জরায়ু ফেলে দিচ্ছেন হাজার হাজার মহিলা ! কারণ জানলে কেঁদে ফেলবেন

কলকাতা টাইমস :
মহারাষ্ট্রের হাজার হাজার মহিলা অস্ত্রোপচার করে তাদের জরায়ু বাদ দিয়ে দিচ্ছেন। জরায়ু ফেলে দেওয়া এই মহিলাদের মধ্যে অল্পবয়সী তরুণীরাও রয়েছেন। এই ঘটনা নাড়া দিয়েছে সংসদকেও। আইন প্রণেতা নীলম গোড়ি বিষয়টি গত মাসে সংসদ সদস্যদের নজরে এনেছেন । মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী একনাথ সিন্ধী স্বীকার করেছেন যে, গত তিন বছরে ৪,৬০৫ জন মহিলা জরায়ু ফেলে দিয়েছেন।
কিন্তু এই নির্মম ঘটনার পেছনে যে কারণ জানা গেছে তা কতটা বেদনার তা জানাই তাহলে। ভারতীয় সংস্কৃতিতে মাসিক বা রক্তস্রাব একটি ট্যাবু হিসেবে চালু রয়েছে । মাসিকের সময় মহিলাদের অপবিত্র ও ধর্মীয় কাজে অংশগ্রহণের অনুপযোগী বিবেচনা করা হয়। তবে সম্প্রতি এই গৎবাঁধা ধারণাকে শহুরে শিক্ষিত নারীরা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে ঋতুস্রাব নিয়ে মহিলাদের সংকট বা ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। আখের ক্ষেতে ভাড়াটে শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুবিধার্থেই অনেক নারী নিজেদের জরায়ু ফেলে দিচ্ছেন।ওসমানাবাদ, সাংলি ও সোলাপুরসহ আরও কিছু জেলা থেকে দরিদ্র পরিবারের হাজার হাজারো মানুষ যেখানে প্রচুর পরিমাণে আখের ক্ষেত রয়েছে সেসব জেলায় আখ কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যান। সেখানে মহিলারা স্থানীয় ঠিকাদারদের শোষণ ও নিপীড়নের শিকার হন। এমনকি তারা মহিলাদেরকে নিয়োগ করতেও গড়িমসি করেন। তারা অজুহাত হিসেবে বলেন, মাসিকের সময়ে মহিলারা আখ কাটার শ্রমসাধ্য কাজ করতে পারবেন না।
শুধু তাই নয়, পিরিয়ডের সময় ব্যথার কারণে কোনও মহিলা কাজে যোগ দিতে না পারলে তাদের মজুরী কাটা যায়। আখ শ্রমিক হিসেবে যারা কাজ করতে দূর-দূরান্তে যান তাদের বসবাসের পরিস্থিতি খুবই শোচনীয়। মাঠের কাছাকাছিই তাঁবুতে তাদের দিনযাপন করতে হয়। এমনকি অনেক যায়গায় শৌচাগারও থাকে না। আখ কাটার ভর-মৌসুমে রাতেও কাজ করতে হয়। তাই, কে কখন ঘুমাতে যাবে, কখন উঠবে তার কোনও ইয়ত্তা নেই।
এমন বিরূপ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বহু মহিলা সংক্রমণে আক্রান্ত হন। এমতাবস্থায় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে অসাধু ডাক্তাররা নারীদেরকে ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তোলার বদলে অপারেশন করে জরায়ু ফেলে দেবার পরামর্শ দেন।অপারেশন করে জরায়ু ফেলে দিলে মহিলাদের কী ধরনের সমস্যায় পড়বেন, কী ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে- এ বিষয়গুলো নিয়েও ডাক্তাররা কিছু বলেন না।
জানা গেছে, মহারাষ্ট্রের অনেক জায়গাতেই অল্পবয়সী মহিলাদের বিয়ে হয়। আর অল্প বয়সেই তারা একাধিক সন্তানের মা-ও হয়ে যান। এমনকি বয়স ২৫ হবার আগেই দুই বা তিন সন্তানের মা হয়ে যান কেউ কেউ।
এভাবে এখন মহারাষ্ট্রের কোনও কোনও গ্রামে প্রায় সকল মহিলা জরায়ু ফেলে দেওয়ায় বেশ কয়েকটি গ্রাম ‘জরায়ুবিহীন নারীদের গ্রাম’-এ পরিণত হয়েছে।