বাবা-মা সন্ত্রস্ত থাকতেন, মেয়ের কাছে ‘এসকর্ট কার্ড’ এলো না তো !
কলকাতা টাইমস :
ভিক্টোরিয়ান যুগের আমেরিকায় চলে যান। ধরুন, উচ্চবিত্ত সমাজের এক সুন্দরী রমনী কোনো অনুষ্ঠানে এসেছেন। সেখানে এক ব্যাচেলর সুপুরুষ সুন্দরীর নজর কেড়ে নিলো। তিনি ওই লাস্যময়ীর সঙ্গে পরিচিত হতে চান। এর জন্যে তার সম্ভাব্য কিছু উপায় রয়েছে। এক, এমন একজনকে খুঁজে বের করতে হবে যিনি ওই মহিলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন। দুই, ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্বে না ভুগে সব ভুলে নিজেই যেচে পড়ে পরিচিত হতে পারেন। তিন, মহিলার কাছে একটি বিশেষ কার্ড পাঠাতে পারেন। সেখানে একটি ছবি ছাপা রয়েছে যা কৌতুক বলেও বিবেচিত হতে পারে। সেখানে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এটা ছাপানো আছে কার্ডটিতে।
১৯ শো শতকের দিকে প্রচলিত ছিল বিশেষ এই কার্ড। একে বিভিন্ন নামে ডাকা হতো। একে ‘এসকর্ট’, ‘একোয়ানটেন্স’ অথবা ‘ফ্লারটেশন’ বলা হতো। এ কার্ডের মাধ্যমে একাকী পুরুষরা পছন্দের মহিলার সঙ্গে পরিচিত হতে পারতেন। সামাজিকভাবে তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের উপায় ছিল এই কার্ড। এসব কার্ডে লেখা থাকতো, ‘মে আই আই.সি.ইউ হোম?’ আবার কিছু কার্ডে লেখা হতো, ‘ইফ ইউ হ্যাভ নো অবজেকশন, আই উইল বি ইওর প্রোটেকশন’। আবার এমনো লেখা থাকতো, ‘নট ম্যারিড অ্যান্ড আউট ফর আ গুড টাইম’।
ভিক্টোরিয়ান আমলে প্রচলিত ক্ষণস্থায়ী জিনিস নিয়ে গবেষণা করেন বারবারা রাচ। তিনি বলেন, ১৯ শতকের শেষের দিকে এসকর্ট কার্ড দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ওই সময়ে মেয়েরা ইচ্ছামতো বাইরে যেতে পারতেন না। অথবা যার তার সঙ্গে চাইলেই কথা বলতে পারতেন না। এসব কঠোর সামাজিক নিয়মকে ফাঁকি দিতে একজন পুরুষ পছন্দের নারীর কাছে গোপনে এসকর্ট কার্ড পাঠিয়ে দিতেন। কার্ডটি পাওয়ামাত্র নারীরা তা গোপনে রেখে দিতেন।
তবে এই কার্ডগুলোর গুরুত্ব কতটা ছিল তা পরিষ্কার নয়। আবার এগুলো কতটা কাজে লাগতো তাও জানা যায়নি। এসকর্ট কার্ড সংগ্রাহক অ্যালান মেস বলেন, মূলত এই কার্ড দিয়ে দুজনের আলাপচারিতা শুরু হতো। অথবা কারো সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছা সরল মনে জানান দেওয়া হতো।
সংগ্রাহক এমন এক কার্ড পেয়েছেন যাতে লেখা ‘মে আই আই.সি.ইউ হোম?’ অন্য একটি কার্ডে সম্ভবত এর বিস্তারিত লেখা হয়েছে। তাতে লেখা ছিল ‘ইউ মে সি মি হোম টু নাইট’। এসব কার্ড সাধারণত জামার হাতায় গুঁজে রাখা হতো। অনেকে নিজের নাম লিখে অন্যের পরিচয় জানতে কার্ড পাঠাতেন। যেমন, একটি কার্ডে লেখা ছিল, ‘আই অ্যাম অ্যানা বুচ এঙ্গেল। হু দ্য ডেভিল আর ইউ?’
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষরা পছন্দের নারীর কাছে এ কার্ড পাঠাতেন। সেখানে ‘ডিয়ার মিস’ বা ‘ফেয়ার লেডি’ সম্বোধনে লেখা হতো। অনেক কার্ডে এমন এক ছবি ছাপানো থাকতো যাতে দেখা যায়, একজন পুরুষ কোনো নারীকে তার বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিচ্ছেন। কোনো মহিলার কাছে সাধারণত অন্য কোনো মহিলাকে দিয়েই কার্ড পাঠাতেন পুরুষরা।
ভিক্টোরিয়ান আমলে মার্কিন মুলুকে অভিভাবকদের চোখের আড়ালে সম্পর্ক গড়তে এর দারুণ চাহিদা ছিল। তাই বাবা-মায়ের দুই চোখের বিষ ছিল কার্ডটি। বিশেষ করে মেয়ের বাবা-মা সব সময় ভীত থাকতেন, তার মেয়ের কাছে কোন এসকর্ট কার্ড এলো কিনা।