শান্তির স্থান বালিশের নিচেই নীরব ঘাতক
কলকাতা টাইমস :
অন্ধকার ঘর, সঠিক তাপমাত্রা, আরামদায়ক বিছানা- এটা কী দারুণ ও আনন্দদায়ক ঘুমের জন্য সঠিক পরিবেশ নয়? তারপরও আপনি যদি জানতে পারেন ঘুমকাতুরে পরিবেশে বালিশের নিচে থাকা কিছু একটা আপনাকে নীরবে হত্যার পাঁয়তারা করছে- তখন কেমন বোধ করবেন আপনি? ভয় পাবেন নিশ্চয়ই। আপনি ভাবতেও পারবেন না এমন একটা জিনিসের ব্যবহার আপনাকে এই ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। ক্ষতি করতে পারে আপনার শরীর ও মানসের। কী সেটা?
নীরব ঘাতক
নিজের পছন্দের ফোন হাতেই গড়িয়ে পড়লেন বিছানায়। নিজের ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ফিড স্ক্রল করতে থাকলেন, এদিকে চোখে আপনার ঘুম। ঘুম চোখেই চলতে থাকল স্ক্রলিং। আপনি ভাবতেও পারছেন না, ঠিক কী পরিমাণ শারীরিক ক্ষতি করছেন আপনি। এ কথা নিশ্চয়ই আপনি শুনে থাকবেন, ঘুমুতে যাওয়ার আগে আলোকিত নীল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা আপনার ঘুমের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটায়। এর থেকেও বিপজ্জনক আরো একটি তথ্য জেনে নিন, ঘুমানোর আগে বালিশের নীচে বা মাথার কাছাকাছি রাখা ফোনটি আপনার আরো বড় শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এটা কেন হয়
মোবাইল ফোন থেকে নির্গত হয় মারাত্মক ক্ষতিকর রেডিয়েশন। যা আপনার মস্তিষ্কের ভীষণ ক্ষতি করতে পারে এবং কারণ হতে পারে মাথাব্যথার। এ ছাড়াও পেশিতে ব্যথা এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এর দ্বারা। ৯ শ মেগাহার্ডসের কাছাকাছি সিগন্যাল ট্রান্সমিশন আপনার শরীরতন্ত্র-ব্যবস্থায় মারাত্মক ত্রুটিও বয়ে আনতে পারে।
অন্যান্য প্রভাব
গবেষণা বলছে, এটা প্রভাব ফেলতে পারে আপনার স্বাভাবিক যৌন জীবনের ওপর। পুরুষদের ক্ষেত্রে এটা কমিয়ে দিতে পারে স্পার্ম কাউন্ট। মোবাইল ফোন থেকে বের হওয়া তীব্র নীল আলো আপনার ‘ঘুম হরমোন’-এর উৎপাদন দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। আর রাতে ঘুম না হলে তা আপনার দেহঘড়ির সঠিক চলাচল অনিয়ন্ত্রিত করবে।
‘হু’ যা বলছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ বলছে, মোবাইল ফোন ব্যবহার এবং ঘুমের সময় সেটি খুব কাছাকাছি রাখা আপনার শরীরের জন্য বয়ে আনতে পারে ক্ষতি, যা পূরণযোগ্য নয়। এর ফলে হতে পারে ক্যান্সার। শিশুদের মাথার খুলি একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির চেয়ে অনেক বেশি পাতলা। রেডিয়েশনও তাদের খুলি ভেদ করতে পারে সহজেই। তাই, শিশুদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশিই থাকে। আর আপনি যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত না হওয়ার বিষয়ে সচেতনতা অবলম্বন করতে চান, তবে অবশ্যই আপনাকে ফোনে কথা বলার সময় হেডফোন বা স্পিকার-ফোন ব্যবহার করতে হবে এবং ঘুমানোর সময় ফোনটাকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
কতটা দূরত্ব আদর্শ
ন্যূনপক্ষে তিন ফুট দূরত্বে রাখুন আপনার প্রিয় ফোনটি এবং ভালো থাকতে হলে এ ব্যাপারে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলুন। যদিও এখনও এই দূরত্বটি নিখুঁতভাবে প্রমাণিত নয়, তবুও অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ এমনই মত ব্যক্ত করেছেন। মনে রাখবেন, ফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশনের ক্ষতি সুদূরপ্রসারী।
এড়াতে চেষ্টা করুন এই ‘নেশা’গুলো
ঘুমাবার সময় ফোনটি বন্ধ রাখুন অথবা রাখুন অ্যারোপ্লেন মুড-এ। যদি আপনার জরুরি কোনো কল আসার কথা থাকে, তাহলে বেশ কয়েক ফুট দূরে ফোনটি রেখে ঘুমাতে যান। অনেকেই অ্যালার্ম হিসেবে ফোন ব্যবহার করেন, এটা করা থেকে বিরত হোন, এখনই। আজই একটা ভালো মানের ও সুন্দর অ্যালার্ম ঘড়ি কিনে আনুন। অনেকেই রাতে ঘুমাবার আগে মোবাইল ফোন বা এ ধরনের ডিভাইসগুলোতে ই-বুক পড়তে পছন্দ করেন। এ অভ্যাসটিও বদলে ফেলুন। একটি ছাপা বই পড়ুন, এটা একটা দারুণ অভ্যাস।
এভাবেই ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসুন এই মোবাইল-নির্ভরতা থেকে। রেডিয়েশন-মুক্ত তৃপ্তিদায়ক রাতঘুমে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন।