করোনা সংক্রমণ থেকেও বাঁচাবে কাঁচা নয়তো হালকা ফ্রাই তরমুজের বীজ
কলকাতা টাইমস :
আপনিও নিশ্চয় এতদিন তরমুজের বীজটা ফেলে তবেই ফলটি খেতেন। কিন্তু এমনটা করাতে শরীরে যে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে তা একাধিক গবেষণাতেই প্রমাণ হয়ে গেছে। এই যেমন সম্প্রতি প্রকাশিত এক স্টাডিতে দেখা গেছে তরমুজের বীজে প্রচুর মাত্রায় মজুত রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, ওমেগা ৩ এবং ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, কপার, পটাশিয়াম এবং আরও কত কী! এই সবকটি উপাদানই শরীরে প্রবেশ করে এমন খেল দেখায় যে নানা সরল-জটিল সব রোগই ছুমান্তার হয়ে যায়। যেমন ধরুন…
১. অস্টিওপরোসিসের মতো রোগ দূরে থাকে: একেবারেই ঠিক শুনেছেন বন্ধু! বিশেষজ্ঞদের মতে নিয়মিত অল্প করে তরমুজের বীজ খাওয়া শুরু করলে শরীরে কপার, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে হাড় এত মাত্রায় শক্তিপোক্ত হয়ে ওঠে যে অস্টিওপোরোসিস বা কোনও ধরনের বোন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
২. ব্রণর প্রকোপ কমে: এই ত্বকের রোগটির কারণে কি জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে? তাহলে বন্ধু যত শীঘ্র সম্ভব রোজের ডায়েটে তরমুজকে অন্তর্ভুক্ত করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। আসলে এই ফলটি এবং তার বীজটির অন্দরে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি উপাদান ত্বকের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি ক্ষতিকর জীবাণুদের মেরে ফেলে। ফলে ব্রণর প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
৩. আয়রনের ঘাটতি দূর হয়: একাধিক গবেষণা অনুসারে প্রতিদিন এক মুটো করে তরমুজের বীজ খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে আয়রনের ঘাটতি দূর হয়। ফলে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদান এত মাত্রায় বেড়ে যায় যে অ্যানিমিয়ার রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
৪. ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমায়: আপনার ত্বক কি বেজায় তেলতেলে? তাহলে বন্ধু আজ থেকেই তরমুজ, সেই সঙ্গে তার বীজটাও খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে একেবারে হাতেনাতে। আসলে এই ফলটির অন্দরে উপস্থিত ভিটামিন এ, স্কিন পোরের সাইজ কমিয়ে দেয়। ফলে তেলের ক্ষরণ কমতে শুরু করে। আর এমনটা হলে তেলতেলে ত্বকের সমস্যা কমতে সময় লাগে না।
৫. ক্লান্তি দূর হয় : বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে এক কাপ তরমুজের বীজ খেলে এত মাত্রায় এনার্জির ঘাটতি দূর হয় যে শরীরের সার্বিক ক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, তা হল বেশি মাত্রায় তরমুজের বীজ খেলে কিন্তু ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই ভুলেও বেশি পরিমাণে এই প্রকৃতিক উপাদানটি কিন্তু খাওয়া চলবে না।
৬. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়: তরমুজের বীজে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই খনিজটি স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি থাকলে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হতে শুরু করে। ফলে এক সময়ে গিয়ে অ্যালঝাইমারস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই এই পুষ্টিকর উপাদানটির ঘাটতি যাতে কোনও সময় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন।
৭. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে: সম্প্রতি হওয়া এর ইরানিয়ান স্টাডি অনুসারে তরমুজের বীজে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরে প্লাজমা গ্লকজের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে এতে উপস্থতি ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা এতটাই বাড়ায়ে দেয় যে ডায়াবেটিস রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
৮. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: ত্বকের অন্দরে কোলাজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করার মধ্যে দিয়ে স্কিন টোনের উন্নতিতে এই প্রকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো কম সময়ে যদি ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে চান, তাহলে নানাভাবে তরমুজের বীজকে ব্যবহার করতে পারেন। প্রসঙ্গত, ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতেও এই প্রাকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৯. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: তরমুজের বীজের অন্দরে থাকা জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়াম হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো রোগ নিমেষে কমে যায়। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু কেস স্টাডি অনুসারে শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি দেখা দিলে ডায়ারিয়ার মতো রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ারও আশঙ্কাও থাকে। তাই বিষয়টি মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন।
১০. চুলের সৌন্দর্য বাড়ে: তরমুজের বীজে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম, একদিকে যেমন চুলের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে, তেমনি চুলের গোড়াকে শক্তপোক্ত করে। ফলে হেয়ার ফলের মাত্রা তো কমেই, সেই সঙ্গে সার্বিকভাবে চুলের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায়। তাই তো বলি বন্ধু, কোনও কারণে যদি আপনার চুল পড়ার হার বেড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে নিয়মিত তরমুজের বীজ খেতে ভুলবেন না যেন!
১১. বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যা দূরে থাকে: বাবা হওয়ার কথা ভাবছেন নাকি? তাহলে আজ থেকেই তরমুজের বীজ খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় জিঙ্ক। এই খনিজটি স্পার্ম কাউন্ট বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যাই হয় না।
১২. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে: তরমুজের বীজে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাকেও হ্রাস করে। প্রসঙ্গত, কেন্টাকি স্টাডি অনুসারে তরমুজের বীজে ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও রয়েছে সিটরুলিন নামে একটি উপাদান, যা অ্যারোটিক ব্লাড প্রেসারকে কমিয়ে হার্টকে চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের পরিবারে ক্রনিক হার্টের রোগের ইতিহাস রয়েছে তারা তরমুজ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বীজটা খেতেও ভুলবেন না যেন!
১৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে: পরিমাণ মতো তরমুজের বীজ নিয়ে হালকা করে ভেজে নিয়ে যদি খেতে পারেন, তাহলে শরীরে আয়রন এবং ভিটামিন বি-এর ঘাটতে কমতে শুরু করে। ফলে কেউ যদি অ্যানিমিয়া রোগে ভুগতে থাকেন, তাহলে নিমেষে সেই রোগ সেরে যায়। কারণ আয়রন শরীরে প্রবেশ করা মাত্র লহিত রক্ত কণিকারর উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তাল্পতার প্রকোপ কমতে শুরু করে। অন্যদিকে ভিটামিন বি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আর একবার ইমিউনিটি যদি বেড়ে যায়, তাহলে শুধু সংক্রমণ নয়, আরও একাধিক রোগের আক্রমণ থেকে সহজেই রক্ষা পায় শরীর।
১৪. ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি দূর হয়: হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি রক্তচাপ কমাতেও ম্যাগনেসিয়ামের প্রয়োজন পরে। আর এই খনিজের ঘাটতি মেটাতে পারে তরমুজের বীজ। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ১০০ গ্রাম তরমুজের বীজে দিনের চাহিদার প্রায় ১৩৯ শতাংশ ম্যাগনেসিয়ামের থাকে। তাই তো এই খনিজটির চাহিদা মেটাতে তরমুজের বীজকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।