আবছা আঁধারের রাইটার্স ভূত রহস্য !
কলকাতা টাইমস :
ভূত শব্দটার মধ্যে রয়েছে অজানা রহস্য। রয়েছে গা ছম ছম করা ভাব। ভূত আছে কি নেই এ নিয়ে গবেষণাও হয়েছে বিস্তর। অদৃশ্য, অলৌকিক, কাল্পনিক অবয়বটি কি আসলেই আছে! একটু গভীরভাবে ভাবলে হয়তো মনে হবে এর কোনো অস্তিত্বই নেই। এটা গুরুত্বপূর্ণও নয়। কিন্তু এসব প্যারানরমাল অ্যাক্টিভিটিজ খুলে দিচ্ছে অজানা রহস্যের দরজা। রয়েছে এসব মিথের আড়ালে রহস্যময় গল্পগুচ্ছ। যা অনেকের কাছেই অজানা। রাতকে দিন করে দেওয়ার মতো আলোর ম্যাজিক রয়েছে এখানে। এমনই এক বিল্ডিং কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং।
টমাস লায়ন্সের নকশায় ১৭৭০ সালে স্থাপিত হয় রাইটার্স বিল্ডিং, যার বাংলা নাম মহাকরণ। এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাক্তন প্রশাসনিক ভবন। তবে শুরুর দিকে, ১৭৭৬ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইউরোপীয় কেরানিদের বসবাসের জন্য উনিশটি পৃথক অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করা হয় এখানে, যেগুলি দেখতে ছিল সারিবদ্ধ দোকানের মতো। তখনকার দিনে এই কেরানিদের বলা হতো রাইটার। তাদের থেকেই ভবনটির নাম হয়েছে রাইটার্স বিল্ডিং।
কলকাতা শহরের বুকে এত পুরনো ও প্রকাণ্ড একটি দালান থাকবে, আর তার নামে ভূতুড়ে অপবাদ জুটবে না, তা কি আর হয়! স্থানীয়দের মধ্যে যারা একদম দিনের শেষ ভাগে, রাইটার্স বিল্ডিং প্রায় নির্জন হয়ে যাওয়ার পর সেখানে গিয়েছেন, তারা কার যেন ফিসফিসানি, হাসি, এমনকি আর্তচিৎকারের আওয়াজ পর্যন্ত শুনতে পেয়েছেন। একটি জনপ্রিয় অভিমত হলো, এসব ভূতুড়ে শব্দের পেছনে দায়ী ব্রিটিশ আমলের কতিপয় বিপ্লবী।
দিনের বেলায় সরকারি কাজের দরকারি দপ্তর। রাতে এখানেই শুন্য লবিতে কি সব নাকি হয়। সন্ধ্যার পর কেউই এই বাড়িটিতে থাকার সাহস দেখান না। যারা রাত কাটিয়েছেন, তাদের অনেকেই মাঝরাতে হঠাৎ কান্না, হাসি কিংবা চিৎকারের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। নাইট গার্ডরা বলেন এখানের পাঁচ নম্বর ব্লক জায়গাটা নাকি সুবিধের নয়। বারান্দা দিয়ে কারা যেন হেঁটে বেড়ায়। শোনা যায়, টাইপের শব্দ। মনে হয়, খুব মনোযোগ দিয়ে কারা যেন কাজ করছেন। দোতলায় সিঁড়িতে কারা যেন ভেসে উঠেই মিলিয়ে যায়। হঠাৎ করে কে যেন চিৎকার করে ওঠে। যদিও এসবের কোন সদুত্তর মেলাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
তবে ইতিহাস বলে এখানেই এক সময় ছিল ভাং আর কলা গাছের জঙ্গল। একবার বেশ কয়েকজন ব্রিটিশকে এখানে কবর দেওয়া হয়ছিল। লর্ড ভ্যালেন্টিনে লেখায় তথ্য মেলে দিল্লি থেকে আসা নব্য রাইটারদের মধ্যে ঘোড়ায় টানা গাড়ির খেলা কিংবা ডুয়েল চলতো। এতে করে সর্বদাই লেগে থাকতো খুন জখম। এমন বহু ঘটনার কথা আজও কলকাতাবাসীর মুখে মুখে। বিনয়, বাদল, দিনেশের হাতে কর্নেল সিমসনের ঘটনাও কি ফেলে দেওয়া যায়! এসব ঘটনার আগে এখানে সরকারী কর্মীরা থাকতো। এরপর বহু দশক ধরেই ভবনটির বহু ঘর বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। বলাবাহুল্য বর্তমানে রাজ্য সরকারের দফতর নবান্ন হয়ে যাওয়ায় ফের পরিত্যাক্ত স্থলে ভৌতিক কর্মকাণ্ড একদম কমেনি।