৫টি ‘অভিশাপ’ দিয়েই ঢাকা মহিলার কবর

গ্রিসের এথেন্সে ২৪০০ বছর আগের এক মহিলার সমাধিস্থলে মিললো দারুণ ইতিহাস। সেখানে মিলেছে ৫টি ফলক। এথেন্সের কয়েকটি পানশালার কয়েকজন মানুষের অভিশাপ ছিল ফলকগুলো।
৪টি ফলকে খোদাই করে অভিশাপের কথা লেখা হয়েছে। অন্ধকার দুনিয়ার দেবতা ‘সিথোনিক’-এর কাছে অনুরোধ করা হয়েছে এথেন্সের কয়েকটি পানশালার চার জোড়া স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে। পঞ্চম ফলকটি ফাঁকা ছিল। সম্ভবত এই ফলকের ওপর মুখে অভিশাপের কথাগুলো উচ্চারণ করা হয়েছে।
একটি লোহার দণ্ডের মাধ্যমে ৫টি ফলককে এক করা হয়েছে। এগুলো গুছিয়ে ওই সমাধিস্থলে রাখা হয়। ওই সমাধি থেকে অভিসম্পাত সংশ্লিষ্ট দেবতার কাছে পৌঁছে যাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। প্রাচীনকালে মানুষের ধারণা এমনটাই ছিল।
একটি অভিশাপের ফলকে দিমেত্রিওস এবং পানাগোরা নামের দুইজনকে উপলক্ষ করা হয়েছে। সেখানে যা লেখা রয়েছে তার ভাষা অনেকটা এমন- তোমরা পানাগোরা ও দিমেত্রিওস এবং তাদের পানশালা ও সম্পদের ওপর ঘৃণা বর্ষণ করো। আমার শত্রু দিমেত্রিওস এবং পানাগোরাকে আমি অন্ধ করে দেবো, রক্ত ও ছাইয়ের মাঝে, অন্যান্য মৃতের সঙ্গে…। আমি দিমেত্রিওসকে এমন শক্তভাবে বাঁধবো, যতটা শক্তভাবে সম্ভব, এবং আমি তোমার জিহ্বায় একটা কাইনোটোস দিয়ে আঘাত করবো।
কাইনোটোস শব্দের অর্থ আসলে কুকুরের কান। এটা প্রাচীন গ্রিসের জুয়ার একটি চাকতির নাম, যার মাধ্যমে সবচেয়ে কম মূল্যের কিছু বোঝানো হতো।
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির প্রশিক্ষক জেসিকা ল্যামোন্ট সম্প্রতি ‘জিৎসরিফ্ট ফার প্যাপিরোলোগি আন্ড এপিগ্রাফিক’ জার্নালে গবেষণাপত্রে এসব তথ্য প্রকাশ করেছেন। একটি মানুষের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে পেরেক ঠোকানোর মতো কর্মকাণ্ড যেমন হবে, অভিশাপপূর্ণ ফলকের মাধ্যমে তেমন চিত্রই মূলত ফুটে উঠেছে।
২০০৩ সালে গ্রিসের ইফোরেট ফর প্রিহিস্টোরিক অ্যান্ড ক্লাসিক্যাল অ্যান্টিকুইটিস-এর পুরাতত্ত্ববিদরা এক নারীর সমাধিস্থল খোদাই করে ফলকগুলো খুঁজে পান। পিরাউইসের উত্তরে সমাধিটির সন্ধান মেলে। এটা পোর্ট অব এথেন্সের কাছেই। তবে কবরটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ফলকগুলো নিয়ে গবেষণা করছিলেন।
লাইভ সায়েন্সকে ল্যামোন্ট জানান, অভিশাপ সম্বলিত ফলকগুলোকে কার্যকর করতে হলে তা সমাধিতে রাখার নিয়ম পালন করা হতো প্রাচীন গ্রিসে। এমন একটি স্থান দেবতার সঙ্গে মৃত বা ফলকের যোগাযোগ ঘটবে বলে বিশ্বাস করা হতো। হয়তো মৃত নারীর সঙ্গে এই অভিশাপের কোনো সম্পর্ক নেই। হয়তো অভিশাপ প্রদানকারী ওই সময়েই এই নারীর কবরে ফলকগুলো রেখে দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যান।
তবে যেহেতু ফলকগুলো সেখানে রাখা হয়েছিল, কাজেই ধরে নেওয়া যায়, সমাধিস্থলে প্রবেশের ব্যবস্থা ছিল। ফলকে লেখা কথাগুলো স্পষ্ট ছিল। সম্ভবত কোনো পেশাদার অভিশাপ লেখক এগুলো খোদাই করে লিখেছিলেন। মারাত্মক ভাষায় বেশ অনেক সময় ধরে অভিশাপ প্রদানের বিষয়টি এতদিন পর উদ্ধার হওয়ার বিষয়টি সত্যিই বিরল।
যিনি অভিশাপ লিখতেন, তিনি সম্ভবত অন্যান্য অতিপ্রাকৃতিক সেবা প্রদান করতেন। বা অভিশাপ কার্যকর হওয়ার বিষয়ে দেবতাদের কাছে সুপারিশ করার মতো কাজও করতেন তিনি।
ল্যামোন্টের মতে, যিনি অভিশাপ করেছেন, সম্ভবত তিনি পানশালার মালিক ওই চার জোড়া স্বামী-স্ত্রীর প্রতিযোগী ব্যবসায়ী। তাদের সঙ্গে তার বিরোধও থাকতে পারে।