May 19, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

শর্ত করে বলতে পারি পিরিয়ডের রহস্য আপনার জানা নেই 

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 
মনুষ্য প্রজাতির কাছাকাছি থাকা প্রাণীদের বাদ দিলে শুধুমাত্র হাতি এবং বাদরেরই পিরিয়ড হয়। কিন্তু অন্য প্রাণীদের মধ্যে যারা সন্তান জন্ম দেয় তাদের আমাদের মত রক্তস্রাব হয় না। যারা আমাদের মত সরাসরি বাচ্চার জন্ম দেয়; শুধুমাত্র হাতে গোনা কয়েকটি প্রজাতিরই ঋতুস্রাব হয়, এমন তথ্যই পাওয়া যায়। সুতারং বলা চলে পিরিয়ড শুধুমাত্র কষ্টকর এবং ঝামেলাদায়কই নয় এটা একটা রহস্যজনকও বটে। 
কেন সকল নারীরই ঋতুস্রাব হয়? আর এটা যদি খুব ভালই হয়ে থাকে, তবে অন্য প্রাণীদের এরকমটি হয় না কেন? ঋতুস্রাব নারীদের প্রজনন চক্রের অংশ। নারী গর্ভে প্রতিমাসে প্রজনন হরমোন ওয়েস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টোরন জমা হয়ে গর্ভধারণের উপযুক্ত হয়। প্রক্রিয়াটি সম্পাদনে নারীগর্ভের এন্ডোমেট্রিয়াম নামের একটি আস্তরণ ভ্রুণ তৈরিতে কাজ করে। এন্ডোমেট্রিয়ামের ওই আস্তরণ বেশ কয়েকটি ধাপে বিভক্ত হয়ে রক্তের শিরাগুলোর মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে। ওই সময়ে মহিলা গর্ভবতী নাহলে প্রোজেস্টোনের স্তর নীচে নামতে থাকে। তখন এন্ডোমেট্রিয়াল ও রক্তের শিরা ওই রক্তকে আর ধারণ করতে পারে না এবং বের হয়ে যায়। এই রক্তপাতই ঋতুস্রাব নামে পরিচিত। তিন থেকে সাত দিন স্থায়ী ঋতুস্রাবকালে মহিলারা  ৩০ থেকে ৯০ মিলি লিটার ফ্লুইড নারীর শরীর থেকে বের হয়। 
বিজ্ঞানীরা নারীদের ঋতুস্রাবকালে ব্যবহৃত প্যাড এবং পট্টির পূর্বেকার ওজন এবং স্রাবের পরবর্তীকালের ওজন নির্ধারণের মাধ্যমে ফ্লুইড নির্গত হওয়ার এ তথ্য দিয়েছেন। এ বিষয়টিকে অনেকেই ক্ষতিকর মনে করেন। এবং অনেকের মনে প্রশ্ন, এটা কেন হয়? 
ইউনিভার্সিটি অব লিলিনয়েস ইন আরবানার নৃবিজ্ঞানী কেথরিন ক্লান্সি বলেন, পিরিয়ড সম্পর্কে মানুষের পূর্বে ধারণা ছিল এই মাধ্যমে নারীদেহ থেকে টক্সিন বেরিয়ে পড়ে। ১৯২০ সালে বেলা সাচিক নামের এক চিকিৎসক এক পরীক্ষায় দেখতে পান ঋতুস্রাবের সময় নারীর ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। ওই সময়কার অনেক গবেষকই বলেন, ঋতুস্রাবের রক্ত গাছকে নির্জীব করে তোলাসহ বিয়ার কিংবা ওয়াইনের ক্রিয়াকে নষ্ট করে দিতে পারে। তবে ওই সময়কার গবেষণা তথ্যগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার মত তেমন কোন প্রমাণ দেখানো হয়নি। ১৯৯৩ সালে নারীর ঋতুস্রাব নিয়ে নতুন এক ধারণা সংবাদমাধ্যমের নজরকাড়ে। সেসময় মার্কি প্রোফেট নামের এক গবেষক, অতঃপর ক্যালিফোর্নিয়া বার্কেলি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তথ্যে বলা হয়, বীর্যবাহিত ভাইরাসকে গর্ভে প্রবেশের বাঁধাদানের ফলেই নারীর ঋতুস্রাব হয়। এ সম্পর্কে ক্লান্সি নামের একজন বলেন, নারীদের অপরিষ্কার বলার পরিবর্তে পুরুষদেরকেই অপরিষ্কার বলা উচিত। কারণ আমরা যাতে যৌন-সংক্রমিত না হই সেজন্য পুরুষদের দূষণকে আমাদের শরীরকে পরিষ্কার করতে হয়। তবে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে প্রোফেটের সেই তথ্য বেশিদিন টেকসই হয়নি। ধারণা করা হত ঋতুস্রাবের হওয়ার আগেই নারীর গর্ভ যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিছু কিছু গবেষণা তথ্যে দেখা গেছে, ঋতুস্রাব রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়, কারণ রক্তের মধ্যে ব্যকটেরিয়ার সংক্রমন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে যেগুলো আয়রন, প্রোটিন এবং সুগারের মধ্যে বেশি থাকে। এ সময়ে নারীর গর্ভাশয়ে মিউকাসের পরিমান কম থাকায় ব্যকটেরিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেসময়ই প্রোফেট অপর একটি ধারণার জন্ম দেন। তিনি বলেন, নারীরা যদি বিভিন্ন প্রজাতির সাথে মিলিত হয় তবে তাদের বেশি রক্তপাত হয় কারণ তাদের যৌনরোগে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 
তবে বিজ্ঞানীরা নারীর যৌন মিলন এবং ঋতুস্রাবের সময়কার রক্তপাতের মধ্যে কোন মিল খুঁজে পান নি। প্রোফেটের এ তথ্যের সমালোচনা করে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী বিভারলি স্ট্রেসম্যান ১৯৯৬ সালে তার নিজের ধারণা দেন। স্ট্রেসম্যান বলেন, আমরা যদি নারীর ঋতুস্রাবের কারণ বুঝতে চেষ্টা করি তবে আগে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কেন প্রাণীদের গর্ভ প্রজনন বৃত্তের মধ্য দিয়ে যায় শুধুমাত্র মানুষ নয়; অন্যান্য প্রাণীরও। অন্যান্য প্রাণীদের মাতৃগোত্রীয়রাও নারীদের মত প্রজনন প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে যায়। তারা যদি গর্ভবতী না হয়, তবে তা শরীরে শোষণ করে নেয় অথবা স্রাব আকারে বের করে দেয়। একারণে তাদের শরীরের প্রচুর শক্তির অপচয় হয় এবং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কলিন ফিন ১৯৯৮ সালে একই রকম তথ্য দেন। তিনি বলেন, প্রজনন প্রক্রিয়া ঠিক রাখার জন্য রক্তস্রাব একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া। এবার দেখা যাক যেসকল প্রাণীর পিরিয়ড হয়না তাদের অবস্থা। 
মানুষ ছাড়া আর যাদের পিরিয়ড হয় তাদের মধ্যে রয়েছে বানর। আফ্রিকা এবং এশিয়াতে বসবাসরত বেশিরভাগ বানরেরই পিরিয়ড হয়। তবে গরিলার এবং টারসিয়ার্সের অল্প মাত্রায় পিরিয়ড হয়। এছাড়া হাতি এবং বাদরেরও পিরিয়ড হয়। তবে বাদরের পিরিয়ড ততটা সদৃশ্য নয়। এই পিরিয়ডই নারীর গর্ভধারণের জন্য দায়ি। স্ট্রেসম্যানের মতে, প্রতি নারীরই জীবনে কমপক্ষে ১শ বার পিরিয়ড হয়। তবে বর্তমান প্রজন্মের নারীদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৩শ থেকে ৫শ বার। স্ট্রেসম্যান বলেন মানুষের এই বিবর্তন প্রাকৃতিক। পিরিয়ড সম্পর্কিত এসকল ধারণার কোনটিই আমার প্রথম পিরিয়ডের সময়কালকে সুখানিভূত করতে পারতো না তবে বিষয়গুলো আগে জানা থাকলে আমি হয়তো এ বিষয়টিকে বিভিন্ন দিক থেকে চিন্তা করতে পারতাম।

Related Posts

Leave a Reply