অভাবে এই মহাতারকার এমন পরিণতিতে চোখে জল আসবে
কলকাতা টাইমস :
নিজের সময়ের মহাতারকা তিনি। অথচ বিদায় বেলায় চরম অভাবে আর অবহেলায় কেটেছে। এতটাই ট্র্যাজিক ছিল অভিনেতা ভারত ভূষণের পরিণতি। অথচ সুদর্শন, নারীমহলে চরম জনপ্রিয় এই নায়ক তার কাজের যথাযথ স্বীকৃতিও পাননি।
বলিউড শাসন করা রাজ কাপুর, দেব আনন্দ, দিলীপ কুমার। কড়া প্রতিযোগিতাতেও তাদের মধ্যে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন ভারত ভূষণ। উত্তরপ্রদেশের মেরঠ শহরে তার জন্ম ১৯২০ সালের ১৪ জুন। মাত্র দু’বছর বয়সে মাকে হারান তিনি। এর পর ভাইয়ের সঙ্গে ভারত ভূষণ পালিত হন মামার বাড়িতে, আলিগড়ে।
স্নাতক সম্পন্ন করার পর বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নেন ভারত ভূষণ। প্রথমে কলকাতায় যান। কিন্তু সেভাবে সুযোগ পাননি। ফিরে যান সাবেক বোম্বে, আজকের মুম্বাইয়ে।
১৯৪১ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম ছবি ‘চিত্রলেখা’। এরপর একে একে ‘ভক্ত কবীর’, ‘সুহাগ রাত’, ‘আঁখে’, ‘জন্মাষ্টমী’-র মতো সিনেমার সাহায্যে নিজের জায়গা মজবুত করেন ভারত ভূষণ।
‘বৈজু বাওরা’ মুক্তি পায় ১৯৫২ সালে। এরপর থেকে ভারত ভূষণ নিজেই একটা ব্র্যান্ড, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম ম্যাটিনি আইডল হয়ে ওঠেন। মেরঠের এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারের মেয়ে সরলাকে বিয়ে করেন ভারত ভূষণ। তাদের দুই মেয়ে। অনুরাধা আর অপরাজিতা। বড় মেয়ে অনুরাধা ছিলেন পোলিও আক্রান্ত।
১৯৬০ সালে মুক্তি পায় ভারত ভূষণের ছবি ‘বারসাত কি রাত’। তার কয়েক দিন পরই জীবনে চরম আঘাত। মারা যান তার স্ত্রী সরলা। দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেয়ার পর কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। তার থেকে আর সুস্থ হতে পারেননি তিনি।
স্ত্রীকে হারানোর সাত বছর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন ভারত ভূষণ। ‘বারসাত কি রাত’-এর নায়িকা রত্না এবার তার জীবনসঙ্গিনী। বক্স অফিসে চরম সাফল্য পেয়েছিল ‘বারসাত কি রাত’। কিন্তু এর পর থেকেই উল্কাবেগে পড়তে থাকে ভারত ভূষণের ক্যারিয়ার। একের পর এক ছবি ফ্লপ হতে থাকে। ৫০ বছর বয়স হওয়ার আগেই নায়কদের বাবার ভূমিকায় দেখা যায় তাকে।
এরপর আরেক প্রান্তিক অবস্থান। শেষে এমন অবস্থা আসে, অতীতের নায়ক ভারত ভূষণ প্রায় ‘এক্সট্রা’-র ভূমিকায় চলে গেলেন। ৯০ এর দশকে ‘প্যার কা দেবতা’ ও ‘হামশকল’ ছবিতে তিনি প্রায় জুনিয়র শিল্পীর অবস্থায়।
অমিতাভ বচ্চন এক বার তার ব্লগে লিখেছিলেন, ভারত ভূষণকে তিনি রাস্তায় বাসের জন্য লাইনে অপেক্ষায় দেখেছিলেন। আমজনতার ভিড়ে একা দাঁড়িয়েছিলেন। অপেক্ষায় থাকা বাকিরা কেউ জানেনই না তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন একসময়ের সুপারহিট রোম্যান্টিক নায়ক।
খ্যাতির মধ্য গগনে থাকার সময় কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বিপাকে ফেলেছিল তারকা ভারত ভূষণকে। তার মধ্যে অন্যতম একটি ছবি প্রযোজনা করা। প্রযোজক হিসেবে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি।
ঘন আঁখিপল্লব আর স্বপ্নালু চোখের এই নায়ক কবিতা ভালোবাসতেন। গানে সুর দিতেন। নিজে গানও গাইতেন। তাকে চমৎকার মানিয়ে যেত পৌরাণিক চরিত্রে। ‘শ্রী মহাপ্রভু চৈতন্য’ ছবিতে অভিনয় তাকে এনে দিয়েছিল ‘ফিল্মফেয়ার’-এ সেরা অভিনেতার সম্মান।
আর ভালোবাসতেন বইয়ের জগতে ডুবে থাকতে। তার নিজের বাড়ির লাইব্রেরিতে ছিল দুষ্প্রাপ্য বই। শেষ জীবনে এমনও হয়েছে, টাকার জন্য নিজের সংগ্রহের দুর্মূল্য বই বিক্রি করতে হয়েছে তাকে।
বিক্রি করে দিতে হয়েছিল নিজের একাধিক গাড়ি ও বাংলো। তৎকালীন বোম্বের বান্দ্রা ও অন্য জায়গায় বাংলো ছিল তার। অর্থকষ্টে হারাতে হয়েছিল সে সবই। অভিনয় মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন আগেই। অনাদর আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ৭২ বছর বয়সে, ১৯৯২ সালের ২৭ জানুয়ারি জীবনের মঞ্চ থেকে বিদায় নেন আরব সাগরের তীরের এক সময়ের মহাতারকা।