করোনায় শুক্রাণুর কি হাল হয় জানলে চমকে উঠবেন !
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মানুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। শুক্রাণুর সংখ্যা শূন্যেও নামিয়ে আনতে পারে। ইতালির ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা এই উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে।
সংক্রমণমুক্ত হয়ে ওঠার এক মাস পর কভিড রোগীদের বীর্য পরীক্ষা করে দেখেছিলেন গবেষকরা। যাঁদের বীর্য পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাঁদের বয়স ৩০ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। এই বয়সী ৪৩ জনের বীর্যের নমুনা পরীক্ষা করে গবেষকরা দেখেছেন, অন্তত ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে।
কম করে ২০ শতাংশের বীর্যের নমুনায় কোনো শুক্রাণুই পাওয়া যায়নি। গবেষকদের ধারণা, করোনা সংক্রমণের ফলে তাঁদের বীর্যে শুক্রাণু পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বীর্যে কোনো শুক্রাণু না থাকলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় সেই রোগটিকে বলা হয় ‘অ্যাজুস্পার্মিয়া’। গোটা বিশ্বেই অ্যাজুস্পার্মিয়া রোগীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা দেখিয়েছে, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশই ভোগে এই রোগে।
এর আগে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাড়ি বা আশপাশে প্লাস্টিক ও কীটনাশকের খুব বেশি ব্যবহার, কোনো যৌন রোগ বা সংক্রমণ, মানসিক চাপ, অবসাদ, শরীরের স্থূলতা, নিদ্রাহীনতা অথবা খুব বেশি সময় ধরে টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে মজে থাকলে মানুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা যথেষ্টই কমে যায়।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্রমণমুক্ত হয়ে ওঠার মাসখানেক পর অন্তত ২০ শতাংশ কভিড রোগী অ্যাজুস্পার্মিয়ার শিকার হয়েছেন। গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, যাঁদের সংক্রমণ অল্প হয়েছিল তাঁদের বীর্যে শুক্রাণু পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা তেমন ঘটেনি। কিন্তু যাঁদের সংক্রমণ খুব বেশি হয়েছিল, হাসপাতালে বা নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) যাঁদের বেশ কয়েক দিন কাটাতে হয়েছিল সংক্রমণমুক্ত হওয়ার জন্য, তাঁদের অনেকেই অ্যাজুস্পার্মিয়ার শিকার হয়েছেন।
তবে গবেষকরা অবশ্য জোর দিয়ে বলেননি করোনা সংক্রমণের জন্যই মানুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গেছে। আসলে তাঁরা এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেননি। কারণ, সংক্রমণমুক্ত হওয়ার পর যাঁদের বীর্যের নমুনা তাঁরা পরীক্ষা করে দেখেছিলেন, সংক্রমণের আগে তাঁদের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কত ছিল সেই তথ্য তাঁরা পাননি। তবে এটা তাঁরা দেখেছেন, সুস্থ, সবল মানুষের বীর্যে স্বাভাবিক অবস্থায় যতগুলো শুক্রাণু থাকা উচিত, সদ্য করোনামুক্ত হওয়া রোগীদের অনেকেরই বীর্যে সেই সংখ্যায় শুক্রাণু ছিল না। আর কিছুদিন আগেও তাঁরা বাবা হয়েছেন। ফলে কিছুদিন আগেও যে তাঁদের বীর্যে কোনো শুক্রাণুই ছিল না, তা কিন্তু নয়। এর থেকে গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, এই কভিড রোগীরা আগে অ্যাজুস্পার্মিয়ার শিকার হননি। হলে তাঁরা সন্তানের জন্ম দিতে পারতেন না। কিন্তু কভিড সংক্রমণমুক্ত হয়ে ওঠার এক মাস পরই তাঁদের বীর্যে কোনো শুক্রাণুর খোঁজ মেলেনি।