May 16, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা সফর

মানুষের উচ্চতার চেয়ে বড় মুদ্রা! দেখতে ভিড় করেন কয়েক লক্ষ পর্যটক  

[kodex_post_like_buttons]

নিউজ ডেস্কঃ 

মানুষের উচ্চতার থেকেও বড় মুদ্রা!  দেখেছেন কখনো। এই মুদ্রা  বিরল মুদ্রাটি দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে ইয়াপ দ্বীপে।  প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছয়শরও বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত মাইক্রোনেশিয়া অঞ্চল। এর পশ্চিমে ফিলিপাইন, দক্ষিণ-পশ্চিমে ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণে পাপুয়া নিউগিনি ও মেলানেশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্বে পলিনেশিয়া।

মাইক্রোনেশিয়ার অন্যতম একটি দ্বীপ ইয়াপ। প্রতি বছর কয়েক লাখ পর্যটক ইয়াপে বেড়াতে যান। অন্য যে কোনো জায়গার চেয়ে ইয়াপে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা লাভ করেন পর্যটকরা। স্বতন্ত্র সেই অভিজ্ঞতা হল, বিশাল আকৃতির ‘পাথুরে শিলা মুদ্রা’।

প্রাচীনকাল থেকে ভারি ও বড় পাথুরে মুদ্রা দিয়ে এখানে বিনিময় প্রথা চালু রয়েছে। কয়েক সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭ মিটার ব্যাসের মুদ্রাও রয়েছে। কোনো কোনো শিলা মুদ্রার উচ্চতা মানুষের সমান। মূলত এখানকার গ্রামবাসীর সম্মান ও আভিজাত্যের প্রতীক এ দৈত্যাকার মুদ্রা। পাথুরে মুদ্রাগুলো ইয়াপ দ্বীপের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের দখলে রয়েছে।

যার বাড়িতে বা যে গ্রামে বেশি পাথুরে মুদ্রা রয়েছে, ধরে নেয়া হয়- কৃষ্টি-কালচার, আভিজাত্যে তারাই উৎকৃষ্ট। এই মুদ্রার বিনিময় প্রথা চালু রাখতে প্রতিটা গ্রামেই রয়েছে নিজস্ব পাথুরে শিলার মানি ব্যাংক।

জানা যায়, কয়েকশ’ বছর আগে ইয়াপের জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন। দুর্ঘটনাবশত তারা গিয়ে ওঠেন ৪০০ কিলোমিটার দূরের দেশ পালাউতে। সেখানে তারা গোলাকৃতির চুনাপাথর দেখতে পান। তারা একটি চুনাপাথর ঘষেমেজে ইয়াপে নিয়ে আসেন।

পাথরটি দেখতে গরুর গাড়ির চাকার মতো। ইয়াপবাসীর কাছে এর নাম ‘রাই’। জেলেরা যখন চুনাপাথর নিয়ে এলেন, তখন গ্রামবাসী এটাকে ‘টাকা’ বলতে শুরু করলেন। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পালাউ থেকে গোলাকৃতির চুনাপাথর আনা শুরু করেন। আনা-নেয়ার সুবিধার জন্য এর মাঝখানে একটি গোলাকৃতির ছিদ্র করা হয়।

পাথুরে মুদ্রার দখলে নিতে কম লড়াই হয়নি এখানে। এমনকি চুনাপাথর আনতে গিয়ে বহু জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কখনো কখনো একটি নৌকার কেউ ফিরে আসতে পারতেন না। ইয়াপের প্রধানদের পৃষ্ঠপোষকতায় এগুলো আনা হতো। তখন ইয়াপের প্রধানদের মধ্যে বেশ দ্বন্দ্ব ছিল। কার থেকে কে বেশি ধনী হবেন সেই প্রতিযোগিতা ছিল। ফলে তারা প্রচুর লোক নিয়োগ করে এসব পাথর নিয়ে আসতেন। অনেক সময় এক প্রধানের পাঠানো লোকদের গুম করে ফেলতেন অন্য প্রধানের লোকেরা। ফলে পাথুরে মুদ্রা আনতে গিয়ে অনেক প্রাণহানি ঘটত।

সচরাচর কেনাকাটার জন্য তারা এই মুদ্রা ব্যবহার করতেন না। মূলত বড় কোনো লেনদেন, বিয়ের উপহার, ক্ষতিপূরণ দিতে এ মুদ্রা ব্যবহার করা হতো। আর কেনাকাটার জন্য ব্যবহার করতেন মুক্তার মুদ্রা। ১৮৯৮ সালের পর থেকে পাথুরে মুদ্রার ব্যবহার কমতে থাকে। সেসময় স্পেন-আমেরিকা যুদ্ধের পর ইয়াপে ডেভিড ডিন ও’কেফ নামে এক শাসক আসেন। তিনি পাথরের মুদ্রা তৈরির আধুনিক সরঞ্জামাদি এনে দেন।

আর পালাউ থেকে প্রচুর চুনাপাথর আনতে বড় একটি জাহাজ নিয়ে আসেন। এরপর ইয়াপের লোকজন প্রচুর পাথুরে মুদ্রা তৈরি করে। ফলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় ও মূল্য কমতে থাকে। একসময় পালাউ থেকে চুনাপাথর আনা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে এই এলাকায় মুদ্রার জায়গা দখল করে নিয়েছে মার্কিন ডলার।

Related Posts

Leave a Reply