টাকা ও শত্রু দুই থেকে বাঁচতে ‘নিজেকে’ খুন করে ফেরার

কলকাতা টাইমস :
ফসলের জমির পাশে পড়ে রয়েছে গলাকাটা দেহ। মুখ অ্যাসিডে পোড়ানো। দেখে মনে হয়, চূড়ান্ত প্রতিহিংসার জেরেই খুন করেছে কেউ! গত ২৩ জানুয়ারি সকালে ক্ষতবিক্ষত ওই দেহ দেখতে পান মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরের রাতলামের কামেদ গ্রামের বাসিন্দারা।
বেলা গড়ানোর আগেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সবটির পরনে থাকা পোশাক, পকেটে থাকা টাকার ব্যাগ, মোবাইল ফোন এবং কিছু নথি থেকে পুলিশ ওই দেহ শনাক্ত করে। জানা যায়, দেহটি ওই গ্রামেরই বাসিন্দা হিম্মত পাটিদারের। দেহ যেখানে পাওয়া যায়, সেখান থেকে ৫০০ মিটার দূরে ৩৫ বছর বয়সী হিম্মতের মোটরসাইকেলটিও পাওয়া যায়।
হিম্মত ছিলেন ওই এলাকার রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সাবেক কর্মকর্তা। এই খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয়ে যায় রাজ্যের রাজনীতিতে। রাজ্যের ক্ষমতা থেকে সদ্য চলে যাওয়া বিজেপি ওই খুনের পেছনে রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ তোলে। অন্য দিকে হিম্মতের পরিবার পুলিশকে জানায়, তাদের সন্দেহ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা মদন মালব্য তাকে খুন করেছেন।
হিম্মতের পরিবার পুলিশের কাছে একজন সাক্ষীকেও হাজির করে, যিনি ওই রাতে ঘটনাস্থলের আশেপাশে মদনকে দেখেছিলেন।
পুলিশও তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে, হিম্মতের সঙ্গে মদনের স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে দু’জনের দীর্ঘদিনের গন্ডগোল ছিল। ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ মদন। সব মিলিয়ে মদনকেই খুনি ধরে নিয়ে এগোতে থাকে তদন্ত।
কিন্তু, খুনের পাঁচ দিনের মাথায় তদন্তে নেমে পুলিশের ধন্ধ তৈরি হয় ঘটনাস্থলের কিছুটা দূরে পড়ে থাকা এক পাটি চটি দেখে। মদনের বাবা সেই চটি নিজের ছেলের বলে শনাক্ত করেন। মৃতের পরনে থাকা অন্তর্বাস মদনের বাবা নিজের ছেলের বলে দাবি করেন। রাতলাম জেলা পুলিশ সুপার গৌরব তিওয়ারি জানান, ঘটনাস্থলের কাছ থেকে মদনের জুতার তলার মাটি এবং ঘটনাস্থলের মাটিরও পার্থক্য পাওয়া যায়।
রাতলাম জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর পর মৃতের দেহের নমুনার সঙ্গে মদনের পরিবার এবং হিম্মতের পরিবারের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। আর সেই ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট থেকেই বেরিয়ে আসে আসল তথ্য।
জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, তদন্তে নেমে তারা জানতে পেরেছেন সম্প্রতি ঋণে জর্জরিত হয়ে গিয়েছিলেন হিম্মত। প্রায় ৯ লাখ টাকা ধার হয়ে গিয়েছিল তার।
অন্যদিকে তারা এটাও জানতে পেরেছেন, মৃত্যুর কয়েক মাস আগেই ২০ লাখ টাকার একটি বিমা করেছিলেন তিনি। তদন্তকারীদের দাবি, বিমার টাকা হাতাতে খুব ঠান্ডা মাথায় মদনকে খুনের ছক কষেন হিম্মত। তার পর মদনকে খুন করে এমন ভাবে পুরো ঘটনা সাজান যাতে মনে হয়, মদনই তাকে খুন করে ফেরার হয়ে গেছেন। এক ঢিলে দুই পাখি মারার পরিকল্পনা করেছিলেন হিম্মত। এক দিকে দীর্ঘ দিনের শত্রু মদনকেও মেরে ফেলা হবে, সেই সঙ্গে বিমার টাকা পেয়ে ঋণও পরিশোধ করে দেবে পরিবার। পুলিশের ধারণা আশ পাশে কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে হিম্মত।