প্রতিদিন ঘর না মুছলে, কাপড় না কাচলে কি হতে পারে?
কলকাতা টাইমস :
কথায় বলে নিজের ঘর স্বর্গের সমান। তাই তো সেই স্বর্গকে সুন্দর রাখতে তার খেয়াল রাখাটা জরুরি। সম্প্রতি একটা গবেষণা পত্র সামনে এনেছেন একদল বিজ্ঞানী। তারা প্রমাণ করেছেন যে নিয়মিত ঘরের নানা কাজ, যেমন- ঘর মোছা, বাসন মাজা, কাপড় কাচাসহ ছোট-বড় নানা কাজ করলে শরীর এতটা কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে যে কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার।
প্রসঙ্গত, আমেরিকান জেরিয়াট্রিক সোসাটির প্রকাশ করা আরেক রিপোর্ট অনুসারে ৬৫ বছরের বেশি বয়সি মহিলারা যদি নিয়মিত ঘরের কাজ করেন, তাহলে হঠাৎ করে শরীর ভেঙে যাওয়া বা রোগ ভোগের আশঙ্কা অমেক কমে। আসলে ঘরের কাজ করলে শরীরিক অ্যাকটিভি অনেক বেড়ে যায়, যা প্রায় ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করার সমান।
ডাস্টাং-এর কেরামতি : ২০১৪ সালে জাপানি গবেষকদের করা এক কেস স্টাডিতে দেখা গিয়েছিল নিয়মিত ঘরদোর ডাস্টিং করলে নিমেষে মন ভালো হয়ে যায়। আর যদি অল্প করে লেবুর রস ফেলে মোছামুছি করা যায়, তাহলে তো কথাই নেই! কারণ এমনটাও প্রমাণিত হয়েছে যে লেবুর ঘন্ধ নাকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির কাজ করলে শরীরের সচলতা তো বাড়েই, সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে থাকে, যার প্রভাবে মন চাঙ্গা হয়ে উঠতে একেবারেই সময় লাগে না।
বিছানার দুষ্টুমি : প্রতিদিন সকালে উঠে ঘুম চোখে বিচানা ঠিক করতে মন চায় না, কি তাই তো! কিন্তু এই কাজটা করতে হবে খুব মন দিয়ে। কারণ একাদিক গবেষণা অনুসারে এই কাজটি নিয়মিত করলে একদিকে যেমন শরীর এবং মনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তেমনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কারণে নানাবিধ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে। আসলে বিছানায় শোয়ার সময় আমাদের ত্বকের উপরিংশে জমে থাকা মৃত কোষ বিচানার চাদরে জমতে শুরু করে। আর সেগুলিকে খেতে সেখানে এসে হাজির হয় একের পর এক জীবাণু। তাই তো প্রতিদিন বিচানার চাদর না ঝারলে এইসব ব্যাকটেরিয়া শরীরে আক্রমণ করার সুযোগ পেয়ে যায়। ফলে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
উঠোন পরিষ্কার করলেই হার্ট হবে চাঙ্গা : এতদিনে নিশ্চয় ভ্যাকুম ক্লিনার কিনে ফেলেছেন ঘরদোর পরিষ্কারের জন্য? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে দয়াকরে সেটি ব্যবহার করবেন না। বরং ঝাঁটা দিয়ে প্রতিদিন উঠোন এবং ঘর ঝাঁট দেওয়ার চেষ্টা করুন। এমনটা করলে কী হবে তাই ভাবছেন তো! বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে উঠোন ঝাঁট দেওয়ার সময় আমাদের সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়। তাই যাদের পরিবারে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ইতিহাস রয়েছে তারা দয়া করে ঘর ঝাঁট দিতে ভুলবেন না যেন!
বাগান করার ইচ্ছা আনুন মনে : একদল অষ্ট্রেলিয়ান গবেষকদের গবেষণা অনুসারে বাগান পরিষ্কার করার পর যে সোঁদা গন্ধ বেরয়, তা মস্তিষ্কের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন করতে থাকে যে দুখি মন চাঙ্গা হয়ে উঠতে সময়ই লাগে না। তাই খেয়াল করে দেখবেন অনেকে মন খারাপ হলেই বাগানের কাজে লেগে পরেন। মনকে ভালো রাখতে এমনটাও অপনিও করতে পারেন কিন্তু!
টবে সব্জি চাষ করুন : একবার ভাবুন তো টবে বেগুন-লঙ্কা-লেবু চাষ করলে কত ভালই না হবে। তাহলে বিউলির ডাল খাওয়ার সময় আর বাজার থেকে কিনে আনা শুকিয়ে যাওয়ার লেবুর উপর ভরসা রাখতে হবে, বাড়ির তাজা তাজা লেবু আপনার মনকে উৎফুল্লে ভরিয়ে খাবারের স্বাদ তো বাড়াবেই, সেই সঙ্গে ডিপ্রেশনও কমাবে। কিন্তু সবজি চাষের সঙ্গে ডিপ্রেশনের কী সম্পর্ক? গবেষণা বলছে সপ্তাহে কম করে ছ ঘণ্টা যদি নিজের পছন্দের কোনও সবজি চাষ করা যায়, তাহলে মানসিক চাপ অনেক কমে। সেই সঙ্গে কমতে থাকে স্ট্রেসও। আসলে চাষ করার সময় মাটি থেকে এক ধরনের উপকারি ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে প্রবেশ করে সেরাটোনিন নামক এক “ফিল গুড” হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্ট্রেস এবং ডিপ্রেশন কমতে একেবারে সময়ই লাগে না।