বর্ষায় বেড়াতে যাচ্ছেন? নানা কীট থেকে বাঁচার উপায়
সাপে কামড়ালে করণীয়:
পাহাড়ে ভ্রমণকারীকে তো আর বলা যাবে না ঝোপঝাড় এড়িয়ে চলুন। তাই সাপের হাত থেকে বাঁচতে হলে সাবধানে চলাচল করতে বলা ছাড়া কিছু বলার নেই। তবুও পাহাড়ের যে অংশ চলাচলের জন্য নয় বা ট্রেইল নেই তা থেকে দূরত্ব রাখা ভালো। অহেতুক কোনো গর্তে হাত পা ঢোকাবেন না। আশেপাশে কোথাও কোনো সাপ দেখলে তাকে চলে যেতে সুযোগ দিন। আঘাত করবেন না বা এমন কিছু করবেন না যাতে এটি কামড়াতে প্ররোচিত হতে পারে।
সাপে কামড়ালে প্রথমেই যাকে কামড় দিয়েছে, তাকে অভয় দিতে হবে। রোগীকে শান্ত রাখতে হবে। আক্রান্ত মানুষটিকে আতঙ্কিত হতে দেওয়া যাবে না। এতে ওই ব্যক্তির হ্যার্ট অ্যাটাক হতে পারে। ডায়াবেটিক রোগীদের ব্লাড লেভেল বেড়ে যেতে পারে।
সাপে কামড়ানো জায়গা তৎক্ষণাৎ পরিষ্কার ব্যান্ডেজ বা সুতির কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন, যাতে ধুলোবালি না লাগে।
হাতের কোনো অংশে সাপে কাটলে সঙ্গে সঙ্গে ঘড়ি, ব্রেসলেট, আংটি ইত্যাদি খুলে ফেলুন। কাপড় ঢিলেঢালা করে দিন।
সম্ভব হলে সাপটি দেখতে কেমন তা লক্ষ্য করুন। সাপের বর্ণনা পরবর্তীতে চিকিৎসা পরিকল্পনায় সাহায্য করতে পারে। তবে সাপ দেখার চেষ্টা করতে গিয়ে একেবারেই সময় নষ্ট করা যাবে না। চিকিৎসার দেরি না যেন না হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
কামড় দেখে বুঝতে হবে যে এটি বিষাক্ত সাপে কামড়েছে নাকি বিষহীন সাপে কামড়েছে। তারপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। বিষহীন সাপে কামড়ালে অতিরিক্ত ভয় বা চিন্তার তেমন প্রয়োজন নেই। তবুও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। কামড় দেখে সনাক্ত করতে ক্ষতস্থান রক্তাক্ত থাকলে আগে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
বিষাক্ত সাপের কামড়ে দুটি দাঁত বসে গিয়ে ক্ষত তৈরি হয়। বিষহীন সাপের কামড়ে অনেকগুলো দাঁতের আঁচড় পড়তে পারে। বিষাক্ত সাপের কামড়ে ক্ষতস্থান জ্বালাপোড়া করে।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুইয়ে দিন। সাপে কামড়ানো ব্যক্তিকে কখনোই কাত করে শোয়ানো যাবে না। সব সময় সোজা করে শোয়াবেন। তার বুকের নিচে কিছু একটা দিয়ে বুকটা উঁচু করে রাখুন কিংবা রোগীকে এমনভাবে শোওয়ান যেন কামড়ের স্থান হৃদযন্ত্র বরাবর কিছুটা নিচের দিকে থাকে। অর্থাৎ রোগীর আক্রান্ত স্থান হার্ট লেভেলের নিচে রাখতে হবে।
রোগীকে কিছু খেতে বা পান করতে দেওয়া যাবে না। বিশেষ করে অ্যালকোহল জাতীয় পদার্থ।
সাপ যদি হাতে বা পায়ে কামড় দেয় তাহলে বাঁধন দিতে হবে। দংশিত স্থানের কিছুটা ওপরে দড়ি বা হাতের কাছে যা পান, তা দিয়েই বেঁধে ফেলুন। তবে গামছা, মাফলার, ওড়না এমন কাপড় দিয়ে বাধা উচিত। মনে রাখবেন বাঁধনটা যেন অস্থিসন্ধিতে যেমন কনুই, কবজি বা গোড়ালি এবং গলা বা মাথায় না হয়। যে দড়ি বা কাপড় দিয়ে বাঁধবেন তা যেন চওড়ায় দেড় ইঞ্চি হয়, কখনো তা যেন সরু সুতোর মতো বা রাবার ব্যান্ডের মতো না হয়।
বাঁধনটি যেন খুব বেশি শক্ত না হয়। বাঁধনটি এমনভাবে দিতে হবে যেন একটা আঙুল ওই বাঁধনের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। যদি বাঁধনটি শক্ত হয়, তাহলে ঢিলা করে দেবেন, তবে কখনোই তা খুলে ফেলবেন না। বাঁধনটি দেয়ার উদ্দেশ্য হলো রক্ত চলাচল বন্ধ রাখা। তবে বাঁধনটি একটানা ২০ মিনিটের বেশি রাখবেন না। প্রতি ১০ মিনিট অন্তর তা আলগা করে দিতে হবে।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর রোগীকে দ্রুত নিকটতম হাসপাতালে কিংবা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে, যেখানে অ্যান্টিভেনম সিরাম বা সর্পবিষনাশী সিরাম (যেমন হফকিনস পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম) মজুদ রয়েছে। প্রয়োজনে রোগীকে টিটেনাস বা ধনুষ্টঙ্কারের প্রতিষেধক দিতে হবে।
জোঁক থেকে বাঁচার উপায়:
জোঁক শিতল ভেজা এবং স্যাঁতসেঁতে জায়গায় গাছের পাতায় কিংবা ঘাসে থাকে।
সহজে বহনযোগ্য ছুরি বা কাঁচি রাখুন। ট্রেকিং করার সময় ভালো বুদ্ধি হচ্ছে আন্ডারওয়ারের বদলে টাইটস পড়া। প্যারাসুট কাপড়ের পিছলা প্যান্ট খুব উপকারী।
সবচেয়ে ভালো হয় পায়ের মোজার সাথে প্যান্ট ইন করে সংযোগস্থলে ইলাস্টিক দিয়ে সীল করে দেয়া। লম্বা মোজা (হাটুঁ পর্যন্ত), অ্যাঙ্কলেট এবং নিক্যাপও ব্যবহার করতে পারেন।
প্রথমে ট্রাউজার পরিধান করুন, তারপর লম্বা মোজা পরিধান করে ট্রাউজারের নিম্মাংশ মোজার ভেতরে ভালোভাবে ঘুঁজে দিন। অতঃপর নিক্যাপটি এমনভাবে পরিধান করুন যাতে মোজা ও ট্রাউজারের সন্ধিস্থলকে নিক্যাপটি দৃঢ়ভাবে ঢেকে দেয়। যদি নিক্যাপের চাপে হাঁটুতে অস্বস্তি লাগে তবে মোজা ও ট্রাউজারের সন্ধিস্থলটিকে হাঁটুর নিচে নামিয়ে তার ওপর নিক্যাপ পড়তে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে নিক্যাপটি যেন মোজা ও ট্রাউজারের সন্ধিস্থলকে দৃঢ়ভাবে ঢেকে দেয়। নয়তো জোঁক মোজা বেয়ে উঠে মোজা ও ট্রাউজারের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করার সম্ভাবনা থেকে যাবে। এবার অ্যাঙ্কলেটটি পরে ফেলুন।
মনে রাখবেন উল্লেখিত ব্যবস্থায়, জোঁকের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ সম্পূর্ণ নিশ্চিত করে না। তবে জোঁক মোজা বেয়ে যথেষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করে চামড়ায় সান্নিধ্যে এসে কামড় বসাতে যে সময় লাগবে, তাতে আপনার সর্তক দৃষ্টি জোঁক খুঁজে বের করে নিবৃত্ত করার পর্যাপ্ত সময় পাবে।
জোঁক শরীরে এটে গেলে পরিত্রাণ:
কামড়ে ধরা জোঁক থেকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি পেতে ছুরি বা কাঁচি ব্যবহার করুন। জোঁককে কেটে ফেলুন। ছুরি বা কাঁচির বিকল্প হিসেবে তামাক পাতার গুড়া, ডেটল বা লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে।
জরুরি পরিস্থিতিতে সিগারেটের লাইটারের আগুন বা সিগারেটের আগুন দিয়ে কামড়ে ধরা জোঁক থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এক বোতলে লবণ জল সাথে রাখা যেতে পারে।
জোঁক তামাকের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। তাই তামাক পাতা ঘন করে নারিকেল তেলে গুলিয়ে নিয়ে একটি পেস্টের মতো তৈরি করে পায়ে মেখে ট্রেক করলে জোঁক কম ধরে। মোজা ব্যবহার করলে তামাকের দ্রবণ মোজায় ভিজিয়ে রেখে শুকিয়ে ট্রেক করা যেতে পারে। একইভাবে অডোমসের মতো ইনসেক্ট রেপেলেন্ট ক্রিম ও ডেটল ব্যবহার করেও অনেকে উপকার পেতে পারেন।
যেসব স্থানে জোক আক্রমণ করতে পারে বিশেষ করে পায়ে কেরোসিন তেল বা সরিষার তেল মেখে দিতে পারেন।
দেহে কামড়ে ধরা জোঁক টেনে তুলবেন না। আপনার ত্বকে কামড়ে থাকা অবস্থায় জোঁক টেনে তুললে এতে ক্ষতস্থান তুলনামূলকভাবে বড় হয়ে যাবে এবং আক্রান্ত জোঁকের বমি করা দূষিত রক্ত দেহে প্রবেশ করে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
সর্বশেষ কথা হলো জানুন, শিখুন, মেনে চলুন। সতর্ক থাকুন। এবং অবশ্যই ভ্রমণে গিয়ে পরিবেশ নষ্ট করবেন না। প্রকৃতি রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।