কণ্ঠস্বরই মানুষকে টানে, বিষয়বস্তু নয়!
কলকাতা টাইমস :
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বা অ্যাপল কম্পানির প্রয়াত কর্ণধার স্টিভ জবস অসাধারণ বক্তা। তবে যদি এমন ধারণা হয় যে ভাষণের সময় বিষয়বস্তুই মূল কথা, তাহলে সেটা ভুল। কিভাবে সেটা বলা হচ্ছে, তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের বক্তব্য কেউ ঠিকমতো শুনছে কি না, তা অর্ধেকেরও বেশি কণ্ঠস্বরের ওপর নির্ভর করে।
শব্দতাত্ত্বিক অলিভার নিবুয়র বলেন, ‘আমি শুধু আপনার বাচনভঙ্গি পরিমাপ করতে পারি না। আমি প্রত্যেক মানুষকে আরো ভালো বক্তা করে তুলতে পারি।’
নিবুয়রের সঙ্গে মিলে একটি পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেই লক্ষ্যে ১২ জন স্বেচ্ছাসেবীকে রেকর্ডিং স্টুডিওতে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে অর্ধেককে জুরি বা বিচারক হতে হয়েছিল। বাকি অর্ধেক বক্তা। মহাকবি গ্যেটের ‘ফাউস্ট’ নাটক থেকে তাঁদের একটি অংশ পড়ে শোনাতে বলা হয়েছিল।
জুরির সদস্যরা বক্তাদের দেখতে পারেননি, শুধু প্রত্যেকের কণ্ঠ শুনেছেন। একজনের কণ্ঠ শুনে মনে হলো, যেন অঙ্কের অধ্যাপক বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। এক বক্তা চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠেছেন, তবে কিছুটা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছেন।
নিবুয়র এক ফর্মুলার মাধ্যমে ‘নিখুঁত’ বা আরো ভালো করে বলতে হলে ‘সহজাত দক্ষতাসম্পন্ন’ কণ্ঠের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। সেই লক্ষ্যে তিনি কণ্ঠগুলোকে বিভিন্ন প্যারামিটার বা বৈশিষ্ট্যে বিভক্ত করেছেন, যেমন গতি, ছন্দ, সুর, ভলিউম বা তীব্রতা এবং বিরতি। ১৬টি এমন বৈশিষ্ট্য মাপা হয়। তার ভিত্তিতে তিনি শ্রবণের ক্ষেত্রে দক্ষতার মাত্রা স্থির করেন। সর্বোচ্চ ১০০ পয়েন্ট পাওয়া সম্ভব।
নিবুয়র কি তাঁর এই পদ্ধতির মাধ্যমে জুরির সদস্যদের রায়ের পূর্বাভাস দিতে পেরেছেন? তাঁর বিশ্লেষণ অনুযায়ী সেরা তিন বক্তা হলেন—প্রথম স্থানে নিনা, দ্বিতীয় স্থানে ফ্রেয়া ও তৃতীয় স্থানে লুকাস।
জুরি বোর্ডের রায়ও প্রায় একই হয়েছে। তাঁরাও নিনাকে প্রথম স্থানে রেখেছেন। তবে তাঁদের বিচারে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রদবদল হয়েছে। অন্যদের ক্ষেত্রে কম্পিউটার ও জুরিরা একমত।
অলিভার নিবুয়র এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কণ্ঠস্বর যোগাযোগের অতি প্রাচীন মাধ্যম। শব্দচয়ন, বাক্যগঠন ও ব্যাকরণ সৃষ্টির আগে থেকেই কণ্ঠের ব্যবহার হচ্ছে। সে কারণে আমাদের উপলব্ধি ও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কণ্ঠের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। প্রত্যেক শ্রোতা মনে মনে তার একটি ছবি সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের সিস্টেমও তা পারে।’