এক ব্রতে না খাইয়েও ৮৮ হাজার ব্রাহ্মণ ভোজন করানোর সমতুল্য ফল
যোগিনী একাদশী ব্রত পালন করলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিশ্বাস করা হয় যে, এইদিন উপবাস করলে পরলোকে মোক্ষ প্রাপ্তি হয়। আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীকে যোগিনী একাদশী বলা হয়। যোগিনী একাদশী পালন করলে কোনও ব্যক্তি ৮৮ হাজার ব্রাহ্মণকে ভোজন করানোর সমতুল্য ফল পান। এই বছর যোগিনী একাদশীর তারিখ কবে পড়েছে তা জেনে নিন, পাশাপাশি পূজার শুভ সময় এবং গুরুত্বও জানুন। যোগিনী একাদশী ব্রত হিন্দু পঞ্জিকা মতে, আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে যোগিনী একাদশী ব্রত পালন করা হয়।
যোগিনী একাদশী পূজা বিধি যোগিনী একাদশীর দিন ব্রতীকে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। স্নানের পরে ব্রত করার সংকল্প করুন। গৃহের মন্দির পরিষ্কার করুন এবং গঙ্গার জল ছিটিয়ে পূজার স্থানটি শুদ্ধ করুন। এবার ভগবান বিষ্ণুর প্রতিমা বা ছবিকে গঙ্গাজল মেশানো জলে স্নান করান। ভগবানের সামনে প্রদীপ জ্বালান এবং বিষ্ণুর স্তব করুন। ভগবান বিষ্ণুর কাছে তুলসী খুবই প্রিয়, তাই তুলসী পাতা তাঁর পুজোতে অবশ্যই ব্যবহার করুন। ভগবান বিষ্ণুর আরতির মাধ্যমে পূজা সম্পন্ন করুন। একাদশীর দিন সন্ধ্যায়ও বিষ্ণুর সামনে প্রদীপ জ্বালান। বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠ করুন। দ্বাদশী অর্থাৎ পরের দিন, স্নানের পরে মুহুর্ত দেখে আপনার ব্রত ভাঙুন। সবার আগে ভগবান বিষ্ণুকে ভোগ অর্পণ করুন। ভোগের জন্য আপনি কিছু মিষ্টি প্রস্তুত করতে পারেন। ব্রাহ্মণ বা অভাবীদের আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী ভোজন করান এবং আর্থিক সহায়তা দিন।
যোগিনী একাদশীর গুরুত্ব
যোগিনী একাদশীর সাথে সম্পর্কিত কথা অনুসারে, হেম নামে একজন মালী ছিলেন। প্রতিদিন শিব পূজার জন্য তিনি ফুল তুলে যক্ষরাজ কুবেরকে দিতেন। হেমমালির এক পরমা রূপবতী পত্নী ছিল। একদিন তিনি তাঁর স্ত্রীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়লেন, আর রাজভবনে যাওয়ার কথাও ভুলে গেলেন। এদিকে পূজার সময় চলে যাচ্ছে দেখে রাজা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। দূত পাঠিয়ে রাজা জানতে পারলেন মালির দেরি হওয়ার আসল কারণ। শুনে রাজা আরও ক্রুদ্ধ হলেন এবং তাঁকে দেখা মাত্র রাজা ক্রোধবশে তাঁকে অভিশাপ দিলেন। অভিশাপের কারণে তাঁর কুষ্ঠ রোগ হয়ে যায়। ফলে হেম মালি দীর্ঘকাল যাবৎ কুষ্ঠরোগ ভোগ করতে লাগলেন। রোগের যন্ত্রণায় বহুকষ্টে তিনি জীবনযাপন করতে লাগলেন।
এরপর এক তিনি ঋষির কাছ থেকে তিনি যোগিনী একাদশী ব্রত সম্পর্কে অবহিত হন। এই ব্রত করার ফলে তাঁর কুষ্ঠরোগ নিরাময় হয় এবং তখন থেকেই এই একাদশীর গুরুত্ব লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠরকে যোগিনী একাদশী ব্রতর গুরুত্ব বলতে গিয়ে জানিয়েছিলেন যে, ৮৮ হাজার ব্রাহ্মণকে ভোজন করানোর পরে যে পুণ্য পাওয়া যায় তার সমান পুণ্য প্রাপ্তি যোগিনী একাদশী ব্রত করলে পাওয়া যায়। যে ব্যক্তি এই মহাপাপ বিনাশকারী ও পুণ্যফল প্রদায়ী যোগিনী একাদশীর কথা পাঠ এবং শ্রবণ করে সে অচিরেই সর্বপাপ থেকে মুক্ত হয়।