পকেটের শেষ কড়ি ফিরিয়ে দিল দুই কোটি
কলকাতা টাইমস :
কেট ম্যাকক্লার ফিলাডেলফিয়া যাচ্ছিলেন। ঘটনাক্রমে পথেই তার দেখা হয় এক অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে। নাম তার জনি ববিট। নিঃস্ব এক মানুষ। বাড়ি-ঘর কিংবা সংসার নেই। আর ঠিক তখনই বড় বিপদে পড়েছেন কেট।
গত মাসের ঘটনা। ফিলাডেফিয়া যাওয়ার পথে গাড়ির জ্বালানি শেষ হয়ে যায় কেটের। দুশ্চিন্তায় ছেয়ে গেলো তার মস্তিষ্ক। আশপাশে কোনো গ্যাস স্টেশন খুঁজে বের করার মতো জ্বালানিও সম্ভবত নেই তার গাড়িতে। এখন উপায়?
তখনই তার দেখা হলো ববিটের সঙ্গে। কেট যেখানে গাড়ি থামিয়েছিলেন তার কাছেই রাস্তার পাশে বসেছিলেন ববিট। হাতে কিছু একটা ধরে রয়েছেন। একটু পর ববিট বুঝতে পারলেন যে আমি বিপদে পড়েছি। তিনি আসলেন আর ঘটনা শুনলেন। আমাকে গাড়িতে উঠতে বললেন। আরো বললেন গাড়িতে বসে দরজা লাগিয়ে দিতে, ববিটের গল্পটা বলছিলেন কেট।
চলে গেলেন ববিট। কোনো একটা গ্যাস স্টেশনে গিয়ে ২০ ডলার দিয়ে গ্যাসের একটি ক্যান কিনে আনলেন। অদ্ভুত বিষয়টা হলো, ওই ২০ ডলারই ছিল তার শেষ সম্বল, জানালেন কেট।
সহায়-সম্বলহীন এই মানুষটির কাছ থেকে পাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত উপকারের প্রতিদান দেবেন বলে ঠিক করলেন কেট। দুই সপ্তাহ আগে ‘গোফান্ডমি’ পেজ এর সহায়তা নিলেন। এই পেজের মাধ্যমে বিপদগ্রস্ত মানুষ অন্যদের সহায়তা চেয়ে থাকেন। তিনি ববিটের জন্যে সাহায্য তুলতে শুরু করলেন। কেটের পরিকল্পনা ছিল, অন্তত থাকার জন্য একটা অ্যাপার্টমেন্ট, চলাফেরার জন্যে একটি গাড়ি এবং আগামী কয়েক মাস জীবন চালানোর জন্যে ১০ হাজার ডলার তুলতে হবে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার নাগাদ কেটের আহ্বানে জমা পড়লো ২ লাখ ৫২ হাজার ডলার, প্রায় ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা!
সংবাদমাধ্যমগুলো কেটের সঙ্গে দেখা করতে হন্যে হয়ে ছুটলো। যদিও তার সঙ্গে দেখা হয়নি, তবুও কেট ইমেইলে জানিয়েছে সবকিছু।
জনি আমার কাছ থেকে একটা ডলারও চাননি। আবার ওই মুহূর্তে আমি তাকে কোনো পয়সাই দিতে পারিনি। কারণ আমার কাছে নগদ ছিল না। তবে পরে তিনি বেশ কয়েকবার ববিটের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাকে কিছু অর্থ এবং জিনিসপত্র দিয়েছেন।
একদিন আমি একটা ব্যাগে করে তার জন্যে সিরিয়াল বার নিয়ে গেলাম। যেন তিনি মাঝে মাঝে খেতে পারেন, লিখেছেন ম্যাকক্লার। কিন্তু ওই মানুষটি স্বভাবজাতভাবেই পরোপকারী। আমার কাছ থেকে খাবার নিয়ে আমাকেই একটা সাধলেন খাওয়ার জন্যে।
ববিটের মতো মানুষের হৃদয়টাকে যদি বিশাল না বলি, তবে কাদের কথা বলবো আমি জানি না, স্পষ্টভাবেই বললেন কেট।
ববিট নর্থ ক্যারোলিনার বাসিন্দা। মাদকের প্রভাব এবং অর্থের অভাবে তার আজ এ অবস্থা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। গত দেড় বছর ধরে ৩৪ বছর বয়সী ববিট রাস্তায় থাকেন। রেকর্ডে দেখা যায়, ২০০১ সালে তাকে একবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
থ্যাঙ্কসগিভিং ডে এর আগেই ববিটের বিষয়ে শেষ খবর জানিয়েছেন কেট। তিনি এবং তার প্রেমিক মিলে ববিটের থাকার জন্যে আপাতত একটি হোটেল বেছে নিয়েছেন। সপ্তাহের ছুটির পরই তার জন্যে স্থায়ী ব্যবস্থায় মন দেবেন তারা।