অনেক দিন বাঁচতে চান? কুকুর পুষুন
ওরা বলে বাড়িতে নাকি কুকুর থাকলে মন এত ভাল থাকে যে শরীর একেবারে চাঙ্গা এবং রোগমুক্ত হয়ে ওঠে। কথাটা শোনার পর প্রথমায় ভেবেছিলাম আমার সঙ্গে মজা করছে। কিন্তু পরে এই নিয়ে একটু পড়াশোনা করতে করতে যা জানতে পারলাম, তা বেজায় চমকপ্রদ! “জার্নাল সাইনটিফিক রিপোর্ট” নামক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। গবেষণা পত্রটি অনুসারে কুকুর পুষলে হঠাৎ করে মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় ৩৩ শতাংশ কমে যায়। সেই সঙ্গে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও প্রায় ৩৬ শতাংশ কম থাকে। গবেষণাটি এখানেই থেমে থাকেনি। আরও কেয়েকধাপ এগনোর পর গবেষকরা লক্ষ করেছেন, যারা একা থাকেন, তারা যদি কুকুর পোষা শুরু করেন, তাহলে একাকিত্বের কারণে নানা রোগে আক্রান্তে হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। সেই কারণেই তো বয়স্ক মানুষদের আজকাল কুকুর পোষার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। প্রসঙ্গত, ৪০-৮০ বছর বয়সি প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের উপর টানা ১২ বছর ধরে এই গবেষণাটি চালানা হয়েছিল। তাতে দেখা গেছে বাড়িতে কুকুর থাকলে হার্টের রোগের আশঙ্কা কমার পাশাপাশি আরও অনেক শারীরিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন…
১. শারীরিক সচলতা বৃদ্ধি পায়:
একাধিক গবেষণায় একথা তো বহু আগেই প্রমাণিত হয়ে গেছে যে বয়স যাই হোক না কেন, শরীর যত সচল থাকবে, তত রোগমুক্তির সম্ভাবনা বাড়বে, কমবে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। তাই তো নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা জগিং করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরো। ওহহ… আপনার হাতে জগিং করার সময় নেই! কোনও চিন্তা নেই। বাড়িতে পছন্দের একটা কুকুর নিয়ে আসুন না, তাহলেই দেখবেন কেল্লাফতে! আসলে বাড়িতে কুকুর এলে তাকে নিয়ে সকাল-বিকাল বেরাতে যেতে হবে। আর সেই সময় আপনার ছানাটির সঙ্গে কিছুটা হলেও শারীরিক কসরত হয়ে যাবে। আর তাতেই মিলবে সুফল। তাই শরীরকে যদি বুড়ো বয়স পর্যন্ত অ্যাকটিভ রাখতে চান, তাহলে একটা কুকুর ছানাকে বাড়ির সদস্য বানানো মাস্ট!
২. স্ট্রেস কমবে:
কম সময় উন্নতি করার নেশায় আমাদের মতো যুব সমাজ প্রতিনিধিরা আজকাল অফিস বা কর্মক্ষেত্রে এতটাই চাপ নিয়ে ফেলেন যে স্ট্রেল লেভেল বাড়তে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে মাঝে মাঝে এমন অবস্থা হয় যে স্ট্রেস সমালাতে না পেরে শরীর ভাঙতে শুরু করে। সেই সঙ্গে অনন্দও যেন মনের সঙ্গ ছেড়ে দেয়। এমন অবস্থায় কেউ যদি সাহায্য করতে পারে তা হল এক সারমেয়। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে দিনের শেষে বাড়ি ফিরে পোষ্যের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটালে মানসিক চাপ চোখে পরার মতো কমে যায়। সেই সঙ্গে মনও চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
৩. ক্যান্সার রোগ দূরে থাকে:
প্রথমটায় শুনতে একটি আজব লাগলেো বাস্তবিকই কিন্তু আপনার পোষ্য আপনাকে এই মারণ রোগের থেকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু কিভাবে এমনটা হয়ে থাকে? হাজারো মানুষের সঙ্গে কথা বলে বিশেষজ্ঞরা জানতে পেরেছেন যে মালিকের শরীরে কোথাও কোনও অসঙ্গতি দেখা দিলে কুকুর সঙ্গে সঙ্গে তা বুঝে গিয়ে সেখানে চাটতে শুরু করে। তাই এবার থেকে যদি লক্ষ করেন যে আপনার প্রিয় পোষ্যটি আপনার শরীরের কোনও বিশেষ অংশ বারে বারে চাটছে, তাহলে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। কারণ হতে পারে শরীরের সেই জায়গায় ক্যান্সার সেল জন্ম নিতে শুরু করেছে।
৪. অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কুকুর সঙ্গে জীবন কাটালে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় নান রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। সেই সঙ্গে সংক্রমণ ধারে কাছে ঘেঁষার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।
৫. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:
যেমনটা একেবারে শুরুতেই আলোচনা করা হয়েছে যে হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে কুকুর পোষার সরাসরি যোগ রয়েছে। আসলে পোষ্যের সান্নিধ্যে থাকলে শারীরিক সচলচা এতটা বেড়ে যায় যে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও চোখে পরার মতো কমে যায়।
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে কুকুর শরীরে থাকা বেশ কিছু উপকারি ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে একদিকে যেমন ট্রাইগ্লিসারাইড এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে, তেমনি শরীরের অন্দরের ক্ষমতাও মারাত্মক বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ জীবনের স্বপ্ন পূরণ হতে সময় লাগে না।