ট্রাম্পের কমলা ত্বক, কলারের সেই দাগের রহস্য চমকে দেবে
কলকাতা টাইমস :
২০১০ সালে নিউ জার্সির বেডমিনিস্টারে অবস্থিত ট্রাম্প গল্ফ ক্লাবে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন সান্দ্রা ডিয়াজ। বৈধ অভিবাসীর কাগজপত্র ছিল না তার কাছে। সেখানে কাজ শুরুর আগেই সুপারভাইজরের কাছ থেকে প্রথম নির্দেশনাটি শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন আমেরিকায় আগত এই কোস্টা রিকান মহিলা । বলেন, আমার সুপারভাইজর ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছিলেন যে, ট্রাম্প কালো মানুষদের একেবারেই পছন্দ করেন না। পছন্দ করেন না কুৎসিতদের।
ডিয়াজ সেই মানুষদের একজন যিনি ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবনযাপনকে একেবারে কাছ থেকে দেখেছেন। তখনও ট্রাম্প পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষটি হয়ে ওঠেননি। ডিয়াজকে কাজের শুরুতেই মূলত ট্রাম্পের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়ে সূক্ষ্মভাবে বলে দেওয়া হয়। দক্ষ ও চটপটে হওয়ার কারণেই সান্দ্রা ট্রাম্প পরিবারের সেবাকর্মে নিয়োজিত এলিট গ্রুপে দ্রুত ঠাঁই পেয়ে যান। তারা ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতেন। এই বাড়িতেই ট্রাম্প তার স্ত্রী মেলানিয়া এবং অন্য সদস্যদের নিয়ে ছুটি কাটাতে আসতেন।
২০১৩ সালে ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসেন ডিয়াজ। তবে তার পদে আসীন হন তারই বন্ধ ভিক্টোরিনা সানান। এই মহিলা এসেছেন গুয়েতেমালা থেকে। তিনি কাজের প্রথম দিনটিতেই সুপারভাইজরকে বলেছিলেন যে, তিনি ইংরেজি বলতে পারেন না এবং তার কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তাকে বলা হয়েছিল, চিন্তা করো না। কাগজপত্রের বিষয়ে ভুলে যাও।
মাছি, প্রসাধন এবং নিয়মানুবর্তিতা
দুজন জানান, নিউ জার্সির ওই ক্লাবে দুই বাড়িতে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয় তাদের। বেডমিনিস্টারের ৫২৫ একরের ক্লাবটি ২০০২ সালে ট্রাম্প ৩৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কেনেন। এটা তার খুব প্রিয় স্থান। ম্যানহাটান থেকে মাত্র এক ঘণ্টার পথ। বলতেন, মৃত্যুর পর এখানেই যেন তাকে কবরস্থ করা হয়।
অনেক সময়ই ট্রাম্পের মন খারাপ হয়ে যেতো। কারণ তিনি ডিনারে বসলে কোত্থেকে যেন মাঝে মাঝে মাছি চলে আসতো। তিনি এগুলো খেয়াল করে দেখতেন এবং এটা একটা ফোবিয়ার মতো ছিল।
এই ক্লাবটি শহরতলীতে অবস্থিত। এর আশপাশে ছিল বেশ কয়েকটি খামার। কাজেই ট্রাম্প আসার আগে কর্মীদের পোকা-মাকড় মারার অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেতো।
কলারের দাগ
যখন তিনি ক্লাবে থাকতেন, ট্রাম্প চার সেট পোশোক পরতেন। প্রতিটি সেটই ছিল একেবারে আলাদা। ধূসর পশমীর প্যান্ট, সাদা টি-শার্ট, কালো মোজা এবং লাল বেজবল ক্যাপ- এমন ধরনের পোশাকের সেট। ডিয়াজ জানান, পোশাকের সেটগুলো ক্লোসেটে পরিষ্কার অবস্থায় রাখা সহজ ছিল না। কারণ, প্রতিটি শার্টের কলারে ট্রাম্পের মুখের প্রসাধনের দাগ লেগে থাকতো। তিনি একেবারেই ভিন্ন ঘরাণার কমলা রংয়ের মুখের প্রসাধন ব্যবহার করতেন।
বহু বছর ধরে ট্রাম্পের মুখের ত্বকের রং একটা রহস্য হয়েই ছিল। নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ভ্যানিটি ফেয়ারের মতো পত্রিকা শুধু এই বিষয়ের ওপরই আলাদাভাবে মনোযোগ দেয়। এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে দেশের বাইরে যাওয়ার সময় ট্রাম্প ট্যানিং বেড ব্যবহার করতেন এবং চোখে প্রটেক্টর লাগাতেন। আই প্রটেক্টরের মাধ্যমে তার চোখের সাথে বাকি মুখের সমন্বয় ফুটে উঠতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্পের ত্বকের রং আসলে ‘ভালোমানের জেনেটিক’ পণ্য।
আবার এটা কিন্তু কৌতুকের উৎসও হয়ে ওঠে। বিখ্যাত বেবি ট্রাম্প বেলুনে তার চেহারায় অতিরিক্ত কমলা রং ব্যবহার করা হয়েছে। ইউরোপে কয়েজন বিক্ষোভকারীর চেহারাতেও এমন রংয়ের প্রসাধন মাখতে দেখে গেছে।
অবশেষে গৃহপরিচারিকার বয়ান থেকে ট্রাম্পের এমন ত্বকের রংয়ের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। এই রং আসে একটা বিশেষ প্রসাধন থেকে যা মুখে মাখেন তিনি। আর এই প্রসাধনের সরবরাহ যেন পর্যাপ্ত থাকে তা নিশ্চিত করাও ছিল ক্লাবের কর্মীদের অন্যতম দায়িত্ব।
সান্দ্রা জানান, এই মেকআপের বোতল সবসময় নতুন দুটো রাখতে হতো। একটা ব্যবহারের জন্যে খোলা হলে আরেকটি নতুন রাখতে হতো। অর্থাৎ, যতই খোলা হোক না কেন অন্তত দুটো নতুন বোতল থাকবেই। যদি এর কোনটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হতো তবে তা জানাতে হতো মেলানিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী নোয়েমি ডারাডিক্সকে। নোয়েমি পুরনোটি ফেলে নতুনটি আনতেন।
এর আগেও ডারাডিক্স ট্রাম্পের পুত্র ব্যারনের আয়া হিসেবে কাজ করেছেন। ডিয়াজ এবং সানান যে কাগজপত্র ছাড়াই চাকরি করছিলেন তা জানতেন ডারাডিক্সি। মেলানিয়ার এই সহকারীর একটা সাক্ষৎকারের জন্যে ইউনিভিশন তার বাড়িতে ভিজিটিং কার্ড রেখে আসে। কিন্তু তিনি কোনো যোগাযোগ করেননি।
২০১৩ পর্যন্ত ওই ক্লাবে কাজ করেছেন ডিয়াজ। জানান, ট্রাম্পের এই মেকআপ ছিল তরল। তবে কোন ব্র্যান্ডটি ব্যবহার করতেন মনে নেই তার।
ডিয়াজ জানান, তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার অনেক আগে থেকেই ট্রাম্পের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে জানতেন। বেডমিনিস্টারে একবার ব্যবসায় সফলতা উদযাপনের আয়োজন হয়। সেখানে ট্রাম্প বলেছিলেন, জীবনে যা চেয়েছেন তাই তিনি পেয়েছেন। শুধু একটা জিনিস তিনি পাননি। তা হলো প্রেসিডেন্ট হওয়া। কারণ তিনি ডলার বিলে তার নাম দেখতে চান।