সন্তান আসার পর সংসার কি টিকবে? জানান দেবে একটি হরমোন

কলকাতা টাইমস :
শিশুর প্রথম এক বছর বয়সের মধ্যে নতুন বাবা-মায়ের সংসার টিকে থাকবে কিনা তারা জানান দেবে একটি হরমোন। এই হরমোন সম্পর্ক সুদৃঢ় করে এবং দায়িত্বশীলতা এতে দেয়।
এক গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, গর্ভাবস্থায় মায়ের দেহে অতিমাত্রায় অক্সিটোসিন হরমোনের উপস্থিতি এবং শিশু জন্মের পর তা কমে যাওয়ার কারণে পরবর্তী আড়াই বছরের মধ্যে দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। সাগ ডিয়েগোতে অনুষ্ঠিত সোসাইটি ফর পরসোনালিটি অ্যান্ড সোশাল সাইকোলজি বিষয়ক বার্ষিক সভায় এই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
কানাডার ম্যাকগিল উইনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী এবং গবেষক জেনিফার বার্তজ বলেন, সন্তান জন্মদানের পর মায়ের দেহে অক্সিটোসিন হরমোনের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে দাম্পত্য সম্পর্ক খারাপের দিকে যেতে থাকে। শিশু বেড়ে ওঠার সঙ্গে সম্পর্ক চরম অবনতির দিকে যেতে পারে।
এ গবেষণায় উঠে এসেছে হরমোন কিভাবে সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। এ সংক্রান্ত মানসিক যাতনা থেকে বেরিয়ে আসতে সন্তান লালনের দিকে খেয়াল দিলে ইতিবাচক ফল মিলতে পারে।
লাইভ সায়েন্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বার্তজ জানান, নিউরোসায়েন্সের নিয়মে জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানসিক বিষয়কে আরো গভীরভাবে অনুধাবন করা যাবে।
অক্সিটোসিন এক শক্তিশালী মলিকিউল। প্রাণীদের মধ্যে সামাজিকতা রক্ষায় ভূমিকা রাখে এই হরমোন। এই হরমোন সন্তান জন্মের পর পিতা-মাতার সম্পর্কেও প্রভাববিস্তার করে।
এ গবেষণায় বিশেষজ্ঞ দল ৩৪১ জন গর্ভবতী নারীর মুখ থেকে স্যালিভা সংগ্রহ করেন। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের সময় একবার এবং শেষ তিন মাসের সময় আরেকবার স্যালিভা নেওয়া হয়। এরপর শিশু জন্মের ৭-৯ সপ্তাহ পর আবারো স্যালিভা নেওয়া হয়।
এ সময়ের মধ্যে এই মায়েদের ৯০ শতাংশ সংসার চালিয়ে যান। বাকিদের সংসার ভেঙে যায়। সন্তার আসার প্রথম কয়েক বছরের মধ্যে সংসার ভাঙা খুব সহজ ঘটনা নয়। দাম্পত্য সমস্যা থাকলেও সন্তানের কথা ভেঙে মানিয়ে নেন বাবা-মা। যে নারীদের বিচ্ছেদ ঘটে তাদের দেহে অক্সিটোসিনের পরিমাণ অনেক কম ছিল। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের মধ্যে অক্সিটোসিনের অভাবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে টানাপড়েন শুরু হতে থাকে। জন্মের পরও হরমোনের ঘাটতি ছিল। এ কারণে সমস্যা বাড়তেই থাকে।
অবশ্য এটা নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে না যে অক্সিটোসিনের কারণেই বিচ্ছেদ ঘটেছে। তবে অসম্ভব নয়। যে নারীর দেহে উচ্চামাত্রায় অক্সিটোসিন ছিল তারা নমনীয়তার সঙ্গে সম্পর্কের প্রতি ইতিবাচক ছিলেন। অক্সিটোসিনের উচ্চমাত্রা মানুষের মধ্যে বন্ধুসুলভ এবং আন্তরিক মনোভাব এনে দেয়। আবার এমনো হতে পারে যে, এ হরমোনের পরিমাণ নতুন মায়েদের বৈশিষ্ট্য বদলায় না। তবে তার মানসিক অবস্থা বদলে দেয়। তবে এ সময় নারীদের সম্পর্কের প্রতি নেতিবাচক মানসিকতার পেছনে অক্সিটোসিন অশনিসংকেত হয়ে উঠতে পারে।
তবে এখানে সঙ্গীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে অক্সিটোসিন সম্পর্ক বিষয়ক ধারণাকে আরো গভীরে নিয়ে যেতে পারে।