September 29, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

দুর্ভাগ্যের জন্য পৃথিবীখ্যাত হন এই মহিলা, রহস্য জানলে মাথা ঘুরে যাবে 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

স্তু, পশু-পাখিসহ বিভিন্ন জিনিস বা চিত্রকলা প্রদর্শনী হয়। কিন্তু মানুষের প্রদর্শনী? ইতিহাসে এমন দুর্ভাগা একজন রয়েছেন, যিনি নানা স্থানে প্রদর্শনীর শিকার হয়েছিলেন। শুধু জীবিত থাকাকালীন নয়, মৃত্যুর পরও তার মৃতদেহ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

তিনি পেশায় ছিলেন শিল্পী। পুরো জীবনটাই কষ্টে কেটেছে। ভালোবাসা তো দূরের কথা, মানুষ হিসেবে প্রাপ্য সম্মানটুকুও পাননি। তার প্রতি এই পৃথিবীর মানুষের মায়া ছিল না, হয়তো এ কারণেই মাত্র ২৬ বছর বয়সেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি।

বলছি উনবিংশ শতকের এক গায়িকা এবং পারফর্মিং আর্টিস্ট জুলিয়া পাস্ত্রানার কথা। ১৮৩৪ সালে মেক্সিকোতে জন্মগ্রহণ করেন জুলিয়া। শৈশব থেকেই দুটি বিরল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। একটি জেনেরেলাইজড হাইপারট্রিসোটাস ল্যানুগিনোসা, অন্যটি জিঞ্জিভাল হাইপারপ্লাসিয়া। প্রথম রোগের জন্য মুখ ও কপালসহ শরীরজুড়ে ছিল অস্বাভাবিক কালো লোম। দ্বিতীয় রোগের ফলস্বরূপ তার নাক, ঠোঁট, চোয়াল অস্বাভাবিক পুরু ছিল। তবে তার গানের গলা মিষ্টি ছিল, গান গাইতে এবং নৃত্য পরিবেশন করতে খুব পছন্দ করতেন।

পরবর্তী সময়ে পাস্ত্রানা আমেরিকা চলে যান এবং থিওডোরল্যান্টকে বিয়ে করেন। তার স্বামী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তাকে নিয়ে প্রদর্শনী করতেন। ততো দিনে পাস্ত্রানা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে কুৎসিত মহিলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছিলেন। ‘দ্য এপ উইমেন’, ‘দ্য বিয়ার উইমেন’, ‘দ্য আগলিয়েস্ট উইমেন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’, ‘লিংক বিটুইন ম্যানকাইন্ড অ্যান্ড দ্য ওরাংওটাং’- বাহ্যিক রূপের জন্য নিজের নাম ও পরিচয় হারিয়ে এ ধরনের নানা তীর্যক পরিচয়ে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন পাস্ত্রানা।

লন্ডনের কুইন্স হলে তাকে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছিল শুধু তার বিশ্রী বাহ্যিক রূপের জন্য। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘লিভারপুল মার্কারি’ সংবাদপত্রে এই ঘটনাকে ‘জনসমক্ষে প্রকাশিত সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়’ হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছিল। এই অতিরঞ্জনের মাত্রা ন্যূনতম সভ্যতা ও মানবিকতাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল যখন তারা এই ব্যাপারটিকে উপস্থাপনা করেছিল- ‘মানবজাতির বিবর্তনবাদের উদাহরণ পরিদর্শনের একটি অপার সুযোগ’ বলে। ১৮৫৪ সালে পাস্ত্রানাকে আমেরিকার একটি প্রদর্শনীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সাধারণ মানুষ তাকে শুধু দেখবে বলে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘বাল্টিমোর সান’ ১৮৫৫ সালের ৯ নভেম্বর একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিল ক্যারল হলে পাস্ত্রানার একটি প্রদর্শনীর। ছোট ছেলেমেয়েরা ১৫ সেন্টসের বিনিময়ে এবং বড়রা ২৫ সেন্টসের বিনিময়ে পাস্ত্রানাকে দেখতে যেত। ৫০ কেজির, ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষটিকে রাস্তা দিয়ে প্যারেড করানোও হয়েছিল শুধু সাধারণ দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য।

২৫ বছর বয়সে পাস্ত্রানা গর্ভবতী হন। জন্মের পর শিশুটি দেখতে তার মতোই লোমশ ছিল। কিন্তু জন্মের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিশুটি মারা যায়। গর্ভাবস্থায় জটিলতার দরুণ পাস্ত্রানাও দুদিন পর মৃত্যুবরণ করেন।

স্ত্রী এবং সন্তানের মৃত্যুর পরেও থিওডোরলেন্টের লোভ শেষ হয়নি। তিনি জুলিয়া এবং তার বাচ্চার মৃতদেহ সংরক্ষণ করে বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শন করে টাকা কামাতে থাকে। অবাক করা বিষয় হলো, ২০১৩ সালে সিনালোয়াতে কবর দেওয়ার আগ পর্যন্ত জুলিয়া এবং তার সন্তানের মৃতদেহ বিভিন্ন মালিকের হাতবদল হয়েছে।

বিশ্বে জুলিয়ানা পাস্ত্রানাকে নিয়ে আরো অনেক রোমহর্ষক গল্প এবং ঘটনা আছে। যেগুলোর কিছুটা গুজব, কিছু সত্যি। মাত্র ২৬ বছরের জীবনে এতটা জনপ্রিয় হয়েছিলেন একজন মানুষ শুধু তার দুর্ভাগ্যের জন্য।

Related Posts

Leave a Reply