জলই জীবন… কিন্তু গরম
জল ছাড়া শুধু মাছ কেন? মানুষ ও বাঁচে না | শরীরকে সুস্থ রাখতে জলের গুরুত্ব অপরিসীম | তাই তো বয়স এবং শরীরের গঠন বুঝে প্রতিদিন কম করে ২-৩ লিটার জল খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা । সেই নিয়ম সামান্য বদলে যদি রোজ সকালে খালি পেটে এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ জল খেতে পারেন তাহলে শরীর এবং ত্বকের যাবতীয় সমস্যা সরিয়ে বয়স পিছু হাঁটবে | আপনি ফিরে পাবেন হারানো যৌবন | কী কী উপকার পাবেন এই নিয়ম মানলে? যেমন…
স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ে : গরম জল খাওয়া মাত্র সারা শরীর এবং মস্তিষ্কেও রক্ত চলাচল বেড়ে যায় । ফলে স্বাভাবিকভাবেই নার্ভের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মস্তিষ্কের ধারও বাড়ে।
অতিরিক্ত ওজন কমে : ওবেসিটি নিয়ে চিন্তিত? তাহলে আজ থেকেই গরম জল খাওয়া শুরু করুন । দেখবেন ফল পাবেন একেবারে হাতেনাতে । খালি পেটে গরম জল খেলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে । শরীরে বাড়তি চর্বি জমার সুযোগই থাকে না । শুধু তাই নয়, গরম জল অ্যাডিপোস টিস্যু বা ফ্যাটেদের ভেঙে ফেলেও ওজন হ্রাসে সাহায্য করে।
ঠান্ডা লাগা, গলা ব্যথার মতো সমস্যা কমায় : এই ধরনের শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় গরম জলের কোনও বিকল্প নেই । গরম জল এক্ষেত্রে রেসপিরেটারি ট্রাক্টকে পরিষ্কার করে ঠান্ডা লাগা এবং গলার অস্বস্তি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে । সেই সঙ্গে বন্ধ নাক খুলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হতেও সাহায্য করে ।
শরীর থেকে টক্সিন সরায় : যখন আমাদের রক্তে ক্ষতিকর টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে তখন কিডনিকে ওভার টাইম করে শরীর থেকে সেই টক্সিক উপাদান বের করে দিতে হয় । না হলে হাজারো রোগ হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায় । এক্ষেত্রেও গরম জল নানাভাবে সাহায্য করে । গরম জল খাওয়ামাত্র শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে । এতে ঘাম দেখা দেয় । আর ঘামের মাধ্যমে টক্সিন বেরিয়ে যেতে শুরু করে । প্রসঙ্গত, গরম জলে যদি অল্প করে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে আরও উপকার পাওয়া যায় ।
হজমের উন্নতি ঘটায় : একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে খাবার খাওয়ার পর ঠান্ডা জল খেলে পাকস্থলীর ভিতরের দেওয়ালে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে । ফলে ধীরে ধীরে পাকস্থলীর কর্মক্ষমতা কমে যায় । সেই সঙ্গে ইন্টেস্টিনাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায় । তাই খাওয়ার পর ঠান্ডা জলের পরিবর্তে হালকা গরম জল খাওয়া পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা । আসলে ঠান্ডা জলের কারণে সাধারণত যে যে সমস্যাগুলি হয়ে থাকে সেগুলি গরম জল খেলে একেবারেই হয় না । সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে । ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার কোনও সুযোগই পায় না ।
ব্রণ গায়েব গরম জলে : শরীরে টক্সিন যত কম জমবে, তত ব্রণর উপদ্রবও থাকবে না | তাই ব্রণর প্রকোপ কমাতে সকাল-বিকেল গরম জল খান । দেখবেন, অল্প দিনেই ব্রণ সেরে যাবে ।
চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে গরম জল খাওয়া শুরু করলে প্রতিটি হেয়ার সেলের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে । ফলে, চুল ঝরে যাওয়ার মাত্রা তো কমেই, চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় চোখে পড়ার মতো।
ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে : সারা দিন ধরে অল্প অল্প করে গরম জল খেতে থাকলে একদিকে যেমন শরীরে জলের ঘাটতি দূর হয়, তেমনি নানা পরিবর্তন হতে শুরু করে, যার প্রভাবে ড্রাই স্কিনের সমস্যা তো দূর হয়ই, সেই সঙ্গে রক্ত প্রবাহের মাত্রা বাড়তে শুরু করায় স্কিন টোন আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । ফলে ফর্সা ত্বকের অধিকারী হয়ে ওঠার স্বপ্নও পূরণ হয় ।
শরীরের বয়স কমে : বুড়ো হতে কে চায় বলুন তো? আপনিও চান না নিশ্চয়ই? তাহলে রোজ সকালে ঈষদুষ্ণ জল খাওয়ার অভ্যেস করে নিন আজ থেকে | গরম জল স্কিন সেলের ক্ষত সারিয়ে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় । সেই সঙ্গে ত্বক টানটান হয়ে ওঠে এবং বলিরেখাও হ্রাস পায় । ফলে বয়সের কোনও ছাপই ত্বকের উপর পড়তে পারে না । প্রসঙ্গত, শরীরে টক্সিনের মাত্রা যত কমে, তত শরীর এবং ত্বকের বয়সও হ্রাস পায় । আর গরম জল যে এ কাজটা ভাল ভাবেই করে তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না!