এই রোদ লাগতে দিন শিশুর গায়ে, নচেৎ ভোগার জন্য তৈরী থাকুন
লন্ডনের কিংস কলেজের চক্ষুবিজ্ঞানের প্রফেসর ক্রিস হ্যামন্ড বলেন, ‘আমরা জানি যে মায়োপিয়া বা দূরের বস্তু না দেখার প্রবণতা এখন খুবই সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পূর্ব এশিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এটা মহামারির পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেখানে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তরুণদের ৯০ শতাংশই মায়োপিয়ায় আক্রান্ত।’
ক্রিস হ্যামন্ড বলেন, ইউরোপে বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপে বর্তমানে ২৫ বছরের তরুণদের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ মায়োপিয়ায় আক্রান্ত। বিংশ শতাব্দীর কয়েক দশক ধরে এই হার বেড়েই চলছে।
লন্ডনের মুরফিল্ডস চক্ষু হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ দালমান নূর বলেন, এর মূল কারণ প্রাকৃতিক আলোর অভাব হতে পারে। তিনি বলেন, সরাসরি সূর্যের আলোয় না যাওয়াই এর প্রধান কারণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, শিশুদের যারা ঘরে বসে প্রচুর পড়াশোনা করে এবং যারা কম্পিউটার বা স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট কম্পিউটার ব্যবহার করে, তাদের বাইরে খেলাধুলার সুযোগ কম। এতে করে তারা সূর্যের আলোয় কম সময় থাকছে। এসব কারণে দূরের বস্তু দেখতে না পারার প্রবণতা বাড়ছে।
প্রফেসর হ্যামন্ড বলেন, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় শিশুরা মায়োপিয়ায় আক্রান্ত হয়। কারণ, সেখানকার শিশুদের ছোটবেলা থেকে অতিরিক্ত শিক্ষা চাপিয়ে দেওয়া হয়। এতে শিশুদের বিপুল সময় ঘরের ভেতরে থেকে পড়াশোনা করতে হয়। চার দেয়ালের মধ্যে বইপত্রসহ সবকিছুই তারা খুব কাছ থেকে দেখে। তারা বাইরে কম সময় কাটায়। কাছ থেকে দেখা যায়, এমন কাজে নিয়োজিত থাকা, যেমন: স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে গেমস খেলার ফলে শিশুদের দূরের বস্তু দেখার ক্ষমতা হারানো তথা মায়োপিয়ায় আক্রান্তের সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে।
তবে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট থেকে বাচ্চাদের বিরত রাখার বিষয়টি বলা যতটা সহজ, করা ততটা সহজ নয়। ড. দালমান নূর বলেন, শিশুদের বুঝিয়ে সচেতন করে এসব প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহারের মাত্রা কমানো যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে ভালো হলো, যতটা সম্ভব শিশুদের বাইরে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রফেসর হ্যামন্ড বলেন, দৈনিক দুই ঘণ্টা বাইরে কাটানোর মাধ্যমে শিশুদের দূরে না দেখার প্রবণতা থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।
হ্যামন্ড বলেন, মায়োপিয়া নিয়ে গবেষণা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। এতে দেখা গেছে, সিডনিতে বাস করা চীনা বংশোদ্ভূত শিশুরা, যারা দৈনিক দুই ঘণ্টা বাইরে কাটায়, ছয় বছর বয়সে তাদের মাত্র ৩ শতাংশ মায়োপিয়ায় আক্রান্ত। আর সিঙ্গাপুরের ছয় বছর বয়সী শিশুদের এই রোগে আক্রান্তের হার ৩০ শতাংশ। হ্যামন্ড বলেন, ‘কাজেই আবারও পরামর্শ দিই, বাইরে কাটানো আমাদের চোখের জন্য ভালো।’
একই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাবার চোখকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। দালমান নূর বলেন, ‘ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ও ভিটামিন এ, সি, ই’সহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার চোখের জন্য ভালো। আমরা মা-বাবার সঙ্গে এসব খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দিই। তেলযুক্ত মাছসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি যতটা সম্ভব বেশি করে খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রতিবছর অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন দালমান নূর।