প্রতি বছর ৭০০০ রোগীর মৃত্যু হয় ডাক্তারদের এই সামান্য ভুলে
কলকাতা টাইমস :
সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর শুধু আমেরিকাতেই প্রায় ১৫ লক্ষ রোগী অসুস্থ হন প্রেসক্রিপশন-ঘটিত বিভ্রান্তির কারণে। আর সারা বিশ্বে ৭ হাজার মানুষ মারা যান প্রেসক্রিপশন বুঝতে না পারার পরিণামে।
ব্যাপারটা আপাতদৃষ্টিতে অবিশ্বাস্য এবং অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আমেরিকার ইনস্টিটিউট অফ মেডিসিন (আইওএম)-এর ২০০৬ সালের একটি সমীক্ষা-রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর সারা বিশ্বে অন্তত ৭০০০ রোগীর মৃত্যু হয় কেবলমাত্র প্রেসক্রিপশনে ডাক্তারদের হাতের লেখা বুঝতে না পারার কারণে।
প্রেসক্রিপশনে ডাক্তারদের হাতের লেখার অস্পষ্টতা নিয়ে নানা রকম রসিকতা চালু রয়েছে বাজারে। কিন্তু প্রেসক্রিপশনে খারাপ হাতের লেখার পরিণাম যে এতখানি মারাত্মক হতে পারে, তা বোধ হয় এই সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশের আগে বোঝা যায়নি। আইওএম সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, ডাক্তাররা রোগীদের প্রতি যে নির্দেশমূলক আদ্যক্ষর বা অ্যাবব্রিভিয়েশনসগুলি ব্যবহার করেন প্রেসক্রিপশনে, সেগুলি বুঝতে প্রায়শই ভুল করেন রোগীরা।
এই ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয় মূলত ওষুধ খাওয়ার নিয়ম ও পরিমাণ বোঝানোর জন্য। যেমন a.c. লেখার অর্থ খাওয়ার আগে। কিংবা b.d.s.-এর অর্থ দিনে দু’বার। কিন্তু ডাক্তারদের খারাপ হাতের লেখার কারণে এই নির্দেশিকা বুঝতে ভুল করেন রোগীরা। যে ওষুধ দিনে দু’বার খাওয়ার কথা তা সপ্তাহে দু’বার খেয়ে বসেন, কিংবা সকালের ওষুধটি খান রাত্রে।
আর এর ফলেই ঘটে বিপত্তি। রোগী সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর শুধু আমেরিকাতেই প্রায় ১৫ লক্ষ রোগী অসুস্থ হন প্রেসক্রিপশন ঘটিত বিভ্রান্তির কারণে। আর সারা বিশ্বে ৭ হাজার মানুষ মারা যান প্রেসক্রিপশন বুঝতে না পারার পরিণামে।
আইওএম-এর বক্তব্য, ওষুধের দোকানের কর্মীরাও অনেক সময়ে প্রেসক্রিপশনের লেখা বুঝতে ভুল করে থাকেন। দেখা গিয়েছে, ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশনে সেলেক্সা (ডিপ্রেশনের ওষুধ) লিখলে অনেক সময়েই ওষুধের দোকানের কর্মীরা তাকে সেলেব্রেক্সা (আর্থারাইটিসের ওষুধ) বলে ভুল করে থাকেন। রোগীরাও ভুল ওষুধ খেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এই সমস্যার সমাধান কী? আমেরিকায় ‘নেপসি’ নামের একটি প্রোগ্রাম চালু করা হচ্ছে। এই প্রোগ্রামের সাহায্যে ডাক্তাররা হাতে লেখার পরিবর্তে ইলেকট্রনিক প্রেসক্রিপশন লেখার সুবিধা পাবেন। ফলে হাতের লেখার সমস্যা আর থাকছে না। এই প্রক্রিয়ায় হাতের লেখা সংক্রান্ত বিভ্রান্তি অনেকটাই মিটবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতে এই জাতীয় প্রোগ্রাম কবে চালু হয় সেটাই এখন দেখার।