এর পেছনে আসল কারণ কি: যে খাবার গুলি আমরা খাই, সেগুলিকে আয়ুর্বেদের ওপর ভিত্তি করে তিনিটি ভাগে ভাগ করা যায়। সত্য, রাজস ও তামস। সাত্ত্বিক খাবার মানসিক শান্তি প্রদান করে, এটি আমাদের মনকে শান্ত করে, আমাদের সত্য বলতে সাহায্য করে ও সর্বদা আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটাই আসল কারণ যার জন্য ব্রাহ্মণরা কেবলমাত্র সাত্ত্বিক খাবার খাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
রাজস বিভাগের আওতায় যে খাবারগুলি আসে, সেগুলি আপনার মধ্যে জাগতিক আনন্দের প্রতি ইচ্ছা ও চাহিদাকে জাগিয়ে তুলতে পারে। পেঁয়াজ যৌন অনুভূতি বর্ধক হিসাবে পরিচিত। প্রাচীনকালে পেঁয়াজ ব্যবহারের প্রতিবন্ধকতার কারণগুলির মধ্যে এটি অন্যতম একটি।
তামস বিভাগের অন্তর্গত খাবার যেমন পেঁয়াজ, রসুন খেলে আমরা যেই বৈশিষ্ট্যগুলি পাই সেগুলি হল, আমাদের মন অশুভ হয়ে ওঠে, আমরা বেশি ক্রোধ প্রবণ হয়ে পড়ি ও আমাদের মন কখনোই নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এই কারণগুলির জন্যই মানুষেরা পেঁয়াজ রসুন খাওয়া এড়িয়ে চলেন। যদিও কিছু মানুষ মনে করেন, রসুন কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক সমস্যা প্রতিসম করতে সাহায্য করে; তবুও ব্রাহ্মণরা সেই রোগের প্রতিকারের জন্য অন্য বিকল্প আয়ুর্বেদিক ওষুধ খুঁজে নিয়েছেন। যেহেতু মনে করা হয় যে মানুষ বানর প্রজাতির থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে, আমাদের সদা-চঞ্চল মনকে বশে রাখার জন্য এই নিয়ম ও বিশ্বাসগুলি প্রয়োগ করা হয়েছিল। এগুলি ছাড়া, আমরা মানুষেরা নিজেদের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না।
তাই, পেঁয়াজ, রসুন, মাংসের মতো খাবারগুলিকে পরিহার করার মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণরা মনে করেন যে, শান্তি অর্জন ও নিজেদের জীবনের উদ্দেশ্য পরিপূরণ করতে তাঁরা একধাপ এগিয়ে গেলেন। তাই, তাঁরা নিজেদের এমন সব কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন, সেগুলি ঈশ্বরের প্রতি মনোযোগ থেকে তাদের বিচ্যুত করতে পারে।