জ্বলন্ত কয়লার উপর গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটাই যখন রেওয়াজ
কলকাতা টাইমস :
বলা হয়ে থাকে কোনো দেশের সংস্কৃতি সেদেশের মানুষের অন্যতম পরিচিতি (আইডেনটিটি)। সংস্কৃতির মাধ্যমে জাতিসত্ত্বাকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয়। হোক তা মানবীয় কিংবা নৃশংস। কিন্তু কালের বিবর্তনে এবং তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অনেক দেশ ও জাতি মিশ্র সংস্কৃতির মাঝে নিজেদের স্বকীয়তা হারাতে বসেছে। তবে কিছু দেশ নিজস্ব সংস্কৃতিকে আগলে রেখেছে যুগে পর যুগ।
জ্বলন্ত কয়লার উপর গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটা
স্ত্রীর প্রসব বেদনা কমাতে এবং পুরুষকে গর্ভযন্ত্রণা বোঝাতে চীনের মানুষ পালন করেন এক অদ্ভুত সংস্কৃতি। গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে স্বামী জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হেঁটে ঘরে প্রবেশ করবে। তাদের ধারণা, এতে স্ত্রীর প্রসব বেদনা কম হবার সম্ভাবনা আছে এবং পুরুষও গর্ভযন্ত্রণার কষ্ট বুঝতে পারবে।
ভাল্লুক হত্যা এবং উপাসনা
জাপান এবং রাশিয়ার আইনু সম্প্রদায়ের কাছে ভাল্লুক হলো ইশ্বরের একটি রূপ যা মানুষের মাঝে বিদ্যমান। তাই তারা ভাল্লুক জবাই করে স্রষ্টার প্রার্থনা করে। তাদের কাছে ভাল্লুক জবাই মানবজাতির জন্য কল্যাণকর। জবাইয়ের জন্য একটি মা ভাল্লুক বাছাই করা হয়। দুই বছর ধরে প্রতিপালনের পর মা ভাল্লুকটি যখন সন্তানের জন্ম দেয় তখন সন্তানসমেত সেটিকে জবাই করা হয়। ধর্মীয় এই উৎসবের পর ভাল্লুকের রক্ত মাংস খাওয়া হয়। অতঃপর ভাল্লুকের চামড়া দিয়ে উপাসনা করা হয়।
দাঁত ছেদন
বিয়ের আগে কিংবা বয়ঃসন্ধির শুরুতে হিন্দু বালি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে দাঁত কাটার একটা রীতি প্রচলিত আছে। দাঁতগুলোকে ত্রিকোণ করে কেটে বিশেষ নকশা করা হয়। বালি সম্প্রদায়ের মতে, দাঁত হলো মানুষের ষড়রিপুর প্রতীক। লোভ, কাম লালসা, তাড়না, রাগ, ঈর্ষা ইত্যাদি কু- রিপুর প্রতীক হল দাঁত। তাই বিবাহের আগে এই দাঁত যদি সুন্দর করে কেটে ফেলা হয় তাহলে এসব নেতিবাচক বিষয় থেকে মানুষ রক্ষা পাবে।
মৃত্যুর পর গ্রামে ভ্রমণ
ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি টুরাজান বা তোরাজা আদিবাসীরা মৃত আত্নীয়-স্বজনদের কবর থেকে তুলে আনেন। তারপর মৃতদেহকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করেন। জীবিত থাকতে তার যে প্রিয় পোশাক ছিল সেটি তাকে পরিয়ে গ্রামের পথে হাঁটেন টুরাজানরা। মৃত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা আর নিজেদের মঙ্গল কামনায় টুরাজান আদিবাসীরা মানেনে উৎসব পালন করেন। জীবিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তি যে স্থানে বেশি সময় কাটিয়েছেন বা যে স্থানে মারা গেছেন, সে স্থানে কবর দেওয়া হয়। অনেক সময় টুরাজানদের সমাধিস্থ করার স্থান নিয়ে পরিবারের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যায়। তারা মনে করেন, ভুল স্থানে সমধিস্থ করা মানে মৃত ব্যক্তিকে হারিয়ে ফেলা।
মৃতের হাড়চূর্ণ করে স্যুপ
ভেনেজুয়েলা এবং ব্রাজিল সীমান্তে আমাজনের গহীন জঙ্গলে ইয়ানোমামি নামক এক উপজাতির বসবাস। যারা গোত্রের কারো মৃত্যুর পর তার মৃতদেহকে পাতা দিয়ে ঢেকে রাখেন। যাতে পোকা মাকড় মাংস খেয়ে ফেলতে পারে। এর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর পাতা সরিয়ে হাড়গুলো বের করে আনা হয়। তারপর হাড়গুলো গুঁড়ো করে রেখে দেওয়া হয়। মৃত্যুর এক বছর পর হাড়ের গুঁড়াগুলো কলার স্যুপের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়। তাদের বিশ্বাস এতে মৃতের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে।