বর্ষায় প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখতে হলে অবশ্যই যান এই ঝরনা দেখতে
কলকাতা টাইমস :
আমরা যখন রিছাং ঝরনা দেখতে গেলাম, তখন বুঝতেই পারিনি যে খাগড়াছড়িতে নিম্নচাপ চলছিল। ঝড়ের এত তীব্রতা ছিল যে বুঝতে পারছিলাম না কী করব। ঝড়ের কারণে রাস্তার অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। আর ঝড়ের তীব্রতা এবং ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য ঝরনার নিচে গিয়েও রেইনকোর্ট পরে থাকতে হয়েছে। এতকিছুর পরেও সেখানে গিয়ে অনুভব করতে পারলাম, যদি না যেতাম তাহলে সৃষ্টিকর্তার অপুরূপ সৃষ্টির অনেক কিছুই মিস করতাম।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার অন্যতম পর্যটন স্পট ‘রিছাং ঝরনা’। এর অন্য নাম ‘তেরাং তৈকালাই’। রিছাং ঝরনা শব্দটি খাগড়াছড়ির মারমা সম্প্রদায়ের ভাষা থেকে এসেছে। মারমা ভাষায় ‘রিই’ শব্দের অর্থ পানি এবং ‘ছাং’ এর অর্থ কোনো কিছু থেকে লাফিয়ে পড়া। অর্থাৎ রিছাং এর বঙ্গানুবাদ করা হলে, উচুস্থান হতে জলরাশির লাফিয়ে পড়াকে বোঝাবে।
এ ঝরনা দর্শনীয় স্থান হিসেবে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো না। যার সৌন্দর্যের বিচারে উপেক্ষিত নয়। ২০০৩ সালের দিকে এটি সবার নজরে আসে এবং পরিচিতি লাভ করে। এই ঝরনার পার্শবর্তী এলাকায় কোনো গ্রাম ছিল না। এখন কিছু পরিবারের দেখা পাওয়া যায়। জুম চাষের সুবাদে এ ঝরনা সবার নজরে আসে।
প্রকৃতি এই রিছাং ঝরনার চারপাশের পরিবেশ এমন সব সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ করে রেখেছে যা দেখে আপনি মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না।
যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর নীলচে পাহাড় দেখা যায়। পাহাড়ের পায়ে পাখির কলকাকলি প্রতিফলিত হয়ে দারুণ এক আমেজের সৃষ্টি করে। সেই সঙ্গে একরাশ বাতাস এসে আপনার মনকে মাতোয়ারা করে দিয়ে যাবে। (এটা স্বাভাবিক সময়ের সৌন্দর্য বর্ণনা করে হয়েছে। মেঘ বৃষ্টি বাতাস মিলিয়ে আমরা দেখেছি অন্য এক সৌন্দর্য।) ঝরনায় পৌঁছার একটু আগে শেষ একটা পাহাড় নামতে হয়। পাহাড়টা বেশ ঢালু। নামার সময় তেমন কোনো কষ্ট হবে না। তবে ঝরনা থেকে ফিরে উঠার সময় ঠিকই সেটা টের পাওয়া যায়।
পাহাড়টি পার হলেই পাবেন বিশাল এক সিঁড়ি। সেই সিঁড়িটি বেয়ে নিচে নামতে নামতে নামতেই ঝরনার শন শন শব্দ শুনতে পাবেন। কিন্তু আমরা যখন গিয়েছি তখন ঝড়, বাতাস, আর ঝরনার শব্দ মিলিয়ে এক অলৌকিক পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছিল। যা লিখে বোঝানো যাবে না। সিঁড়িটি শেষ হতে না হতেই ঝরনাটার দেখা পেয়ে যাবেন।
ঝরনাতে পৌঁছানের জন্য পুরোটা পথ আপনি গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন না। ঝরনার কিছু আগে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে যেতে হবে। পাহাড়ি পথটা মোটেও আরামদায়ক নয়। আপনাকে একটি বাঁশের লাঠি নিয়ে নিতে হবে তাতে পরিশ্রম কম হবে।
দৃষ্টিনন্দন সে ঝরনা। সত্যিই সৌন্দর্যের আধার এ ঝরনা যেন প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি। পাহাড়ের প্রায় ১০০ ফুট উপর হতে ঝরনার জল নিচে পড়ছে। নিচে পড়ার পর তা আবার আরো ১০০ ফুট পাথরের ওপর গড়িয়ে নেমে আসে সমতলে। উপর হতে নেমে আসা স্ফটিক-স্বচ্ছ জলরাশি নির্ঝরের স্বপ্নের মতো অবিরাম প্রবাহমান।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে পাথরের উপর দিয়ে জল নিচে পড়ার ফলে একটি পিচ্ছিল পথের সৃষ্টি হয়েছে। আপনি একটু সাহসী হলেই সেই জলের স্রোতের সাথে নিচে নেমে আসতে পারেন। মেতে উঠতে পারেন জলকেলিতে। ঝরনার বেশি কাছাকাছি গেলে খুব সাবধানে যেতে হবে, কারণ তা অত্যধিক পিচ্ছিল। পিচ্ছিলের কারণে প্রায় সময় পর্যটক পা পিছলে পড়ে গিয়ে আহত হয়ে ফিরে গেছেন। আশপাশে ভালো কোনো খাবারের দোকান কিংবা জলের ব্যবস্থা নেই। তাই খাবার এবংজলের ব্যবস্থা সাথে করে নিয়ে যাবেন।
বর্তমানে রিছাং ঝরনা খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এই ঝরনার সার্বিক সংরক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো লোক নিয়োগ করা হয়নি এখনো। তবে এর উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদ থেকে সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি শহর হতে চাঁদেরগাড়ি (লোকাল নাম চান্দেরগাড়ি) বা পাবলিক বাসে করে যেতে হবে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে। সেখান থেকে হেঁটে কিংবা মোটরবাইকে করে যেতে হবে সরাসরি রিছাং ঝরনায়। হেঁটে ঝরনাতে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪৫/৫০ মিনিটের মতো। আর যদি চাঁদেরগাড়ি বা সিএনজি রিজার্ভ করে নিতে পারেন তাহলে সবচাইতে ভালো হয়। তাহলে বার বার গাড়ি ঠিক করা, কিছু রাস্তা হাঁটা, গাড়ির জন্য অপেক্ষা করার অনেক সময় বেঁচে যাবে।