‘পিছলা ভূতের’ আতঙ্কে গায়ের রক্ত হিম হওয়া অবস্থা গোটা গ্রামের
কলকাতা টাইমস :
সন্ধ্যা নামতেই ভূত আতঙ্কে ঘরে ঢুকে যাচ্ছে গোটা গ্রামের শিশু, মহিলা-কিশোর-কিশোরীরা। পুরুষরা লাঠি, বল্লম, দা, কুড়াল হাতে গোটা গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন। ডাঙ্গি, কোহিনূর, উত্তর মহাকালগুড়ি, শালধূরা ও ইন্দিরা কলোনিসহ শামুকতলার প্রতিটি গ্রামের রাতের ছবি এখন এটাই।
যে সে ভূত নয়, এবার পিছলা ভূত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম। রাতের অন্ধকারে বাড়ির মহিলারা কোনো দরকারে ঘরের বাইরে বের হলেই তাদের জাপটে ধরছে পিছলা ভূত। চিৎকার শুনে বাড়ির লোক ও প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ধরার চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। সারা গ্রাম এতটাই পিচ্ছিল যে, ধরতে গেলেই পিছলে পালিয়ে যাচ্ছে পিছলা ভূত।
ওই ভূতের থেকে বাঁচতে তান্ত্রিকের কাছেও ছুটছেন অনেকে। তান্ত্রিকের দেওয়া জল পড়া, তেল পড়া বাড়ির চারপাশে ছিটিয়ে দিচ্ছেন।
কেউ কেউ পূজার্চনাও শুরু করে দিয়েছেন। আবার অনেকে গ্রামে পুলিশি টহলের দাবি জানাতে ছুটছেন থানায়। ভূত আতঙ্কে গ্রামবাসীদের ঘুম হারাম।
সন্ধ্যা হতেই মহিলা ও বাচ্চারা ভয়ে সিঁটিয়ে ঘরে ঢুকে যাচ্ছেন। বাচ্চাদের পড়াশোনাও লাটে উঠেছে। পিছলা ভূতের প্রথম দেখা মেলে গত শনিবার কোহিনূর চা বাগান লাগোয়া ডাঙ্গি নতুন কলোনিতে। নিমাই বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে।
নিমাইবাবু ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। স্ত্রী অনিমাদেবী দুই সন্তান ও বৃদ্ধা শাশুড়িকে নিয়ে বাড়িতে একা থাকেন।
অনিমাদেবীর বর্ণনায়, রাত নটার মধ্যে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ১১টার দিকে হাল্কা হতে বাইরে বেরিয়েছিলাম। অন্ধকারে যেতেই কালো কুচকুচে একটি ছায়া আমাকে জাপটে ধরে। তার মতে, আমি ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে চিৎকার করে সেটিকে ধরে ফেলি। কিন্তু ওর শরীর এতটাই পিচ্ছিল যে, কোনোভাবেই ধরে রাখতে পারিনি। প্তিবেশীরা ছুটে আসার আগেই পালিয়ে যায় ও। এখনো সে মুহূর্তের কথা ভাবলে গায়ের রক্ত ঠাণ্ডা হিম হয়ে যায়।
তার পরের দিন তখন রাত সাড়ে ৭টা। ওই গ্রামের এক বাসিন্দার ১৭ বছরের মেয়ে পাশের বাড়ি থেকে টিভি দেখে বাড়িতে ফেরার সময় তাকে টেনে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। চিৎকার শুনে প্রতিবেশী এক যুবক সেটিকে ধরেও ফেলে।কিন্তু একইভাবে পিছলে পালিয়ে যায় সেটি। শামুকতলা বস্তির এক বধূ রাতে কলের পাড়ে বসে বাসন মাজছিলেন। তার মুখ চাপা দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পিছলা ভূত।
ওই বধূর কথায়, বিশাল দেহটি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ায় প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। পরমুহূর্তে গায়ের জোরে নিজেকে ছাড়িয়ে ওই বিশাল দেহটা জাপটে ধরি।
কিন্তু এতটাই পিচ্ছিল দেহ যে, মুহূর্তে হাত পিছলে ছুটে অন্ধকারে মিশে গেল সেটা। এছাড়া আরো অন্তত পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু লোকলজ্জায় সেগুলো প্রকাশ্যে আনছেন না তারা।
এটা দুষ্টু লোকের কাজ। ঘটনাগুলোর সঙ্গে যে ভূতপ্রেতের কোনো সম্পর্কই নেই সে ব্যাপারে গ্রামবাসীদের সচেতন করতে আসরে নেমেছে পুলিশ, গ্রাম পঞ্চায়েত ও রেওয়াজ নামে একটি সংস্থা। কোহিনূর গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মাইকে প্রচার শুরু হয়েছে।
কোহিনূর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রেশমা দাস বলেন, মানুষের মধ্যে যেভাবে ভূতের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সেটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এটা কিছু দুষ্টু লোকের কাজ।
এটা যে ভূত নয় সেটা বোঝাতে প্রচার শুরু করা হয়। গায়ে তেল মেখে অপকর্ম করতে আসছে, যাতে কেউ ধরে ফেলতে না পারে। পুলিশকেও বিষয়টি জানানো হয় কিন্তু লাভ কিছু হয়নি।