November 22, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

জানেন আমরা কোন বিষয়গুলো নিয়ে জীবনে সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ করি 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

নেকেই এই ধারণা লালন করেন যে, জগতে যা কিছু ঘটে তার পেছনে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। সুতরাং কোনো বিষয়ে আক্ষেপ করে লাভ নেই।

কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যারা জীবনের কোনো না-কোনো সময়ে নিজেদের জীবনের পেছনে ফিরে তাকান। এবং কোনো কাজ যেভাবে করেছেন সেভাবে না করে ভিন্ন ভাবে করলে কী হতো তা ভাবেন।

আর সত্যি কথাটি হলো আপনি ছোটবড় যে ভুলই করে থাকেন না কেন তা কখনোই আপনি নিজের স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারবেন না। আর যেসব বড় ভুল আপনার জীবনকে স্থায়ীভাবে কঠিন করে তুলেছে সেসব আপনার ভুলে যাওয়ারতো কোনো সম্ভাবনাই নেই।

লোকে দুইভাবে তাদের আক্ষেপগুলোকে কাঠামোবদ্ধ করেন। একদিকে ফেলেন সেসব কাজকে যেগুলো তারা না করলেই ভালো করতেন বলে মনে করেন। আর অন্যদিকে রাখেন সে কাজগুলোকে যেগুলো তারা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু করতে পারেননি।

অর্থাৎ, কোনো কাজ কেন করলেন তা নিয়ে বা কোনো কাজ কেন করেননি তা নিয়ে আক্ষেপ।

তবে লোকে সাধারণত কোনো ভুল কাজ কেন করলেন তা নিয়েই বেশি ও তীব্র আক্ষেপ করেন। অবশ্য, কোনো কাজ কেন করেননি তা নিয়ে আক্ষেপ আরো বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়।

লোকে সাধারণত যেসব বিষয়ে বেশি আক্ষেপ করেন সেগুলো হলো :
১. রোমান্স
লোকে সাধারণত এমন কারো সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসায় না জড়ানোর জন্য আক্ষেপ করেন যিনি তাকে ভালোবাসতেন। এবং যা হয়তো খুব সহজেই করা যেত।
২. পরিবার- সন্তান
অনেকেই ক্যারিয়ারের সাফল্যের মতো পারিবারিক জীবনের সাফল্যকে অত গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না। তারা ভাবেন বিয়ে, পরিবার বা সন্তান জন্মদান বুঝি আপনাতেই ঘটে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি কখনোই ঘটে না। অনেকেই বয়স ৪০ এর কোঠায় পৌঁছে যাওয়ার পরও বিয়ে করেন না বা সন্তান জন্ম দেন না। ফলে একটা সময়ে দেখা যায় তার আর সন্তান জন্মদানের সক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যায়।
৩. পরিবার- বাবা-মা
অনেকেই তাদের বয়স ২০ কোঠায় পৌঁছানোর পর বাবা-মার কাছ থেকে আলাদা হয়ে একা বসবাস শুরু করেন। পরে জীবেনর শেষভাগে এ নিয়ে আক্ষেপ করেন। কারণ বেশিরভাগ মানুষের জীবনের মূলভিত্তিটা গড়ে ওঠে বিশের কোঠায় পৌঁছানোর আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকা সময়টাতে। ফলে বাবা-মাকে আরো বেশি সময় দিতে না পারার কারণে তারা আক্ষেপ করেন।
৪. শিক্ষা
অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পছন্দের বিষয়ে পড়তে না পারার কারণে আক্ষেপ করেন। অনেকে আবার উচ্চ শিক্ষার পেছনে অহেতুক দীর্ঘ সময় ব্যয় করার কারণেও আক্ষেপ করেন। তারা ভাবেন উচ্চ শিক্ষার পেছনে দীর্ঘ সময় এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় না করে যদি ছোটখাটো কোনো ব্যবসার পেছনে ওই অর্থ এবং সময়টুকু ব্যয় করা যেত তাহলেও আরো ভালো প্রতিদান আসত। উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরির পেছনে ছুটে পায়ের জুতার তলা ক্ষয় না করে এতোদিনে হয়তো একটি সম্মানজনক জীবিকা অর্জন সম্ভব হত।
৫. কর্মজীবন
অনেকেই কর্মজীবনের শুরুতে নিজেদের পছন্দকে প্রাধান্য না দিয়ে বরং নিরাপদ ক্ষেত্র খোঁজেন। কিন্তু চুড়ান্তবিচারে দেখা যায় তারা যে চাকরিকে বেশি নিরাপদ ভেবেছিলেন তাতে সত্যিকার অর্থেই নিরাপদ অবস্থানে পৌঁছাতে যে সময় লেগে যায়, তাদের ব্যক্তিগত ভালো লাগার ক্ষেত্রেও একই সময়ে হয়তো সমান নিরাপত্তা অর্জন করা সম্ভব হত।
৬. অর্থ
অনেকেই অর্থ নিয়ে খুব বেশি উদ্বেগে ভোগেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন না হয়ে বরং আরো বেশি বেশি সুযোগ গ্রহণ করুন। এক বছরের জন্য অর্থ উপার্জন থেকে অবসর নিন। জীবন ও জগতকে আরো উদঘাটন করুন। এমন নয় যে খুব বেশি দেরি হয়ে গেছে। তবে এটা সত্যি যে দিন যত গড়াবে জীবনটা আরো কঠিন হবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, কখনো এমনটা ভাববেন না যে, আপনি একটি চাকরি বা অর্থ উপার্জনের উপায় ছেড়ে দিলে আর কোনো চাকরি বা অর্থ উপার্জনের উপায় পাবেন না। আপনি অবশ্যই তা পাবেন।
৭. সন্তান লালন-পালন
অনেকে সন্তানদের অল্প বয়সে তাদের সঙ্গে আরো বেশি সময় কাটাতে না পেরে আক্ষেপ করেন। ওই সময়টাতে তারা হয়তো তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়েই দিনরাত খেটে মরেন। কিন্তু পরে একটা সময়ে গিয়ে দেখতে পান যে তারা ভুল করেছেন।
৮. মানসিক স্বাস্থ্য
লোকে সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ করেন মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য চিকিৎসা না করিয়ে। কোটি কোটি লোক স্বল্পমাত্রার তীব্র মানসিক অবসাদ নিয়েই জীবন পার করে দেন। যা তাদের বয়স যখন ২০ এর কোঠায় থাকে তখন তাদের নিজেদের অজান্তেই তাদেরকে আক্রান্ত করে। আর তাদের বয়স যখন ৩০ এর কোঠায় পৌঁছায় তখন তা তাদের ওপর আরো মারাত্মক রুপে নিয়ে জেঁকে বসে। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। এবং মনটা নেতিবাচকতায় ছেয়ে যায়। যার ফলে কর্মজীবনেও তারা বাজে পছন্দ নিতে বাধ্য হন। এর ফলে নিজের প্রতি অবজ্ঞা এবং প্রতারণার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে এমন সব নিষ্ক্রিয়তা সৃষ্টি হয় যা নিয়ে পরে আমরা অবজ্ঞা করি। নিজের প্রতি সন্দেহ পোষণের ফলে খুবই বাজে ধরননের নিষ্ক্রিয়তা এবং উদ্যমহীনতা তৈরি হয়।
অনেকেই এই দশা থেকে মুক্তি পান। কিন্তু অনেকে আবার কখনোই সুস্থ হতে পারেন না। তবে কেউ যদি তার মানসিক সমস্যাটি নিজে স্বীকার করে নেন তাহলেই একমাত্র তার পক্ষেই এ থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয়। মানসিক স্বাস্থ্য ইস্যুতে সমাজে এখনো অনেক নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত আছে। যে কারণে আমরা নিজেদের সঙ্গেও অসততা করি। পেশাদার কোনো চিকিৎসকের সাহাজ্য নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আপনি নিজে যদি স্বীকার না করেন আপনার মানসিক রোগ আছে তাহলে আপনার সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হবে না।
৯. শারীরিক স্বাস্থ্য
সুস্থ্য শরীর এমন একটি স্বাধীনতা এনে দেয় খুব কম লোকই বুঝেন। যতক্ষণ না তারা এই স্বাধীনতা পান ততক্ষণ তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন না।
১০. বন্ধুত্ব
বন্ধুদের সংস্পর্শে না থাকতে পেরেও অনেকে আক্ষেপ করেন। বিশেষ করে মৃত্যুর সময় বন্ধুদের সঙ্গে আরো বেশি সময় কাটাতে না পেরে তারা বেশি আক্ষেপ করেন।
১১. পরোপকারিতা
তাড়া থাকার কারণে অপরিচিত কাউকে সাহাজ্য করতে না পরার কারণে লোকে অনেক সময় আক্ষেপ করেন। আক্ষেপটি তারা করেন এই ভেবে যে, এতে হয়তো তারা কোনো নাটকীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারতেন।
১২. একাকিত্ব
অল্প বয়সে লোকে একটু বেশিই ধৃষ্ট হয়ে থাকেন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। লোকে হয়তো ভাবেন তারা সবকিছুই জেনে ফেলেছেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিকই এই ভেবে আতঙ্কিত থাকেন তারা হয়তো কিছুই জানেন না। ফলে লোকে অনেক সময় জীবনের কোলাহোল থেকে দূরে সরে যান এবং নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করেন। এছাড়া বয়স্ক এবং আরো বেশি অভিজ্ঞ লোকদের কাছ থেকে সাহাজ্য চাওয়া থেকে দূরে সরে আসেন।
তবে এও ঠিক যে, সব উপদেশই ভালো নয়। আর সব পৃষ্ঠপোষকের মনেই ভালো উদ্দেশ্য থাকে না। কিন্তু অন্যদের কাছে সাহাজ্য চাইতে চাইতে আপনি সঠিকভাবে প্রশ্ন করা শিখবেন এবং কোন পরামর্শটি আপনার জন্য কাজে লাগবে আর কোনটি কাজে লাগবে না তা বুঝতে পারবেন। আর এভাবে আপনি একজন সত্যিকার পৃষ্ঠপোষক পেয়ে যাবেন।
১৩. ভ্রমণ
ভ্রমণ করলে অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে। ফলে যৌবনেই যথেষ্ট পরিমাণে ভ্রমণ করতে না পারার কারণে অনেকে জীবনের পরের দিকে গিয়ে আক্ষেপ করেন।
১৪. উদ্বেগ
কর্মজীবন শুরু করার আগে লোকে প্রচুর সময় ব্যয় করেন শুধু ভবিষ্যত নিয়ে অহেতুকভাবে উদ্বিগ্ন থেকে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এনিয়ে একটি গবেষণা কর্মসুচির আয়োজন করা হয়। এতে ১২০০ বয়স্ক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। এত তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় তাদেরকে যদি জীবনের কিছু সময় ফেরত দেওয়া হয় তাহলে তারা কোনা সময়টুকু বেছেন নিবেন। উত্তরে তারা বলেন, ভবিষ্যত নিয়ে অহেতুক উদ্বেগে থেকে তারা যে প্রচর সময় অপচয় করেছেন তারা সেই সময়টুকু তার ফেরত নিতে চান।
তাদের মতে, জীবনের সীমিত ও মূল্যবান সময় নষ্ট করার সবচেয়ে বাজে উপায় হলো উদ্বেগে ভোগা। তারা বলেন, শুধু উদ্বেগ কমিয়ে আনার মাধ্যমে সুখের পথে সবচেয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপটি গ্রহণ করা সম্ভব। কারণ আমরা বেশিরভাগ সময়ই অবাস্তব কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি। এই ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি হয় মূলত, আমাদের নিজেদের বা প্রিয়জনদের সঙ্গে ঘটতে পারে এমন সম্ভাব্য বাজে কোনো ঘটনার আতঙ্ক থেকে।
ওই প্রবীণদের পরামর্শ হলো উদ্বেগে না ভুগে বরং বাস্তব সমস্যা সমাধানে বেশি মনোযোগী হওয়া এবং আরো বেশি সময় ব্যয় করা উচিৎ।
১৫. নিজ
সবসময় শুধু অন্য লোককে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। এই পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আপনি নিজে ছাড়া আপনার ভালোবাসা পাওয়ার বেশি যোগ্য লোক আর কেউ নেই। সময়মতো নিজের প্রতি মনোযোগী হতে না পেরে লোকে পরে অনেক আক্ষেপ করেন। লোকে এই ভেবে আক্ষেপ করেন, অন্যদেরকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে তার যেই সময় অপচয় করেছেন তা হয়তো নিজের উন্নতিতে ব্যবহার করতে পারতেন।
আর একটা কথা মনে রাখবেন, আপনি পাঁচটি টাকা অপচয় করলে হয়তো তা ফিরে পেতে পারেন। কিন্তু একটি মিনিট সময় চলে গেলে তা আর ফিরে পাবেন না।

Related Posts

Leave a Reply