রেডিমেড ফলের রসে কি হতে পারে জানা আছে?
কলকাতা টাইমস :
আজকাল সবাই এত ব্যস্ত যে বাড়িতে জুস বানানোরও সময় কারও হাতে নেই। তাই তো স্বাস্থ্যসচেতন বাঙালিরও এখন প্রথম পছন্দ রেডিমেড ফলের রস। কিন্তু টেট্রা প্যাক বন্দি এই সব ফলের রস কি আদৌ স্বাস্থ্যকর?
শরীরকে সুস্থ এবং তরতাজা রাখতে প্রতিদিন সবজি এবং ফল খাওয়া যে উচিত, সে বিষয়ে সবাই অবগত। কিন্তু ডায়েটে এমন পরিবর্তন আনতে বাঁধ সাদছে কর্মব্যস্ততা। ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাত্রে শুতে য়াওয়ার আগে পর্যন্ত সবাই যেন দৌড়ে চলেছে। তাই তো শরীর বাবাজিকে ঠিক রাখতে ভরসা রাখতে হচ্ছে প্যাকেটজাত সবজি এবং ফলের রসের উপর। কিন্তু একাধিক গবেষণা বলছে প্যাকেটজাত এই সব ফলের রস শরীরের পক্ষে একেবারেই উপকারি নয়। কারণ…
১. শুধু চিনি আর চিনি:
একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে বাজারে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ প্যাকেটজাত ফলের রসেই এত মাত্রায় চিনি থাকে যে ফলের কোনও গুণই আর অবশিষ্ট থাকে না। কারণ বেশি মাত্রায় চিনি মোটেই শরীরে পক্ষে ভাল নয়। এতে দেহের অন্দরে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ওজন বৃদ্ধির মতো সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এবার থেকে যদি সুযোগ থাকে তাহলে আর আর্টিফিশিয়াল ফলের রস নয়, বরং বাড়িতে বানিয়ে তাজা রস খাওয়ার চেষ্টা করুন। তাতে ফল পাবেন বেশি।
২. নকলে ভরা:
পছন্দের ফল দিয়ে বাড়িতে বানানো রসে কেউ নিশ্চয় আর্টিফিশিয়াল রং মেশায় না, কী মেশায় নাকি! তাই তো বাড়িতে বানানো ফলের রসের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এদিকে প্যাকেটজাত প্রায় সব ফলের রসেই অল্প হলেও এমন রং মেশানো হয়ে থাকতে। তাই দেখতে খাসা লাগলেও শরীরের জন্য এমন রস কতটা উপকারি, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
৩. পুষ্টির ঘাটতি থাকে:
টেট্রা প্যাকে বিক্রি হওয়া ফলের রস বানানোর সময় অনেক ক্ষেত্রেই ফলের বেশিরভাগ অংশই, বিশেষত খোসাটা ফেলে দেওয়া হয়। ফলে জুসের গুণাগুণ কমতে কমতে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকে। যেমন আঙুরের কথাই ধরুন না। বাড়িতে আঙুরের রস বানানোর সময় আমরা মিক্সিতে পুরো আঙুরটাই দিয়ে দি। ফলে ফলটির খোসায় থাকা একাধিক উপাকারি উপাদান আমাদের শরীরে প্রবেশ করে নিজের খেল দেখানোর সুযোগ পায়। কিন্তু সেই একই আঙুরের রস যখন প্য়াকেটে পাওয়া যায়, তাতে কিন্তু সেই গুণ থাকে না। কারণ বহুজাতিক কোম্পানিগুলিতে একেবারে অন্য় পদ্ধতিতে ফলের রস বানানো হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন সেই ফলের রস যাতে পানের যোগ্য থাকে, তা সুনিশ্চিত করতে এমন অনেক উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা জুসের গুণকে আরও কিছুটা কমিয়ে দেয়।
৪. ভিটামিন এবং মিনারেল হারিয়ে যায়:
বেশিরভাগ প্যাকেটজাত ফলের রসই বানানোর পরে ফোটানো হয়, যাতে তার মধ্যে কোনও ব্যাকটেরিয়া থাকতে না পারে। এমনটা করাতে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে ফলের রসের অন্দরে থাকা অনেক ভিটামিন এবং মিনারেলও নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এমন রস খেয়ে আদৌ শরীরের কোনও লাভ হয় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। অন্যদিকে বাড়িতে বানানো ফলের রস ফোটানোর দরকার পরে না। ফলে এমন রস পান করলে শরীরের উপকার হতে কেউই আটকাতে পারে না।
৫. ছেঁকে ফেলা হয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টকে:
শরীরের অন্দরে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দেওয়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতিতে এবং ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই উপাদানটি অনেক মাত্রায় থাকে ফলের রসে। তাই তো প্রতিদিন এক গ্লাস করে ফলের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। তবে এক্ষেত্রে একটা জিনিস জেনে রাখা প্রয়োজন যে প্যাকেটজাত ফলের রস বানানোর সময় রসটাকে এত মাত্রায় ফিল্টার করা হয় যে তার শরীর থেকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপাটিজ সব বেরিয়ে যায়। তাই শরীরকে যদি সুস্থ রাখতে হয়, তাহলে প্যাকেটজাত নয়, খাওয়া শুরু করুন বাড়িতে বানানো ফলের রস।