কলকাতা টাইমস :
দুচোখ ভরে অনুভব করো একে । তবুও এ সুন্দরীকে দেখার সাধ মিটবে না। এর নাম নাগাল্যান্ডকে। পাহাড়, উপত্যকা, নদী, ফুল আর প্রাচীন জনজাতির কয়েকশো বছরের পুরনো ঐতিহ্যময় জীবনযাত্রা সুন্দরী নাগাল্যান্ডের আকর্ষণ।নাগাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বর্ণময় লোকনৃত্য। নাগাল্যান্ডে যেতে ইনারলাইন পারমিট লাগে।
ডিমাপুর (Dimapur)- নাগাল্যান্ডের প্রবেশপথ। প্রাচীনকালে ডিমাপুর ছিল কাছারি রাজ্যের রাজধানী। শহরের মাঝে কাছারি রাজাদের প্রাসাদের ধ্বংসস্তূপ দেখতে পাওয়া যায়। ডিমাপুর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে ইনটাকি অভয়ারণ্য (Intaki Wildlife Sanctuary)। এখানে দেখা মিলবে হাতি, বাঘ, মিথুন এবং বেশ কয়েক প্রজাতির হরিণের।
কোহিমা (Kohima)- ১৪৯৫ মিটার উচ্চতায় নাগাল্যান্ডের রাজধানী এবং প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। এখানকার আবহাওয়া খুব ঠান্ডা ও মনোরম। শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে বিখ্যাত কোহিমা ওয়ার সিমেটারি (Kohima War Cemetary) -দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ সৈনিকদের সমাধিস্থল। এখানেই ১৯৪৪-এর এপ্রিলে ঐতিহাসিক কোহিমার যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে জাপানি সহযোগিতায় নেতাজীর আজাদহিন্দ বাহিনী। যদিও সমাধিস্থলের ফলক অন্য কথা বলে। আরেকটি দর্শনীয় স্থান এশিয়ার প্রাচীনতম ও বৃহত্তম কোহিমা গ্রাম। অঙ্গামী নাগাদের বাসস্থান। স্থানীয়রা এটিকে বড়াবস্তিও বলেন। নাগারা আজও বিশ্বাস করে এই স্থানটি থেকেই কোহিমার শুরু। এই গ্রামে ঢোকার সাবেকি তোরণদ্বারে ঐতিহ্যশালী নাগা পোশাক ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত যুবক-যুবতীরা স্বাগত জানায়।
এখানকার স্টেট মিউজিয়ামে উপজাতির ব্যবহৃত গয়না, মাঙ্গলিক বাদ্যযন্ত্র, প্রাচীন মুদ্রা, স্থানীয় জীবজন্তুর মূর্তির প্রদর্শনী সাজানো রয়েছে। কোহিমার চিড়িয়াখানায় দেখা যায় হরিণ, মিথুন এবং সোনালী লাঙ্গুর।
শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ৩৯৪৩ মিটার উচ্চতার জাপফু পিক থেকে কোহিমা শহর ও চারপাশের তুষারশুভ্র হিমালয়ের দৃশ্য অপরূপ। পশ্চাৎপটে জুকু উপত্যকা। কোহিমা থেকে ২০ কিমি দূরে রয়েছে খোনোমা গ্রাম। এখানে ব্রিটিশ ও নাগা যুদ্ধের স্মৃতিমাখা একটি প্রাচীন দুর্গ আছে। মণিপুর থেকে বেড়িয়ে নেওয়া যায় মকোকচুং, ওখা, ফেক, মন, জানুবট, তুয়েংসাং প্রভৃতি জায়গাগুলি।
নাগাল্যান্ডের বিভিন্ন বাজারে ঘোরা আর এক অভিজ্ঞতা। গ্রামের মহিলারা রঙিন পোশাকে সেজে তাঁদের জমিতে উৎপন্ন শস্য, বন থেকে সংগ্রহ করা সামগ্রী, নদী ও ঝরনার মাছ বিক্রি করেন।
যাওয়াঃ কলকাতা ও গুয়াহাটির সঙ্গে ডিমাপুরের বিমান সংযোগ রয়েছে। যাঁরা সড়কপথে যেতে চান তাঁরা গুয়াহাটি থেকে ডিলাক্স বাস পাবেন। রেলস্টেশনও ডিমাপুর (DMV)।
থাকাঃ কোহিমা ও ডিমাপুরে বেশকিছু হোটেল রয়েছে। কোহিমায় সরকারি লজটি শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটা টিলার মাথায়।
খাওয়াঃ নাগাদের পছন্দের খাবার মাংস, বিভিন্ন ধরনের মাছ এবং মাশরুম ও বাঁশের ফুল সহ কিছু শাকসবজি। নাগাদের খাবার খুবই সাদামাটা এবং মশলাবিহীন।
উৎসবঃ যেহেতু অধিকাংশ নাগাই খ্রিস্টান তাই গোটা রাজ্যেই উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে প্রতিবছর বড়দিন পালিত হয়। এছাড়াও সারাবছরই রাজ্যজুড়ে হয় নানা লোক উৎসব। এরমধ্যে ফেব্রুয়ারিতে সেক্রেনি, মে মাসে মোয়াৎসু, জুলাই মাসে তুলুনি, আগস্ট মাসে সুংরেমমং, নভেম্বরে তোখু ইমং, ডিসেম্বরে হর্নবিল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। রাজ্য পর্যটনের আয়োজনে হয় সামার ফেস্টিভ্যাল ও অটাম ফেস্টিভ্যাল। এছাড়াও গরমের সময় পুষ্প প্রদর্শনী ও শরতে অর্কিড প্রদর্শনী দর্শনীয়।
কেনাকাটাঃ নাগাল্যান্ডে গেলে নাগা শাল এবং কাঠ ও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র কেনা যায়।